২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিয়ানমার : যেখানে রত্নের সাথে লেগে থাকে রক্ত

মিয়ানমার : যেখানে রত্নের সাথে লেগে থাকে রক্ত - ছবি : সংগৃহীত

এক বছরের কিছু বেশি সময় আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে যে বর্বর অভিযান চালিয়েছিল, যেটাকে জাতিসংঘ গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছে, ওই অভিযানে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেলে পালাতে বাধ্য হয়। ট্রাম্প্র প্রশাসন গত আগস্টে কয়েকজন জেনারেল ও তাদের ইউনিটের বিরুদ্ধে সীমিত মাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু এর বাইরে আর কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি। মানবাধিকার কর্মীরা এখন বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালাচ্ছেন যাতে রত্ন ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের রত্ন কেনা বন্ধ করেন, কারণ মিয়ানমারে এই ব্যবসা মূলত সামরিক বাহিনীই নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্রচারণার লক্ষ্য হলো: মানুষ যাতে তথাকথিত এই ‘গণহত্যা রত্ন’কে আগের দিনের রক্ত হীরকের (ব্লাড ডায়মন্ড) মতো প্রত্যাখ্যান করে, যুদ্ধবাজ শক্তিগুলো আফ্রিকা থেকে যেগুলো আহরণ করতো।

নভেম্বর থেকে এই প্রচারণা শুরু হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা পিকেটিং করছেন। লিফলেট বিতরণ করছেন এবং ব্যাংকক, বোস্টন, কুয়ালা লামপুর, লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, সান ফ্রান্সিসকো, ওয়াশিংটন এবং অন্যান্য শহরের বিলাসবহুল জুয়েলারির দোকানের সামনে মানুষের সাক্ষর সংগ্রহ করছেন। আন্তর্জাতিক এই প্রচারণার নির্বাহী পরিচালক সাইমন বিলেনিজ বলেন, “এই প্রচারণার উদ্দেশ্য হলো মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্যে যেটা করেছে, সেটার পরিণতি কি হতে পারে, তার একটা ধারণা দেয়া তাদের”। ‘গণহত্যা রত্ন’ শব্দটাও তারই দেয়া।

খুচরা দোকালগুলোকে কেন্দ্র করে গত ডিসেম্বরে এই প্রচারণা শুরু হয়। ফিনান্সিয়ার রিশমন্ট এসএ’এ কার্টিয়ার জুয়েলারি ইউনিটে আবেদনপত্রে সাক্ষর সংগ্রহ শুরু হয় এবং ১৫০,০০০ মানুষ সেখানে সাক্ষর করে। এর বাইরে বড় বড় জুয়েলারি খুচরা দোকানগুলোতেই চিঠি দেয়া হয় যাতে তারা কোন দেশ থেকে রত্ন কিনছে, সে ব্যাপারে সচেতন হয় এবং মিয়ানমার থেকে কেনা বন্ধ করে। প্রতিষ্ঠানটি নিশ্চিত করেছে যে, তারা মিয়ানমার থেকে কোন রত্ন না কেনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।

বুলগারি নামের আরেকটি জুয়েলারি কোম্পানির সামনে আরেকটি আবেদন করা হয়েছিল। সেখানে ৮০,০০০ সাক্ষর পড়েছিল, কিন্তু আবেদনে কাজ হয়নি। কোম্পানিটি জানিয়েছে, তারা মিয়ানমারের কাছ থেকে কোন রত্ন কেনে না, আন্তর্জাতিক বনিকদের কাছ থেকে কিনে। কিন্তু কার্যত মিয়ানমারে রত্নগুলো থাইল্যান্ডে নিয়ে গিয়ে সেখানেই সেগুলো কেটে, পলিশ করে আন্তর্জাতিক বণিকদের কাছে বিক্রি করা হয়। পশ্চিমের কোন কোম্পানিই মিয়ানমারের কাছ থেকে সরাসরি রত্ন কিনে না।

লেভি স্ট্রাউস, মেসি, এডি বাউয়ার, লিজ ক্লেয়ারবোর্ন, ওশকোশ বিগোষ, এবং জে ক্রু গ্রুপের কাছে যে কৌশল নিয়ে গিয়েছিল এই প্রতিবাদকারীরা, সেই কৌশল নিয়েই তারা অন্যান্যদের কাছে যাচ্ছে, যাতে তারা মিয়ানমার থেকে রত্ন না কেনে। বিলেনিস বললেন, “প্রথম যখন লেভি স্ট্রাউস আমাদের চেষ্টায় সাড়া দিয়েছিল এবং মিয়ানমারের রত্ন না কেনার কথা জানিয়েছিল, তখন অনেকেই বলেছিল, এই সামান্য সিদ্ধান্তে কিছু হবে না। কিন্ত শুরুটা এভাবে ছোট দিয়েই হয়। তারপর সেটা তুষার বলের মতো গড়াতে থাকে”।


আরো সংবাদ



premium cement