২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গা 'গণহত্যার' তদন্ত কীভাবে করেছে জাতিসঙ্ঘ?

রোহিঙ্গা 'গণহত্যার' তদন্ত কীভাবে করেছে জাতিসঙ্ঘ? - ছবি : সংগৃহীত

নির্বিচার হত্যা, গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া, শিশুদের ওপর নির্যাতন, নারীদের গণধর্ষণ - মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে এর কোনোটাই বাদ যায নি।

জাতিসঙ্ঘ তদন্তকারীদের ভাষায় "আন্তর্জাতিক আইন সবচাইতে গুরুতর যেসব অপরাধ" - তার সবই ঘটানো হয়েছে সেখানে।

এর মাত্রা ছিল এতই তীব্র যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার তদন্ত হওয়া উচিত - বলেছে তদন্ত রিপোর্ট। মিয়ানমারের সরকার অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

কিন্ত কী ভাবে হয়েছিল এর তদন্ত?

মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর কী ঘটছে - তা জানার জন্য সেদেশে ঢুকতে দিতে তিনবার সরকারকে চিঠি দিয়েছে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের তদন্ত মিশন।

সে অনুরোধের কোনো জবাব দেয়নি মিয়ানমার।

মিয়ানমারে সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সাম্প্রতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেবার এক ফ্যাক্টফাইন্ডিং মিশন গঠনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল সেই তদন্তের প্রক্রিয়া।

কিন্তু সেই মিশন গঠনের পাঁচ মাস পরই রাখাইন রাজ্যে একাধিক পুলিশ ফাঁড়ির ওপর রোহিঙ্গা বন্দুকধারীদের আক্রমণের জবাবে ওই রাজ্যে এক বড় আকারের সামরিক অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

এর পর জাতিসঙ্ঘ তদন্তের মূল কেন্দ্রবিন্দুই হয়ে দাঁড়ায় এই ঘটনা। ২০১৭-র আগস্ট মাসের পরের ১২ মাসে কমপক্ষে ৭ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

ফলে, মিয়ানমারে ঢুকতে না পারলেও সেখানে কী ঘটেছে - তা স্বচক্ষে দেখেছে এমন লোক পাওয়া কঠিন হয়নি তদন্তকারীদের জন্য।

মিয়ানমার ছেড়ে পালানোর আগে সেখানকার সহিংসতা দেখেছেন এমন অসংখ্য লোকের কাছ থেকে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত মোট ৮৭৫ জন লোকের সাথে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা।

তারা সিদ্ধান্ত নেন, যে লোকেরা তাদের কাহিনি এর আগে কখনো কাউকে বলেন নি - তাদের বিবরণকেই সবচেয়ে মূল্যবান বলে গণ্য করা হবে।

"যে লোকেরা ইতিমধ্যেই অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলেছেন, তাদের সাক্ষাতকার আমরা নিতে চাইনি। তা ছাড়া আমরা কোন একটি মাত্র বর্ণনাকে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করিনি" - বলছিলেন অস্ট্রেলিয়ান মানবাধিকার আইন বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার সিদোতি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলেছেন - তার সাথে তারা মিলিয়ে দেখেছেন একই সময়কার ঘটনা বর্ণনাকারী অন্য শরণার্থীদের দেয়া তথ্য।

আরো প্রমাণ হিসেবে তারা যেসব উৎস ব্যবহার করেছেন - তার মধ্যে আছে ভিডিও, আলোকচিত্র, দলিলপত্র, উপগ্রহ চিত্র ইত্যাদি অনেক কিছু। এগুলোর স্থান-কাল আবার প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণের সাথে মিলিয়ে দেখা হয়েছে।

উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে উত্তর রাখাইন রাজ্যে ৩৯২টি গ্রাম আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ওই এলাকার ৩৭ হাজার বাড়ি - যা মোট বাড়ির প্রায় ৪০ শতাংশ - তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এর ৮০ শতাংশ পুড়িয়ে দেয়া হয় সামরিক অভিযানের প্রথম তিন সপ্তাহের মধ্যেই।

ঘটনাস্থল থেকে ফটোগ্রাফিক প্রমাণ পাওয়াটা ছিল বেশ কঠিন। কারণ যে লোকেরা রাখাইন রাজ্য ছেড়ে যাচ্ছে তাদের থামিয়ে তল্লাশি করা হয়েছে, টাকা পয়সা, সোনাদানা, মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়া হয়েছে।

সিদোতি বলছেন, এর উদ্দেশ্য স্পষ্টতই ছিল যাতে লোকে কোন ভিডিও বা ছবি নিয়ে যেতে না পারে।

রিপোর্ট বলছে, ছয় জন উর্ধতন বর্মী সেনা কর্মকর্তার বিচার হওয়া উচিত। এর মধ্যে আছেন কমান্ডার ইন-চীফ মিন অং লাইং এবং তার ডেপুটি।

সিদোতির কথায়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এতই কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে যে কমান্ডার ইন-চীফ এবং তার অধস্তনদের অজ্ঞাতসারে কিছুই ঘটতে পারে না।

তিনি বলছেন, যারা আদেশ দিয়েছেন এবং সেনাবাহিনীর যে সদস্যরা নৃশংসতা চালিয়েছেন - তাদের অনেকের নামই পাওয়া গেছে তবে তা এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement