২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জিনজিয়াংয়ে মুসলমানদের নিয়ে যা করছে চীন

জিনজিয়াংয়ে মুসলমানদের নিয়ে যা করছে চীন - ছবি : সংগৃহীত

চীনের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলের প্রদেশ জিনজিয়াংয়ের মুসলমানদের যে চীনা সংস্কৃতি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, জাতিগত সংহতি ও ধর্মীয় সম্প্রীতির বিস্তার ঘটানোর জন্য তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। 

গত সপ্তাহে মুসলিম প্রধান জিনজিয়াং অঞ্চল পরিদর্শনে গিয়ে এ কথা বলেন জাতিগত ও ধর্মীয়বিষয় তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ‘ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্ট’-এর প্রধান ইউ কোয়ান। তিনি বলেন, ধর্মীয় কার্যকলাপের ওপর দলের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে হবে। তিনি অরো বলেন, ধর্মীয় উগ্রপন্থার অনুপ্রবেশ অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে। 

তারা এর নাম দিয়েছে চীনাকরণ কর্মসূচি। এর অর্থ- নন-চাইনিজ জনগোষ্ঠীকে চীনের; বিশেষ করে জাতিগত হান সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সংস্কৃতির সাথে একীভূত হতে বাধ্য করা, তাদের পোশাক, ধর্ম, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও ভাষায় একীভূত করা। 

সম্প্রতি এ মর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, জিনজিয়াংয়ের ১০ লাখ মুসলমানকে বড় বড় শিবিরে জোরপূর্বক আটকে রেখেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। এই শিবিরগুলোর বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে চলছে দেশটি। জাতিসঙ্ঘের বর্ণবাদ নির্মূল কমিটির সদস্য গে ম্যাকডোগাল বলেন, আটক ১০ লাখের বাইরে আরো দুই লাখ উইঘুরকে ‘রাজনৈতিক প্রশিক্ষণদানের’ নামে বিশেষ শিবিরে আটক রেখেছে চীন সরকার।

অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে বেইজিং। তবে এই সপ্তাহে জিনজিয়াংয়ের গোপন বন্দিশিবিরগুলোকে আইনি বৈধতা দেয়া হয়েছে। চরমপন্থার নির্মূলের নামে এসব ক্যাম্পে আইনের অপব্যবহার, নজরদারি ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চীন প্রশাসনের বিরুদ্ধে জিনজিয়াংয়ের উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর চরম নির্যাতনের অভিযোগ করেছে জাতিসঙ্ঘ। যুক্তরাষ্ট্রও জাতিগত সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে সমালোচনামুখর হয়েছে। বন্দিশিবির বন্ধ করার জন্য চীনকে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ।

চীনা বন্দিশিবিরে আটক ১০ লাখ উইঘুর মুসলিম 
আলজাজিরা ও বিবিসি

চীন সরকার দেশটির ১০ লাখের বেশি উইঘুর মুসলমানকে তথাকথিত ‘কাউন্টার-এক্সটেরিমিজম সেন্টার’ বা চরমপন্থাবিরোধী শিবিরে বন্দী করে রেখেছে। এদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ নেই, বরং ধর্মীয় কারণে এবং চীনের কমিউনিস্ট সরকারের প্রতি জোরপূর্বক আনুগত্য আদায়ের জন্য তাদেরকে বন্দী করা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে কমিশনে এমন রিপোর্ট তুলে ধরেছে।

জাতিসঙ্ঘের ‘এলিমিনেশন অব র্যাসিয়াল ডিসক্রিমিনেশন’ কমিটির সদস্য গে ম্যাকডোগাল শুক্রবার জেনেভায় এই বিশ্ব সংস্থার চীনবিষয়ক দুই দিনব্যাপী বৈঠকের প্রথম দিনে এ তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চীন সরকার উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলকে ‘একটি বিশাল বন্দিশিবিরে’ পরিণত করেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। চীনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। বেইজিং অবশ্য অতীতে এ ধরনের বন্দিশিবিরের অস্তিত্ব থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

চীনের জাতিগত উইঘুর মুসলমানদের বেশির ভাগ সেদেশের জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাস করেন। প্রদেশের শতকরা প্রায় ৪৫ ভাগ জনগোষ্ঠী উইঘুর সম্প্রদায়ের। কয়েক মাস ধরে এ খবর ছড়িয়ে পড়েছিল যে, জিনজিয়াংয়ের মুসলিম সংখ্যালঘুদের ব্যাপক হারে আটক করা হচ্ছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো জাতিসঙ্ঘের এই কমিটির কাছে নানা তথ্যচিত্র তুলে ধরে দাবি করেছে, চীনা মুসলমানদেরকে বন্দিশিবিরে আটকে রেখে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

উইঘুর মুসলমানদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস’ বলেছে, বন্দিদেরকে কোনো অভিযোগ গঠন ছাড়াই আটকে রাখা হচ্ছে এবং সেখানে তাদেরকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সেøাগান দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। বন্দিদেরকে ঠিকমতো খেতে দেয়া হয় না এবং ব্যাপকভাবে নির্যাতন করা হয়।

গত এপ্রিলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা লরা স্টোন দাবি করেছিলেন, চীন সরকার সেদেশের উইঘুর সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষকে আটকে রেখেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং বলেন, যে কেউ জিনজিয়াং প্রদেশ সফরে এসে দেখতে পারেন, এখানকার জনগণ শান্তিতে বসবাস করছে এবং সন্তুষ্টচিত্তে কর্মজীবন উপভোগ করছে। তারা উন্নত জীবনযাপন করছে বলেও তিনি দাবি করেন।

উল্লেখ্য, উইঘুর মুসলিমদের বিষয়ে এমন সময় এ তথ্য প্রকাশ করা হলো যখন দেশটির অন্যত্র মসজিদ ভাঙার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় আন্দোলন করছেন মুসলমানেরা। উত্তর-পশ্চিমের নিয়াংজিয়া অঞ্চলে নতুন করে নির্মিত ওয়েইঝু গ্রান্ড মসজিদটি গুঁড়িয়ে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে গত শুক্রবার রাস্তায় নামেন শত শত মানুষ। কর্তৃপক্ষ বলছে, ভবন নির্মাণের যথাযথ নিয়ম না মেনেই নতুন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, চীনে এমনিতেই ধর্মীয় কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তার ওপর এখন মুসলমানদের বিরুদ্ধে সরকারের বৈরিতা আরো বাড়ছে।


আরো সংবাদ



premium cement