২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বৈষম্যের শিকার মিয়ানমারের হিজাব পরিহিতা এই তরুণী

উইন লে ফাইয়ু সিন। ছবি - সংগৃহীত

মিয়ানমারের এই তরুণীর নাম উইন লে ফাইয়ু সিন, বয়স ১৯।  রূপচর্চার বিষয়াদি নিয়ে তিনি ব্লগিং করেন। হিজাব পরা এই ব্লগার প্রায়ই সমালোচনা ও বৈষম্যের শিকার হন। 

একবার এক বৌদ্ধ নারী যখন জানতে পারেন সিন একজন মুসলিম, তখন তিনি তাঁর (সিন) রূপচর্চার ক্লাস থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। 

পাঁচ কোটি মানুষের দেশ মিয়ানমারে মুসলমান মাত্র পাঁচ শতাংশ। অনেকদিন ধরে তাঁরা সেখানে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। নতুন মসজিদ নির্মাণের অনুমতি পাচ্ছেন না। বৌদ্ধ বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে বাসা ভাড়া পেতেও তাঁদের সমস্যা হয়। তেমনি এক দেশে ব্লগার হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন হিজার পরা তরুণী উইন লে ফাইয়ু সিন।

রূপচর্চার বিষয়ে ভিডিও ব্লগিং করেন সিন। রূপচর্চার নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন তিনি। ব্লগার হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রও খুলেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ জন সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

যেভাবে শুরু
সিন জানান, হাইস্কুলে পড়াশোনা শেষ করার পর তাঁর ছেলেবন্ধু তাঁকে একদিন মেক-আপের কিছু পণ্য উপহার দিয়েছিল। কিন্তু সেগুলো ব্যবহারের নিয়ম তখনো তিনি জানতেন না। ফলে গুগলের সহায়তা নিয়ে সেসব বিষয়ে ধারণা নিয়েছিলেন তিনি। পরে অন্যদের সাহায্য করতে মেক-আপ বিষয়ে পরামর্শমূলক একটি ভিডিও তৈরি করে ফেসবুকে আপলোড করেছিলেন। সেই থেকে শুরু।

সিনের ফেসবুক পাতায়ও অনুসারীর সংখ্য প্রায় ছয় হাজার। এবং তা দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি রূপচর্চা বিষয়ক পণ্যের এক অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন তিনি। রূপচর্চা নিয়ে ব্লগ করা অন্য ব্লগাররাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ঐ অনুষ্ঠানে হিজাব পরা ও সারা শরীর ঢাকা সিনের পোশাক আলোচিত হয়েছিল।

হিজাব পরা নিয়ে সিনের কোনো সংকোচ নেই। তিনি বলেন, আমাদের আল্লাহ আমার জন্য অনেক রাস্তা খুলে দিয়েছেন। হিজাব আমার কাছে চাবির মতো। এটা ব্যবহার করে আমি যেখানে ইচ্ছা যেতে পারি, যা ইচ্ছা করতে পারি।

ফেসবুকে অনেক সমালোচনামূলক মন্তব্য পান তিনি। কারণ, রক্ষণশীল মুসলমানদের কাছে মেক-আপ বিষয়টি ট্যাবু হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু সিন এসব সমালোচনার জবাব দেন না। কারণ, এটা তাঁর কাছে শুধু সময়ের অপচয় মনে হয়। ‘আমার অনেক কাজ, বলেন তিনি।

 

 

আরো দেখুন : রোহিঙ্গা ইস্যু আরো ভালোভাবে সামলানো যেত : সু চি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা ইস্যু আরো ভালোভাবে সামলানো যেত বলে স্বীকার করেছেন মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি।

বৃহস্পতিবার ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে আসিয়ানের ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামে এমন মন্তব্য করেন তিনি। রোহিঙ্গা সঙ্কটের পর বিষয়টি নিয়ে প্রথমবারের মতো ইতিবাচক কথা বললেন এই নেত্রী।


গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ৩০টি পুলিশ চেকপোস্ট এবং সেনাঘাঁটিতে হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি। এর পরেই রাখাইনের গ্রামগুলোতে অভিযানের নামে অত্যাচার-নির্যাতন চালায় মিয়ানমার সেনারা। রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা, নারীদের ধর্ষণ এবং রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম নিজেদের বাড়ি-ঘর থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

সু চি বলেন, কিছু উপায় অবশ্যই ছিল যার মাধ্যমে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে সামলানো যেত। সু চি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি দীর্ঘ মেয়াদী নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য আমাদের সবাইকে সমানভাবে দেখতে হবে। আমরা কোনো একটি নির্দিষ্ট পক্ষকে আইনের শাসনে সুরক্ষা দেওয়ার কথা ভাবতে পারি না।

তিনি তার বক্তব্যে রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের প্রসঙ্গও তুলেছেন। গত সপ্তাহে ওই দুই সাংবাদিকের সাত বছর কারাদণ্ড ঘোষণার করে মিয়ানমারের একটি আদালত।

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি সংগ্রহের অভিযোগে ওই দুই সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

ওয়া লোন (৩২) এবং কিওয়াও সোয়ে ও-এর বিষয়ে তিনি বলেন, তারা সাংবাদিক বলে তাদের কারাদণ্ড দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবারই আছে। এ বিষয়ে তাদের কারাদণ্ড দেয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের আওতায় তাদের শাস্তি। তারা রাষ্ট্রীয় গোপণ নথি সংগ্রহ করেছিল। আমরা যদি সবাই আইনের প্রতি আস্থা রাখি তবে, ওই রায়ের বিপক্ষে তাদের আপিল করার সুযোগ রয়েছে। কেন এই রায় ভুল তার বিরুদ্ধে তাদের অবশ্যই প্রমাণ তুলে ধরতে হবে’।

১৯৯১ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন সু চি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে শান্তিতে নোবেল পান এই নেত্রী। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।

ফলে ব্রিটিশ ট্রেড ইউনিয়ন, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস, ইউএস হলোকাস্ট মিউজিয়াম, ডাবলিন এবং যুক্তরাজ্যের চারটি শহরসহ বেশ কিছু সংস্থা সু চিকে দেয়া তাদের সম্মাননা ফিরিয়ে নিয়েছে। তবে নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহারের নিয়ম নেই বলে এ যাত্রায় বেঁচে যান সু চি।


আরো সংবাদ



premium cement