২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নেপালের বিমানবন্দরে আবার ভেঙে পড়ল বিমান : এক পাইলট ও দুই পুলিশ নিহত

বিধ্বস্ত বিমান - ছবি : সংগৃহীত

নেপালের বিমানবন্দরে আবারো বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এতে ইতোমধ্যে একজন পাইলট ও দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো চারজন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, নেপালের লুকলা এলাকায় অবস্থিত তেনজিং-হিলারি বিমানবন্দরে রোববার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিমানটি রানওয়েতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি হেলিকপ্টারের সাথে সজোরে ধাক্কা খেলে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের রাজ কুমার ছেত্রি জানান, রোববার সকালে সামিট এয়ারের বিমানটি লুকাকা থেকে কাঠমান্ডু যাওয়ার জন্য উড্ডয়নের চেষ্টা করছিল। এমন সময় বিমানটি হঠাৎ করে হড়কে গেলে পাশে থাকা মানাং এয়ারের একটি হেলিকপ্টারে আঘাত করলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ওই ঘটনায় বিমানটির চালক ঘটনাস্থলেই মারা যান। এছাড়া পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরো দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। তবে প্লেনের চার যাত্রী ও একজন ক্রু অক্ষত আছেন। প্লেনটি ছোট হওয়ায় বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।

সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানায়, এভারেস্ট অঞ্চল থেকে বের হওয়ার পথে অবস্থিত এ বিমানবন্দরটি বিশ্বের বিপজ্জনক বিমানবন্দরগুলোর অন্যতম। কারণ এর রানওয়ে খুবই ছোট। ফলে এতে উড্ডয়ন ও অবতরণ করা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায় পাইলটদের জন্য। এ বিমানবন্দরে কেবল হেলিকপ্টার ও ছোট বিমান আসা যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়ে থাকে। বিমানবন্দরটি সাধারণ ভূমি সমতল থেকে নয় হাজার ৩৩৪ ফুট বা দুই হাজার ৮৪৫ মিটার উপরে অবস্থিত

বিমান ও হেলিকপ্টার উভয়টিই নেপালের এ দুর্গম স্থানে পর্যটকদের আনা নেয়া করে থাকে।

আরো পড়ুন: ’ইউএস-বাংলার পাইলট ককপিটে অনবরত ধূমপান করছিলেন : কাঠমান্ডু পোস্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক ২৮ আগস্ট ২০১৮

নেপালে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত মার্চ মাসে দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের (বিএস২১১ ফাইট) পাইলট আবিদ সুলতান ককপিটে অনবরত ধূমপান করছিলেন। বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে নেপাল সরকারের একটি তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার দাবি করে এমন সংবাদ জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট।

ওই দুর্ঘটনায় ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের দক্ষ পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানও নিহত হয়েছিলেন। তবে নেপাল পোস্টের এমন প্রতিবেদনকে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ প্রত্যাখ্যান করে বলছে, এটি মনগড়া এবং ভিত্তিহীন।

নেপালের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক ঘণ্টার ওই ফাইটে আবিদ সুলতান ক্রমাগত ধূমপান করেছিলেন। তবে তিনি তার ধূমপানের অভ্যাস থাকার কথা বিমান সংস্থাকে জানাননি। এ থেকে তদন্তকারীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, ককপিটে থাকার সময়ে তিনি মানসিক চাপে ছিলেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালে ইউএস-বাংলায় যোগ দিয়েছিলেন আবিদ সুলতান। বাণিজ্যিক ফাইট চালানোর আগে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পাইলট ছিলেন। সাড়ে ৫ হাজার ঘণ্টা উড্ডয়নের রেকর্ড ছিল তার।

তবে তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পাইলটের মানসিক চাপে থাকার ইতিহাস রয়েছে। মানসিক মূল্যায়নের পর ১৯৯৩ সালে তাকে বিমানবাহিনীর সক্রিয় দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তবে ২০০২ সালের ৯ জানুয়ারিতে তার মানসিক পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়নের পর তাকে ফাইট চালানোর উপযোগী বলে ঘোষণা করা হয়।

পাইলট সুলতানের মেডিক্যাল রিপোর্টের কথা তুলে ধরে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজের ধূমপানের অভ্যাস নিয়ে তিনি অসত্য তথ্য দিয়েছেন। ২০১২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত নিজের দেয়া ঘোষণার মধ্যে তিনি বলেছেন, কখনোই ধূমপান করেননি। ২০১৫ সালে তিনি লিখেছেন, ধূমপান করতেন কিন্তু ২০১০ সালে ছেড়ে দিয়েছেন। এরপর সর্বশেষ ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের মেডিক্যাল মূল্যায়নে তিনি লিখেছেন, কখনো ধূমপান করেননি তিনি।

তদন্ত প্রতিবেদনের বরাতে কাঠমান্ডু পোস্ট লিখেছে, বিমানটির পাইলট আবিদ সুলতান প্রচণ্ড ব্যক্তিগত মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন। আর তার ধারাবাহিক কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিএস২১১ ফাইটটি বিধ্বস্ত হয়। এতে আরো দাবি করা হয়েছে, সুলতানকে নিয়োগের সময়ে তার মেডিক্যাল ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখেনি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

এদিকে নেপাল পোস্টে প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান সম্পর্কে যেসব মনগড়া তথ্য দেয়া হয়েছে তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। গতকাল এয়ারলাইন্সটির জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলামের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী (আইকাও কর্তৃক প্রণোদিত) যেকোনো দুর্ঘটনা পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ ধরনের অসমর্থিত মতামত প্রকাশ কোনো গণমাধ্যমের কাছেই কাম্য নয়।

আইকাও এর এনেক্স ১৩-এর নিয়ম অনুসারে নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং বিমান চলাচলবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এ দুর্ঘটনা বর্তমানে তদন্তাধীন আছে। একটি দুর্ঘটনা তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় এ ধরনের একটি প্রতিবেদন দুটি অভিপ্রায় ব্যক্ত করে।

এক অযাচিতভাবে এয়ারলাইন্স এবং ক্রুদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা এবং দুই দুর্ঘটনায় প্রকৃত কারণকে আড়ার করার চেষ্টা করা। প্রতিবেদনে প্রকাশিত কোনো তথ্যর ভিত্তি নেই। কারণ এ দুর্ঘটনা সম্পর্কে গঠিত তদন্ত কমিটি এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি কোনো তদন্ত প্রতিবেদন বা কোনো বক্তব্য প্রদান করেনি। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ‘দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট’-এর প্রতিবেদনটি দুরভিসন্ধিমূলক। তাই বাংলাদেশের গণমাধ্যম, সম্মানিত যাত্রী ও শুভাকাক্সীদের এ ধরনের মনগড়া ও ভিত্তিহীন রিপোর্টে বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের (ড্যাশ-৮ কিউ ৮০০) উড়োজাহাজটি অবতরণের মুহূর্তে বিধ্বস্ত হয়। পাইলট, কেবিন ক্রুসহ ৭১ জন আরোহী ছিলেন। তার মধ্যে পাইলট কেবিন ক্রুসহ ২৭ জন বাংলাদেশী, ২৩ জন নেপালি ও একজন চীনা যাত্রী নিহত হন। আহত হন ৯ জন বাংলাদেশী, ১০ জন নেপালি ও একজন মালদ্বীপের নাগরিক।


আরো সংবাদ



premium cement