২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পানি যেখানে স্বর্ণের চেয়ে দামি

পানির জন্য অপেক্ষা ভেনিজুয়েলার নাগরিকদের - ছবি : সংগৃহীত

কয়েকমাস ধরে ধরা অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে গত মাসেই ভেনিজুয়েলার অনেকস্থান বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে পানির ক্ষেত্রে। বিদ্যুৎবিহীন এলাকাগুলোতে পানি বলতে গেলে আসছেই না। ফলে সেখানকার মানুষজনের কাছে পানি এখন স্বর্ণের চেয়ে মূল্যবান হয়ে পড়েছে।

ওইসব এলাকার অধিবাসীরা এখন তারা আর লাইনের পানি পাচ্ছেন না। ফলে তারা নদী থেকে পানি সংগ্রহ করছেন অথবা দোকান থেকে কিনে পানি ব্যবহার করছেন। এ কারণে তারা বাধ্য হয়ে প্রতিদিন মাত্র কয়েক লিটার পানি দিয়েই পুরো পরিবারের গোসল, কাপড়-চোপড় ধোয়া, রান্না করা ইত্যাদি সারছেন।

পানির এ সংকট দরিদ্র বস্তি থেকে শুরু করে ধনী এলাকা- সব স্থানেই। এর ফলে অর্থনৈতিক সংকটে ভোগা ভেনিজুয়েলার নাগরিকরা আরেক দফা ভোগান্তিতে পড়েছে। কারণ কারাকাসের যে মার্কেটে দরিদ্র লোকেরা কেনাকাটা করে সেখানে ৫ লিটারের পানি কিনতে হচ্ছে দুই ডলারে। অথচ অনেকেরই মাসিক মজুরির পরিমাণ ছয় ডলারের নিচে।

৪৯ বছর বয়সী একজন আইনজীবী ইউদিথ কন্ট্রাস বলেন, আমরা যতভাবে সম্ভব পানি বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ গত দুই বছরে খুব সামান্য পানি পেয়েছেন তিনি।

আরেকটি পরিবার জানায়, তারা একবার পানি ব্যবহারে করে পুনরায় সেই পানি ব্যবহারে করে রান্নাঘর, গোসলখানা ও টয়লেট পরিষ্কার করেন।

এ রকম পরিস্থিতি দেশের প্রায় পুরো অঞ্চলেই। সবাই পানির জন্য খুবই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কিন্তু তাদের চিন্তার কারণ ভবিষ্যত নিয়ে। কারণ তারা জানে না, আদৌ কবে এ সমস্যার সমাধান হবে। বিশেষ কবে দেশজুড়ে সে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলছে তাতে আপাত ত পরিস্থিতি উন্নয়নের কোনো সম্ভাবনাই দেখতে পাচ্ছেন না তারা। ফলে তারা এখন পানিকে স্বর্ণের চেয়েও বেশি দামি বলে মনে করছেন।

আরো পড়ুন : উত্তপ্ত ভেনিজুয়েলা : বিভক্ত বিশ্ব
নয়া দিগন্ত অনলাইন, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯

তেলসমৃদ্ধ দেশ ভেনিজুয়েলায় রাজনৈতিক সঙ্কট ক্রমশ ঘনিভূত হচ্ছে। দেশটিতে নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো, অন্য দিকে বুধবার পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিরোধী দলীয় নেতা জুয়ান গুয়াইডো নিজেকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

৩৫ বছর বয়সী গুয়াইডোকে সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে তুরস্কসহ বেশ কিছু দেশ অবস্থান নিয়েছে প্রেসিডেন্ট মাদুরোর পক্ষে। প্রতিবেশী দেশগুলো বিভক্ত হয়ে পড়েছেদুই শিবিরে। কিছু দেশ নিরপেক্ষ  অবস্থান নিয়েছে। সেনাবাহিনী সমর্থন করছে মাদুরোকে।

গত বছর অনুষ্ঠিত দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বয়কট করেছিল বিরোধী দল। যে কারণে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে অনেকে। এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে গুয়াইডোকে স্বীকৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি ব্রাজিল, কলম্বিয়া, গুয়েতেমালা, কোস্টারিকা পেরুর মতো প্রতিবেশী দেশও তাকে সমর্থন দিয়েছে।

আর এতেই বিষয়টি নিয়ে নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে। এর জবাবে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়ে দেশটির কূটনীতিকদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন।

বেশ কয়েকদিন ধরেই রাজধানী কারাকাসে প্রবল বিক্ষোভ চলছে বিরোধী সমর্থকদের। পাল্টা বিক্ষোভ করছে মাদুরো সমর্থকরাও। এসময় সংঘর্ষে ১৩জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিকোলাস মাদুরোকে সমর্থন জানিয়েছেন। এরদোগানের মুখপাত্র ইবরাহিম কালিন টুইটারে লিখেছেন, ‘মাদুরো, ভাই আমাদের, শক্ত থাকুন। তুরস্ক আপনার পাশে আছে- এরদোগান এমন কথা টেলিফোনে বলেছেন নিকোলাস মাদুরোকে।’

বলিভিয়া ও কিউবার মতো প্রতিবেশী দেশ মাদুরোকে সমর্থন দিয়েছে। মেক্সিকো বলেছে তারা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিতে সমর্থন দেবে। এর মানে হচ্ছে তারাও মাদুরোর পক্ষেই রয়েছে। উরুগুয়েসহ কিছুদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। তারা দেশটিতে শান্তি কামনা করেছে, উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শান্ত থাকতে।

এদিকে ভেনিজুয়েলার সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট মাদুরোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদরিনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাদুরোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। বুধবার তিনি টুইটারে বলেছেন, দেশের সেনাবাহিনী এমন কাউকে স্বীকার করে না যে নিজেকে প্রেসিডেন্ট দাবি করবে কিংবা স্বার্থন্বেষী কেউ চাপিয়ে দেবে।

এর মাধ্যমে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ভুমিকাকে প্রত্যাখান করেছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনী দেশের সংবিধান ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাজ করবে। সূত্র : আল জাজিরা, বিবিসি, আনাদোলু।

 


আরো সংবাদ



premium cement