২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পালিয়ে ‘বাঁচতে’ পারলেন না, তাই আবার পালালেন

মিরা ও জিউন - ছবি : সংগ্রহ

কিম জং উনের স্বৈরশাসনের হাত থেকে মুক্তভাবে বাঁচতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ার দুই নারী; কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের দালালের সহায়তা দেশ ছাড়লেও সেই দালাল আবার তাদের সপে দেয় দুস্কৃতিকারীদের হাতে। সেখানে তাদের বন্দী করে রেখে ব্যবহার করা হতো অনলাইন পতিতাবৃত্তিতে।

উত্তর কোরিয়া থেকে পালানো পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোর একটি। সরকারের অনুমতি ব্যাতিত দেশ ছাড়া সেখানে ভয়াবহ অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে দেশটির দক্ষিণ সীমান্ত জুড়ে রয়েছে ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি ও নিরপত্তার কড়াকড়ি। সীমান্ত জুড়ে রয়েছে মাইন পোতা। তাই এই পথে পালানো কঠিন। তুলনামূলক কিছুটা সহজ উত্তর সীমান্ত দিয়ে চীনে পালিয়ে যাওয়া; কিন্তু উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা লোকদের চীন বিবেচনা করে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে এবং ধরা পড়লে তাদের ফেরত পাঠানো হয় দেশে। আর দেশে ফেরার পর তাদের জন্য অপেক্ষা করে নির্যাতন আর কারাবাস, কখনো কখনো মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।

তবুও কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দেশ ছাড়েন। তেমনিভাবেই দেশ ছেড়েছিলেন দুই নারী মিরা ও জিয়ুন। দালালের সহায়তায় তারা চীন সীমান্ত দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন; কিন্তু সেই দালালরা তাদের তুলে দেয় চীনের একটি দেহব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে। যেখানে তাদের বন্দী করে রেখে কাজে লাগানো হতে ‘সেক্সক্যাম গার্ল’ হিসেবে। অনলাইনে যৌন বিষয়ক সাইটে ভিজিটরদের সাথে সময় দিতে হতো তাদের। কখনো অনলাইনে পর্নোগ্রাফিতেও বাধ্য করা হতো।

তাই আবারো পালানোর সিদ্ধান্ত নেন দুজন। চীনের ইয়ানজি শহরের একটি বাড়ির চতুর্থ তলায় রাখা হয়েছিল তাদের। সেখান থেকে বুদ্ধি আর সাহসের জোড়ে পালিয়েছেন তারা। অনেকগুলো বিছানার চাদর একটি সাথে আরেকটি বেধে দড়িতে রূপান্তর করে সেটির মাধ্যমে চার তলা থেকে নিচে নেমেছেন তারা। তারপর দেখা দিল আরেক বিপদ। চীন সীমান্ত তো অনেক দূরে!

মিরা ও জিয়ুন যথাক্রমে গত ৫ ও ৮ বছর আগে উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়েছিলেন। তারপর এতদিন তারা ছিলেন ওই দেহব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বন্দীখানায়। অবশেষে সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হন।

মিরা যখন দেশ ছেড়েছিলেন তখন তার বয়স ছিলো ২২ বছর। পালানোর বিষয়ে বলেন, আমাদের দেশে গোপনে চীনা সিনেমার ডিভিডি পাওয়া যায়। সেসব দেখেই চীনে আসার আগ্রহ হয়েছে। চেয়েছিলেন এখানেই কোন চীনাকে বিয়ে করে স্থায়ী হব।

মিরার বাবা ছিলেন সাবেক সৈনিক ও কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। পিতার কড়া অনুশাসনে থাকতে হতো তাকে। তার পিতার পরিচয়ের কারণে প্রথমে দালালরা তাকে দেশ ছাড়তে সহযোগিতা করতে রাজি হয়নি। চারবছর চেষ্টার পর মিরা তাদের রাজি করায়। পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় দালালরা তাকে বলে চীনে গিয়ে কাজ করে টাকা শোধ করতে হবে। মিরা ভেবেছিল রেস্ট্রুরেন্টে কাজ করতে হবে তাকে। কিন্তু এই পরিণত অপেক্ষা করছে তা দুঃস্বপ্নেও ছিল না তার।

২০১০ সালে জিউন যখন দেশ ছাড়েন, তার বয়স ছিলো ১৬ বছর। দারিদ্রতার কারণে সে পালিয়ে চীনে আসতে চেয়েছিল; কিন্তু একই পরিণত অপেক্ষা করছিল তার জন্যও। যৌন ব্যবসার ঔ বাড়িটিতে তার পরিচয় হয় মিরার সাথে। তাদের আগেও কয়েকজন সেখান থেকে পালিয়েছে। তাই দুজনে মিলে দ্বিতীয়বার পালানোর সিদ্ধান্ত নেন।

অনলাইনেই তাদের পরিচয় হয় এমন একজনের সাথে যিনি তাদের পালানোর সুযোগ করে দেন। ভিজিটর হিসেবে লোকটি আসতেন সাইটে। মিরা ও জিউন ক্লায়েন্ট হিসেবে তার সাথে কথা বলার ফাঁকে গোপনে পালানোর চুক্তি করে। লোকটি এই ধরনের মানবপাচারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। তার আশ্বাসেই চারতলা থেকে নামে তারা।

সেখান থেকে পালিয়ে ১২ দিন পথ চলার পর চীন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারা প্রবেশ করে তৃতীয় আরেকটি দেশে। বিবিসি নিরাপত্তাজনিত কারণে সেই দেশটির নাম প্রকাশ করেনি। এরপর নানা বাধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে লোকটি তাদের সেই দেশের দক্ষিণ কোরীয় দূতাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাসের অনুমতি চাইবে মিরা ও জিউন। উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা লোকদের আশ্রয় ও নাগরিকত্ব দেয় দক্ষিণ কোরিয়া। তারা এখন স্বপ্ন দেখছে দক্ষিণ  কোরিয়ায় স্থায়ী হওয়ার।


আরো সংবাদ



premium cement