২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইন্দোনেশিয়ার আজকের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় নিয়ামক ইসলাম

ইন্দোনেশিয়ার নির্বাচনে প্রভাব বাড়ছে ধর্মের - ছবি : সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ার এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে ‘ইসলাম ধর্ম’। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোটারদের বড় অংশ তরুণরাই এখন রক্ষণশীল ইসলামের সমর্থক। ফলে সেক্যুলারপন্থীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা যাচ্ছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়া ১৯৯৮ সালে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরুর পর ধর্ম আর রাষ্ট্রকে পৃথক হিসেবে রাখার শক্তিশালী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। কিন্তু সময়ের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন অনেকটাই বদলে গেছে।

ইন্দোনেশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলে এখন শরীয়া আইনের বাস্তবায়ন হচ্ছে। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হতে প্রায় সব পদের প্রার্থীরাই ইসলামের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততা প্রমাণের চেষ্টা চালান নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময়।

আবার কোনো প্রার্থীর ইসলামী শিক্ষার ঘাটতির বিষয়টিকেও অনেক সময় বিপক্ষ দল নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসতে চায়। এমন ঘটনা ঘটেছে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের ক্ষেত্রেও।

দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো লড়ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রবো সুবিয়ান্তোর বিপক্ষে। যিনি উইদোদোকে যথেষ্ট ‘ইসলাম ভাবাপন্ন নয়' বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি যথাযথ উচ্চারণে আরবি পড়তে পারেন না বলেও প্রচারণা চালানো হচ্ছে সুবিয়ান্তোর নির্বাচনি শিবির থেকে। তবে উইদোদোর সমর্থকরা তিনি যে ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন, সে বিষয়কে সামনে নিয়ে এসে তা সামাল দিচ্ছেন।

সেখানকার রাজনীতিতে এখন আর ধর্মের ভূমিকাকে ছোট করে দেখা উচিত হবে না বলে মনে করেন জার্মান গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ইসলামের পরিচালক সুজানে শ্র্যোটার। তিনি বলেন, কোনো ইস্যুতে ইসলামবিরোধী অবস্থান নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় সুবিধা করতে পারছে না। এমনকি কুরআন নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের কারণে জাকার্তার সাবেক গর্ভনরকেই ২১ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷

সুজানে শ্র্যোটারের মতে, ১৯৯৮ সালে গণতন্ত্রের সংস্কারের মধ্য দিয়ে ইসলামপন্থিরা জনমনে একটি জায়গা করে নেয় এবং পরবর্তীতে সংগঠিত হওয়ারও সুযোগ পায়৷ এরপরে ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থায় সৌদি আরবের রক্ষণশীল মতাদর্শের প্রভাবও তৈরি হয়৷

ইন্দোনেশিয়া বিশেষজ্ঞ ব্যার্থল্ড ডামহয়জার বলেন, অনেক তরুণ ইন্দোনেশিয়ান এখন শরীয়া আইন বাস্তবায়নকে সমর্থন দিচ্ছেন৷ এক জরিপ অনুযায়ী, ২০১৭ সালের নির্বাচনে দেশটির ভোটারদের ৮০ ভাগই ছিল ১৭ থেকে ৩৪ বছর বয়সি৷

ইন্দোনেশিয়ায় নির্বাচন আজ
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ইন্দোনেশিয়ায় সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে আজ। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ, নিম্নকক্ষসহ প্রাদেশিক পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের বেছে নিতে ১৯ কোটি ২০ লাখেরও বেশি ভোটার তাদের ভোট অধিকার প্রয়োগ করছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশটির প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর ওপর জোর দেয়া হয়েছে। তবে ভোটের প্রচারণায় অর্থনৈতিক নানা ইস্যুতে প্রার্থীদের সরব থাকতে দেখা গেলেও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি ধীরে ধীরে রাজনৈতিক ইসলামের উত্থানের পথে বা ইসলাম প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

একই দিনে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার আয়োজন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ। বহু দ্বীপের দেশটিতে নির্বাচনে প্রার্থীই রয়েছেন ২ লাখ ৪৫ হাজার। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের দু’টি পদসহ ইন্দোনেশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের ১৩৬টি আসন এবং নিম্নকক্ষের ৫৭৫টি আসনে ভোটের লড়াই হচ্ছে। একইসাথে ২ হাজার ২০৭ জন প্রাদেশিক সদস্য এবং ১৭ হাজার ৬১০ জন স্থানীয় কাউন্সিলর পদেও ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। ১৬টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ১৭ বছর বয়স হলেই ভোটার হওয়ার সুযোগ পান ইন্দোনেশিয়ার মানুষ। এবারের নির্বাচনে ৫০ লাখের মতো তরুণ ভোটার থাকায় তাদের চাওয়া-পাওয়ার প্রতি বাড়তি নজর দিয়ে প্রচারণা চালায় দলগুলো।

১৭ হাজার দ্বীপে ভোটকেন্দ্র ও ভোটারদের সুরক্ষা দিতে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার পুলিশ ও সেনাসহ নিরাপত্তা বাহিনীর ১৬ লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার পূর্বদিকে বুধবার সকাল ৭টায় শুরু হয়ে পশ্চিমাঞ্চলের এলাকাগুলোতে রাত ১টায় ভোটগ্রহণ শেষ হবে। প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইনপ্রণেতাসহ পাঁচ পদে প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে পাঁচটি ব্যালট পেপারে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা।

এদিকে সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিদেশের থাকা ইন্দোনেশীয় মিশনে আগাম ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। রাতে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে বেসরকারি ফলপ্রকাশ হলেও নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করবেন মে মাসে। তবে কে প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হয়েছেন তা বুধবারেই জানা যাবে।

প্রেসিডেন্ট পদে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোকেই এগিয়ে আছেন বিভিন্ন জনমত জরিপে। বেশির ভাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষকও মনে করেন যে, তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ী হবেন। উইদোদোর প্রথম মেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে প্রায় ৪ কোটি কৃষকের প্রকৃত আয় কমে গেছে, যারা শ্রমশক্তির এক-তৃতীয়াংশ।

২০১৪ সালে সাবেক জেনারেল প্রবো সুবিয়ান্তোকে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হন রাজনীতিতে নতুন মুখ উইদোদো। গণ-আন্দোলনের তোপে পড়ে ১৯৯৮ সালে সুহার্তো পদত্যাগ করলে দেশটিতে শক্তিশালী হয়ে ওঠা সামরিক ও রাজনীতি এলিটদের কাছ থেকে পাঁচ বছর আগে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেন তিনি। একটি ছোট্ট শহরের মেয়র হিসেবে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করা উইদোদো রাজনীতি শুরুর আগে ফার্নিচার বিক্রেতা ছিলেন। এবার ৫৭ বছর বয়সী এই নেতা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতার জন্য লড়ছেন।

তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিশেষ বাহিনীর সাবেক কমান্ডার ৬৭ বছর বয়স্ক সুবিয়ান্তো প্রেসিডেন্ট পদ লাভে কট্টর ইসলামপন্থীদের সাথে জোট গড়ে তুলেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি সামান্য ব্যবধানে উইদোদোর কাছে হেরে যান। সুবিয়ান্তো রাজনৈতিক অভিজাত পরিবারের সন্তান। তার বাবা ছিলেন একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ। তিনি প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ ও সুহার্তো উভয়ের মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।


আরো সংবাদ



premium cement