২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নাহিদই আবার শিক্ষামন্ত্রী!

নুরুল ইসলাম নাহিদ - সংগৃহীত

পিছিয়ে পড়া মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন হয়েছে বিগত বছরগুলোতে। মাদরাসার উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় এনে বিশ্বমানের শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দেশে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিলেন মাদরাসা শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও ইসলামী চিন্তাবিদরাও। মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ সংশ্লিষ্টরা বিগত ৮০ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন এর জন্য। মাদরাসা শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে পৃথক মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ শিক্ষায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। সাধারণ বিষয়ের মতো তথ্য ও প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান বিষয় চালু করা হয়েছে। 

ইসলামী ও আরবি শিক্ষার বৃহৎ অংশজুড়ে রয়েছে কওমি মাদরাসাগুলো। কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ পাঠ দাওরায়ে হাদিসকে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। যুগ যুগ ধরে কওমি শিক্ষা ছিল উপেক্ষিত ও অবহেলিত। সম্প্রতি সরকার এ শিক্ষার জাতীয় স্বীকৃতিস্বরূপ মাস্টার্স সমমান করেছে দাওরায়ে হাদিসকে। এর ফলে তরুণ সমাজের ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মূল ধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। 
উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে জনগোষ্ঠীকে প্রযুক্তিনির্ভর কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার পথে এগোচ্ছে সরকার। কারিগরি শিক্ষা জনপ্রিয় করতে ইতোমধ্যে নানা পরিকল্পনা-পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার দ্রুত উন্নয়নের বড় কারণ কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন। সিঙ্গাপুরে এ শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশ ও মালয়েশিয়ায় ৪০ শতাংশ। যুক্তরাজ্য, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইন্দোনেশিয়ায় কারিগরি শিক্ষার হার ১৭ থেকে ৫৮ শতাংশ। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিতের হার ছিল ২ শতাংশ। গত ১০ বছরে কারিগরি শিক্ষায় ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। এ খাতে অবকাঠামোর সঙ্কট এখন আর নেই। ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার হার ২০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের প্রকল্প শেষের পথে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে ভর্তির হারও বেড়েছে বিগত বছরগুলোতে। কারিগরি জ্ঞানে সমৃদ্ধ দেশগুলোতে শিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণের সুযোগ দিয়ে বিদেশে প্রশিক্ষণে পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও বিদেশে যাচ্ছে। এসব সম্ভব হয়েছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের সদিচ্ছা, সঠিক তথ্য-বিশ্লেষণ করে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ, দক্ষতা, একনিষ্ঠতার কারণে।

সরকারের গণমুখী কার্যক্রমের ফলে বিভিন্ন খাতে অভূতপূর্ব সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনে এখন সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ। স্কুলে ভর্তির হার শতভাগ, ছাত্রছাত্রীর সমতা, নারী শিক্ষায় অগ্রগতি, ঝরে পড়ার হার কমে যাওয়াসহ শিক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোল মডেল এখন বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক, ইউনেস্কো, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামসহ আন্তর্জাতিক দাতা ও গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতিকে অন্যদের জন্য উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।

তথ্য ও প্রযুক্তিতে পারদর্শী তরুণ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে বাধ্যতামূলকভাবে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়কে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কয়েক বছর আগেও গ্রামের শিক্ষার্থীরা ল্যাপটপ বা কম্পিউটার সম্পর্কে জানত না। এখন প্রায় প্রতিটি স্কুল ও মাদরাসায় এমনকি কওমি মাদরাসাগুলোতে শিক্ষকেরা ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দেশের ২৫ হাজার ৩০০টি স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া উপকরণ বিতরণ শুরু হয়েছে। ‘তথ্যপ্রযুক্তি’ নতুন বিষয় হিসেবে মাধ্যমিকপর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

সাধারণ শিক্ষাসহ কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সব শিক্ষার্থীকে ২০১০ থেকে ২০১৯ এই ১০ বছরে ২৯৬ কোটি ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৭২টি বই বিতরণ করেছে সরকার। এ বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর হাতে এবার ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২ কপি বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি এলাকার জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার ছাপ। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নেতৃত্বে টানা ১০ বছর বই উৎসবের মাধ্যমে সরকারের দেয়া বিনামূল্যের বই প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। সরকারের যে কয়টি যুগান্তরকারী সিদ্ধান্ত এবং কাজ গত দশ বছরে সম্পন্ন হয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কার্যক্রম বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, যার সুফল দেশের প্রতিটি পরিবার ভোগ করেছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এরই মধ্যে শপথ নিয়েছেন। আগামী সোমবার গঠিত হবে সরকারের নতুন মন্ত্রিপরিষদ। বিগত বছরগুলোতে মন্ত্রী-মন্ত্রণালয়ের দক্ষতা-যোগ্যতার স্বাক্ষর যারা সাফল্যের সাথে রাখতে সক্ষম হয়েছেন তারাই নতুন মন্ত্রিসভায় যোগ্য ও অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারের ইমেজ দেশের শিক্ষার হালচালের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নেতৃত্বে গত এক দশকে শিক্ষাক্ষেত্রে কিছু অর্জন বিশ্বের বহু দেশের কাছে অনুকরণীয়।

শিক্ষায় সরকারের অন্যতম সাফল্য জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন করা। এটি বাস্তবায়ন কাজ এখন চলমান। এখন শিক্ষাব্যবস্থায় শৃঙ্খলা অনেকটাই ফিরে এসেছে। ১ জানুয়ারি ক্লাস শুরু হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে পাবলিক পরীক্ষাগুলো হচ্ছে। সময়মতোই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হচ্ছে। ফলে ক্লাসরুমে বাড়ছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, ঝরে পড়ার হার কমেছে। অভিভাবকেরাও এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। এটা শুধু ধনী বা শিক্ষিত অভিভাবকেরাই নন, গ্রামের অশিক্ষিত কিংবা শহরের নিম্ন আয়ের অভিভাবক সবাই তাদের সন্তানদের নিয়ে ভাবছেন। শিক্ষার আলোতে প্রবেশ করাতে সবাই সক্রিয় ও সচেতন। রিকশা ও সিএনজি চালকের সন্তানেরাও এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু নয়, মেডিক্যাল ও বুয়েটে পড়ছেন। 

শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কাজ অনলাইনে ঘরে বসেই সম্ভব হচ্ছে। ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষা ফি, পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে হয়ে যাচ্ছে। এতে করে জনগণের আর্থিক অপচয় ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা রোধ হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সর্বোচ্চ।

উচ্চশিক্ষা প্রসারে প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দেশে ৪৪টি সরকারি ও শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সবার জন্য সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে একসাথে ৩০ হাজার প্রাথমিক স্কুল সরকারীকরণ করা হয়েছে। মানসম্মত মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিতে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ সরকারীকরণ করেছে সরকার। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বর্তমান বেতন স্কেলে বেতন প্রদান ছাড়াও বৈশাখী ভাতা ও ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে নানা অর্জনের দিকটি বিবেচনায় নিয়ে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আবারো পেতে পারেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement