২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মিয়ানমার উপকূলে রহস্যময় জাহাজ

রহস্যময় সেই জাহাজ -

মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের কাছে সমুদ্রসীমায় কয়েকদিন ধরে ভাসছে একটি রহস্যময় জাহাজ। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে মিয়ানমার পুলিশ। জাহাজটি কী করে মিয়ানমারের সমুদ্রসীমায় এলো, এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও নিশ্চিত করেছে তারা।

মিয়ানমারের নৌ বাহিনী জানিয়েছে, জাহাজটিতে কোন লোক বা কোন পণ্য নেই।

ইয়াঙ্গুনের উপকূলের কাছে গত সপ্তাহে জেলেরা ‘স্যাম রাতুলাঙ্গি পিবি ১৬০০’ নামের জাহাজটির সন্ধান পায় বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার নৌবাহিনী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সমুদ্রসৈকতে আটকে পড়া ওই জাহাজটির ভেতর অনুসন্ধান চালান। সে সময় ইন্দোনেশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজটিতে কোনো নাবিক বা পণ্য ছিল না বলে ফেসবুকে জানিয়েছে ইয়াঙ্গুন পুলিশ। মিয়ানমারের সমুদ্রসীমায় এবারই প্রথম এ ধরনের ‘রহস্যময় জাহাজের’ সন্ধান পাওয়া গেল।

বিশ্বজুড়ে জাহাজ চলাচলের খবরাখবর দেয়া মেরিন ট্রাফিক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ‘স্যাম রাতুলাঙ্গি পিবি ১৬০০’ নামের জাহাজটি ২০০১ সালে নির্মিত হয়। কনটেইনার পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত এ জাহাজের দৈর্ঘ্য ১৭৭ মিটারেরও বেশি। জাহাজটির সর্বশেষ অবস্থান রেকর্ড করা হয় ২০০৯ সালে, তাইওয়ান উপকূলে। ৯ বছর পর ইয়াঙ্গুনের কাছে এর খোঁজ মিলল।

ইয়াঙ্গুনের কাছে আটকা পড়া ‘স্যাম রাতুলাঙ্গি পিবি ১৬০০’-কে এখনো ‘কাজ চালানোর মতো সচল’ জাহাজ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন মিয়ানমারের নাবিকদের স্বতন্ত্র একটি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অং কিয়াও লিন। মিয়ানমার টাইমসকে জাহাজটি সম্প্রতি পরিত্যক্ত হয়েছে বলেও ধারণা দিয়েছেন তিনি। তার সন্দেহ, ‘অবশ্যই এর কোনো কারণ রয়েছে।’

কেউ কেউ ধারণা করছেন জাহাজটি টেনে নিয়ে যাচ্ছিল অন্য একটি জাহাজ। এটির সামনে দিকে দুটি তার ঝুলতে দেখে এমন ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মতে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় পুরণো জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে নেয়া হচ্ছিল এটি, কিন্তু কোন কারণে টেনে নেয়ে জাাহজটি থেকে এটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

আরো পড়ুন : ভুয়া ছবি দিয়ে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার আর্মির ‘সত্য খবর’!

একটি সাদাকালো ছবি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে নদীতে ভেসে আছে দু’টি লাশ। পাশে এক ব্যক্তি কৃষিকাজে ব্যবহৃত একটি যন্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে করা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি বইয়ে স্থান পেয়েছে ছবিটি। ক্যাপশন দেয়া হয়েছে ‘বাঙালিরা স্থানীয় আদিবাসীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে’। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো ছবিটি মিয়ানমারের নয়, ছবিটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের।

১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি ব্যবহার করে এমনই রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সে সময় বাঙালিদের ওপর পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর গণহত্যার ছবিকেই মিয়ানমার সেনারা রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের দ্বারা বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী নিধনের ছবি হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছে।


শুধু তাই নয় বইটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আরো দুটি ভুয়া ছবি। একটি রুয়ান্ডার এবং অপরটিও বাংলাদেশীদেরই। রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীরা মিয়ানমার ছাড়ছে। অথচ বলা হয়েছে তারা মিয়ানমারে প্রবেশ করছে। 

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পাবলিক রিলেশন অ্যান্ড সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার ডিপার্টমেন্ট ১১৭ পৃষ্ঠার ওই বইটি জুলাই মাসে প্রকাশ করে। তারা ওই বইয়ে প্রকাশিত ছবিকে ‘ডকুমেন্টারি ফটো’ বলে উল্লেখ করেছে। অথচ এর মধ্যে বেশ কিছু ছবি বাংলাদেশের মুক্তযুদ্ধকালীন ছবি। ওই বইয়ে ব্যবহৃত আটটি ঐতিহাসিক ছবি বিশ্লেষণ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এগুলোর মধ্যে তিনটি ছবি ভুয়া। ছবিগুলো বিকৃত করা হয়েছে।

বইটির অধিকাংশ বিষয়বস্তুর সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে সেনাবাহিনীর ‘ট্রু নিউজ’ বা ‘সত্য খবর’ তথ্য ইউনিটকে। এ ইউনিট রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকে খবর সরবরাহ করে যাচ্ছে, বিশেষত ফেসবুকের মাধ্যমে।


আরো সংবাদ



premium cement