২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আগামী ৫ বছরে ইসলামের ‘চাইনিজ ভার্সন’ আনবে চীন

- ছবি : সংগৃহীত

ইসলামকে চীনের সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলতে নতুন আইন করতে যাচ্ছে দেশটির প্রশাসন। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ইসলাম ধর্মের ‘চাইনিজ ভার্সন' বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে।

শুক্রবার চীনের আট প্রদেশের ইসলামিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর নতুন আইনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়। চীনের ইংরেজি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, বৈঠকে দুই পক্ষই ইসলামের নীতিকে চীনা রীতিনীতি অনুযায়ী পরিবর্তন, পরিবর্ধনে সম্মত হয়েছে।

গত সপ্তাহে চীনের তিন প্রদেশে নিবন্ধন ছাড়া মসজিদে তল্লাশি চালিয়ে ৪০ জনকে গ্রেপ্তারের পরপর ইসলাম ধর্মের চীনা রূপের ঘোষণা এলো।

চীন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ওকলোহামা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডেভিড স্ট্রোপ বলেন, চীনের এই ধরনের সিদ্ধান্তের পেছনে বড় কারণ ইসলামিক দলগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। এছাড়া চীন কখনোই অধিক বিদেশি বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ধর্ম প্রসার হতে দেবে না। এক কথায় বলতে গেলে ইসলাম ধর্মের হাত ধরে যে আরব সংস্কৃতির প্রসার ও আরব ঘরানার মসজিদ গড়ে উঠছে চীনে, সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করাই চীনা প্রশাসনের মূল লক্ষ্য। এর মধ্য দিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চায় চীন।

গত কয়েক বছরে চীনে ইসলামি সন্ত্রাসবাদ বেড়ে গেছে। কট্টরপন্থি উইগুর মুসলমানদের হামলায় গত কয়েক বছরে মারা গেছে কয়েকশ’ মানুষ। এ কারণেই উইগুর ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষকে আটক করে তাদের মতাদর্শ পরিবর্তনের জন্য বন্দিশিবির খোলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রস্টবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা অধ‌্যাপক হাইয়ুন মা বলেন, ‘‘ধর্মীয় আচারে পরিবর্তনের সিদ্ধান্তকে চীনাদের অতি জাতীয়তাবাদের লক্ষণ বলেই মনে হয়। এখানে কয়েকটি বিষয়ে নজর দেওয়া যায়, এর মধ্যে নাস্তিকতার অনুসারী প্রশাসক দল একটি ধর্মকে পরিমার্জন করছে, এটি অযৌক্তিক।''

তিনি আরো বলেন, ‘‘চীনারা মনে করে, আরব সংস্কৃতি মানেই ভয়ানক কিছু। তাই চীনা মুসলমানদের জীবন থেকে তাবৎ আরব আচার মুছে ফেলাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। এটিকে চীনা জাতীয়তাবাদের চরম পর্যায় বলা যায়, যার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চায় চীন।''

তিনি আরো উল্লেখ করেন, ধর্ম পরিমার্জনের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে চীনা মুসলমানরা বিশ্ব মুসলিম ঐক্য থেকে আলাদা হয়ে একঘরে হয়ে পড়বে। এটাই চীনা প্রশাসনের মূল চাওয়া বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে দেশটির ১০ লাখেরও বেশি মুসলিমকে বিভিন্ন অস্থায়ী ক্যাম্পে আটক রেখে ধর্ম পালনে বাধা এবং জোর করে কমিউনিস্ট মতাদর্শে আস্থাশীল করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও ধারণা জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার। ইতোমধ্যে চীনের বিভিন্ন মসজিদ থেকে গম্বুজ ও চাঁদ-তারার প্রতিকৃতি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে মাদ্রাসার পাশাপাশি আরবি ভাষা শেখানোও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এদিকে চীনা প্রশাসন দাবি করছে, দেশে মুসলমান বাড়ছে। এ অবস্থায় দেশের একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে মুসলিম দেশগুলোর চলমান সন্ত্রাসবাদ ও উগ্র ধর্মান্ধতা থেকে দূরে রাখতেই পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এটিকে চীনা জাতীয়তাবাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সম্মানজনক সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছেন তারা।


আরো সংবাদ



premium cement