২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অপারেশন করতে হাসপাতালে ছুরি-কাঁচি হাতে প্রধানমন্ত্রী

- ছবি : সংগৃহীত

সপ্তাহের পাঁচদিন ব্যস্ত থাকেন দেশ পরিচালনায়। ডাক্তারি পেশার প্রতি সীমাহীন ভালোবাসার টানে সপ্তাহের একটি দিন চলে যান হাসপাতালে৷হ্যাঁ, প্রতি শনিবার হাসপাতালে গিয়ে ছুরি-কাঁচি হাতে তুলে নেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং।

সপ্তাহের একটি দিন স্বাস্থ্যসেবায়
প্রধানমন্ত্রী হয়েও নিজ হাতে রোগীদের সেবা দিয়ে যাওয়ার ব্রত ত্যাগ করতে পারেননি লোটে শেরিং। আর তাই ভাগ করে নিয়েছেন সপ্তাহের দিনগুলো। পাঁচ দিন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর সামলে প্রতি শনিবার সশরীরে হাসপাতালে উপস্থিত থেকে রোগী দেখেন, নিজ হাতে করেন অস্ত্রোপচার। সপ্তাহের অবশিষ্ট দিন, অর্থাৎ রবিবার সারা দিন কাটান পরিবারের সাথে।

এখনো উপভোগ করেন ডাক্তারি
‘‘এমনিতে কেউ ফুটবল খেলে কাটান সপ্তাহান্তের অবসর, কেউবা খেলেন গল্ফ। পুরো সপ্তাহের কর্মদিবস শেষে আমিও ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আর তাই প্রতি শনিবার রোগীদের নিজ হাতে সেবা দেই। এতে আমি আনন্দ পাই, আমার শারীরিক ও মানসিক চাপ কমাই,’’ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন তিনি।

দেশ পরিচালনা আর ডাক্তারি একই রকম’
ডাক্তারি এবং প্রধানমন্ত্রীত্ব দুটোকেই এক চোখে দেখেন শেরিং। এক মনে করার একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। হাসপাতালে একজন ডাক্তার রোগীকে সারাতে ঔষধ দেন কিংবা শরীরের বিভিন্ন অংশ পরীক্ষা করে দেখেন। প্রধানমন্ত্রীর কাজও একই, কারণ, তাকে সরকারের বিভিন্ন পলিসি পরীক্ষা করে দেখতে হয়, সার্বিক অবস্থার উন্নতির চেষ্টা করতে হয়।

বাংলাদেশে পড়াশোনা
১৯৯১ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়েছেন লোটে শেরিং। এমবিবিএস কোর্স শেষ করার পর একটি প্রশিক্ষণও নেন ময়মনসিংহে। তারপর জাপান, অষ্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চশিক্ষা নেন শেরিং। শুরু হয় পথ চলা। প্রায় এক দশক মাঠপর্যায়ে ডাক্তারি পেশায় ব্যাস্ত ছিলেন তিনি।

রাজনীতির শুরু
২০১৩ সালে অনেকটা আকস্মিকভাবেই দেশটির জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। তবে নির্বাচনের হার মেনে নিয়ে আবার মনোনিবেশ করেন ডাক্তারি পেশায়। এসময় গ্রামে-গঞ্জে চিকিৎসা দিয়ে বেড়িয়েছেন মানুষকে। তারপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।

মনোযোগ দেন স্বাস্থ্যখাতে
প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশের স্বাস্থ্যখাতকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেন তিনি, নেন নানামুখী পদক্ষেপ। নাগরিকদের সুন্দর স্বাস্থ্য আর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করেন লোটে শেরিং।

আশ্বস্ত রোগীরাও
প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা পেয়ে রোগীরাও খুশি। মূত্রাশয়ের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন বুমথাপ। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে তার অস্ত্রোপচার করেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। প্রধানমন্ত্রীর এমন সেবা পেয়ে ভীষণ আনন্দিত এবং আস্বস্ত বুমথাপ।

যদি হাসপাতালে যেতে পারতাম
প্রতিদিন নিজেই গাড়ি চালিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যান লোটে শেরিং। পথিমধ্যে পড়ে হাসপাতাল। কিন্তু সপ্তাহের পাঁচদিন তো তাকে সামলাতে হয় দপ্তর। আর তাই সামলে নেন নিজের আবেগ। বললেন, ‘‘হাসপাতাল দেখে আমার মনে হয় গাড়িটি ঘুড়িয়ে যদি হাসপাতালে চলে যেতে পারতাম!’’

ডয়েচে ভেলে।


আরো সংবাদ



premium cement