২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শ্রীলঙ্কা হামলা সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য : বিস্ফোরণের আগে কী করছিল আত্মঘাতীরা!

বোমা হামলার পর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে পুরো শ্রীলঙ্কাতেই - ছবি : নয়া দিগন্ত

শ্রীলঙ্কায় রোববারের সিরিজ বোমা হামলায় হামলাকারীদের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।
পুলিশ জানায়, একটি হোটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর ঠিক আগে খাবারের লাইনে দাঁড়িয়েছিল ওই হামলাকারী। পরে তার কাছে খাবার তুলে দেয়ার সময়ই ওই বিস্ফোরণ ঘটায় সে। এতে খাবার পরিবেশনকারী ওই কর্মী সাথে সাথে মৃত্যুবরণ করেন।

চাঞ্চল্যকর ওই তথ্যে জানা যায়, কলম্বোর গ্র্যান্ড হোটেলের খাবারের লাইনে দাঁড়িয়েছিল ওই হামলাকারী। পরে ঠিক যে সময় তার পাতে খাবার তুলে দেয়ার কথা সে সময়ই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেয় সে। হোটেলে সে সময় প্রচুর মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে মুহূর্তেই সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই অনেকের প্রাণ যায়। দৌড়ে ওই স্থান থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেও আহত হন অনেকে।

গ্র্যান্ড হোটেলের ম্যানেজার জানান, লাইন ধরে খাবারের কাউন্টারের সামনে পর্যন্ত যায় হামলাকারী। এরপর কাউন্টারের কাছাকাছি জায়গায় পৌছে নিজের সাথে থাকা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় হামলাকারী। এসে সাথে সাথেই মারা যায় খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে থাকা কর্মী এবং হামলাকারী উভয়েরই।

প্রায় একই সময় শহরের আরও দু-তিনটি বড় হোটেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর আগে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে তিনটি গির্জাও। ইস্টার সানডে উপলক্ষে প্রার্থনার জন্য সে সময় প্রচুর মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই মৃতের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। কলম্বোর অন্যতম পুরনো গির্জা সেন্ট অ্যান্থনিতে বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে গির্জার বেশিরভাগ অংশই ভেঙে গেছে।

এদিকে এই ঘটনার মধ্যেই রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর প্রধান বিমান বন্দরের খুব কাছ থেকে পুলিশ পাইপ বোমা উদ্ধার করে। তবে নতুন করে ভয়াবহ কিছু ঘটার আগে সেটি নিষ্ক্রিয় করে দেয় পুলিশ।

তবে শ্রীলঙ্কার গির্জায় যে হামলা হতে পারে দিন দশেক আগেই তার ইঙ্গিত পেয়েছিল পুলিশ। এ বিষয়ে সতর্কবার্তা জারি করেছিলেন শ্রীলঙ্কার পুলিশ প্রধান। পুলিশ প্রধান পি জয়াসুন্দরা গত ১১ এপ্রিল এ সতর্কবার্তা সব পুলিশ কর্মকর্তার কাছে পাঠান। ওই সতর্কবার্তায় লেখা হয়েছিল, এনটিজে নামে একটি সংগঠন দেশের বিশিষ্ট গির্জায় হামলার চেষ্টা করছে।

 

আরো পড়ুন : শ্রীলঙ্কায় এবার মসজিদে হামলা
নয়া দিগন্ত অনলাইন, ২২ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:১৪

শ্রীলঙ্কার গির্জা এবং অভিজাত হোটেলসহ মোট আটটি স্থানে সিরিজ বোমা হামলার রেশ না কাটতেই এবার হামলার শিকার হয়েছে দেশটির মসজিদসহ মুসলমানদের বিভিন্ন স্থাপনা। শ্রীলঙ্কার পূর্বাঞ্চলে সোমবার চালানো এসব হামলায় এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে এ পর্যন্ত ৫ জন আহত হয়েছে।

এসব হামলার সত্যতা নিশ্চিত করে শ্রীলঙ্কা পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা বলেছেন, এ দিন স্থানীয় সময় ভোরে আমপারার পুত্তালুম এলাকার একটি মসজিদ এবং চারটি দোকানসহ বেশ কয়েকটি গাড়িতে সিংহলি বৌদ্ধরা হামলাটি চালায়। এ ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই এলাকায় তাৎক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।’

তিনি আরো জানান, মসজিদ ও দোকানে হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই এর সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।’

দেশটির মুসলমানদের জোট মুসলিম কাউন্সিল অব শ্রীলঙ্কা (এমসিএসএল) মসজিদে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা মসজিদসহ এই সব হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। এর আগে জোটটি ইস্টার সানডে উদযাপনের সময় গির্জাসহ বিভিন্ন স্থানে চালানো হামলায় শোক প্রকাশ করেছিল।

রোববার ইস্টার সানডের দিন স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে কলম্বোর কোচিচিকাদের সেন্ট অ্যান্থনি চার্চে প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় হামলাটি ঘটে কুতুয়াপিটায়ের সেন্ট সিবাস্তিয়ান চার্চে। আর তৃতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে নেগোম্বো শহরের বাত্তিকালোয়া চার্চে। এছাড়া কলম্বোর তিনটি পাঁচতারকা হোটেলেও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। পরে আরো দুটি স্থানে হামলা হয়। সেখানেও প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩৬ বিদেশি নাগরিকসহ প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৯০ জন। এতে আহত হয়েছেন আরো কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক। শ্রীলঙ্কা সরকার এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিরিজ বিস্ফোরণের জন্য কাউকে দায়ী করেনি। তবে এ পর্যন্ত 24 জনকে আটক করেছে সেখানকার পুলিশ।

এ দিকে এ ঘটনায় উত্তেজনা ও গুজব ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জনপ্রিয় সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। দুই দিনের জন্য সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বার্তা পাঠানোর অ্যাপস দেশটিতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যাতে করে ভুল তথ্য ও গুজব ছড়ানো রোধ করা যায়।

প্রায় দুই কোটি দশ লক্ষাধিক জনসংখ্যার দেশ শ্রীলঙ্কায় মুসলিম রয়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। তাছাড়া দেশটিতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লোকের সংখ্যা প্রায় ৭০ শতাংশ।


আরো সংবাদ



premium cement