২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

শিল্ড গার্ল : হংকং বিক্ষোভের প্রতিচ্ছবি যে নারী

- সংগৃহীত

হংকংয়ে একটি বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বা বন্দী ফেরত পাঠানোর বিলের বিরুদ্ধে চলা বিশালাকার বিক্ষোভের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছেন তিনি। গণবিক্ষোভের মুখে হংকং সরকার ওই প্রত্যর্পণ বিল স্থগিত করেছিল। কিন্তু "শিল্ড গার্ল" নামে পরিচিতি পাওয়া এই তরুণী বিবিসিকে বলেন যে বিলটির অনির্দিষ্টকালীন স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও তিনি তার লড়াই চালিয়ে যাবেন। কারণ তাদের দাবি বিলের কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বাতিল করা।

যখন অন্ধকার বাড়তে থাকে, তখন বিক্ষোভ সমাবেশে মানুষের সংখ্যা কমতে থাকে। কিন্তু একমাত্র এই তরুণী দাঙ্গা পুলিশের ঢালের সারির সামনে অটলভাবে বসে ধ্যান করতে থাকেন । এভাবেই রাতারাতি হংকং বিক্ষোভের একটি প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠেন এই নারী। যা নিয়ে আলোচনার স্রোত বয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জুড়ে।

টুইটারে একজন পর্যবেক্ষক লিখেছেন, "নিষ্ঠুরতার মুখে সাহসিকতা"। সুন্দর।" হংকংয়ের আইরিশ সাংবাদিক আইরিন ম্যাক নিকোলাস লিখেছেন, "তারুণ্যের সরলতা এবং কর্তৃপক্ষের দাঙ্গা ঢাল"।

এই তরুণীর নাম হয়ে যায় "শিল্ড গার্ল"। এমনকি চীনের ভিন্নমতাবলম্বী শীর্ষ শিল্পী বুদিউকাও- শিল্ড গার্ল দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ছবি এঁকেছেন।

মেয়েটির আসল নাম ল্যাম কা লো। ২৬ বছর বয়সী এই তরুণী নিজে থেকেই অ্যাডমিরালটি জেলায় আসেন। এই জেলাতেই হংকংয়ের সব সরকারি দফতর অবস্থিত। ল্যাম্ব কা লো সেখানে পৌঁছান মঙ্গলবার রাতে, অর্থাৎ সিভিল হিউম্যান রাইটস ফ্রন্ট আয়োজিত একটি সমাবেশের কয়েক ঘণ্টা আগে।

ওই স্থানে তার সঙ্গে ছিল শত শত বিক্ষোভকারী, কিন্তু আরও বেশি সংখ্যক পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে পুরো সমাবেশ ঘেরাও করে রাখে। পুলিশ কর্মকর্তাদের লাইনের কাছাকাছি দাঁড়ানোর সাহস কারো ছিল না। তবে পুলিশকে ভয় পাননি মিস কা লো। তবে তিনি আশঙ্কায় ছিলেন যে অন্যান্য প্রতিবাদকারীরা আহত হতে পারে। এমন এক থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে তিনি ওম মন্ত্র পড়ে ধ্যান করতে থাকেন।

এ ব্যাপারে মিস কা লো বলেন, "আমি শুধুমাত্র একটি ইতিবাচক আবেশ ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যাপারে উদ্ধত হয়ে উঠছিল। সেই মুহূর্তে, আমি শুধু চেয়েছি প্রতিবাদকারীরা যেন আমার পাশে বসেন এবং কারও প্রতি যেন তারা উদ্ধত না হন।"

তবে কা লো কখনই এই আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি হতে চাননি।

"আমি কারও মনোযোগের কেন্দ্র হতে চাই না," কা লো বলেন। "কিন্তু যদি মানুষ আমাকে পুলিশের সামনে বসতে দেখে, আমি আশা করি সেটা তাদেরকে সাহসী হতে এবং নিজেদের প্রকাশ করতে সাহায্য করবে।"

ধ্যান এবং রাগ

‌একটি বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্যেও কা লো'র এতোটা শান্ত থাকার পেছনের মূল শক্তি হল তার ধ্যানের অনুশীলন। কা লো, ব্যক্তিগতভাবে একজন ভ্রমণ পিপাসু। এর মধ্যে তিনি এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন।

চার বছর আগে নেপালে সফরে গিয়ে তিনি ধ্যানের দিকে ধাবিত হন - যখন দেশটি একটি মারাত্মক ভূমিকম্পের কারণে জর্জরিত হয়ে পড়েছিল। মিস কা লো বলছের যে তিনি স্বভাবত একজন আবেগ প্রবণ মানুষ, কিন্তু ধ্যান তাকে তার অনুভূতির প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হতে এবং মনের শান্তি অর্জনে সহায়তা করেছে।

২০১৪ সালে ৭৯ দিনের আমব্রেলা মুভমেন্টের প্রতিটা দিন তিনি রাস্তায় কাটিয়েছেন। তবে বুধবার বিকেলে হংকং পুলিশ কর্মকর্তা ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে যে নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সেটার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না।

তিনি বলেন, "আমি দেখেছি মানুষে মানুষে কতো ঘৃণা কাজ করছে। কারণ পুলিশ কিছু ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করেছিল। বুধবারের ওই সহিংতার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না কা লো ল্যাম।"

তার মতে "আমরা শুধুই মানুষ। যাদের অনুভূতি আছে।"

তিনি বলেন, প্রতিবাদ আন্দোলনে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচ্ছিন্ন করা ঠিক নয়। আমি বিশ্বাস করি যে অহিংসা হচ্ছে প্রতিবাদকারীদের লক্ষ্য অর্জনের প্রধান উপায়।"

"সহিংসতা কিছু সমাধান করে না।"

আন্দোলন অব্যাহত

হংকং-এ কয়েক দশকের মধ্যে সবচাইতে সহিংস প্রতিবাদের মুখে শনিবার বেইজিং সমর্থিত হংকং এর প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম বহিঃ-সমর্পণ আইন স্থগিত করতে বাধ্য হন। তবে কবে নাগাদ নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে, আইনটি সংস্কার করা হবে- সে বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। তবে বিক্ষোভকারীদের দাবি, আইনটি রদ না করা পর্যন্ত তারা তাদের বিক্ষোভ চালিয়ে যাবে।

ওই আইন মোতাবেক, বিচারের জন্য হংকং এর অপরাধীদের চীনের মূল ভূখণ্ডে পাঠানোর বিধান করা হয়েছিল। একে কোন সফলতা হিসাবে দেখছেন না মিস কা লো। তিনি চান এই বিল যেন প্রত্যাহার করা হয়, বুধবারের সহিংসতাকে যেন দাঙ্গা হিসাবে শ্রেণীকরণ করা না হয় না, এবং যেসব বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের যেন মুক্ত দেয়া হয়। তিনি তার সহ-প্রতিবাদকারীদের প্রতি এই বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

মিস কা লো বলেন, "আপনারা আপনাদের বন্ধুবান্ধব-পরিবারের সদস্যদের সাথে আসুন। আমাদের সঙ্গে যোগ দিন। দলে দলে আসুন। নিজেকে নিজের মতো প্রকাশ করুন। আমি ধ্যানের মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে এটিই একমাত্র উপায়। প্রত্যেকে চাইলে আরও সৃজনশীল এবং অর্থপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে পারে।" সূত্র : বিবিসি।


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল