২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পের পর ৩৪০ বার পরাঘাত : নিহত ৩৮১ ও বাস্তুচ্যুত ১ লাখ ৫৬ হাজার

ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পের পর ৩৪০ বার পরাঘাত : নিহত ৩৮১ ও বাস্তুচ্যুত ১ লাখ ৫৬ হাজার - সংগৃহীত

আবারো শক্তিশালী কেঁপেছে ইন্দোনেশিয়া। কাঁপলো ইন্দোনেশিয়ার লম্বোক দ্বীপ। সাড়ে ৪ হাজার বর্গ কি.মি এর এই দ্বীপটি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতীয় দুর্যোগ সংস্থা জানিয়েছে, কমপক্ষে ১৪শ মানুষ গুরুতর আহত হয়েছে এবং ১ লাখ ৫৬ হাজার মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে।

কর্তৃপক্ষ নিহতের সংখ্যা ১৩১ জন  জানালেও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত  তথ্যে নিহতের সংখ্যা কত তা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। কারো হিসাবে নিহতের সংখ্যা ৩৪৭ জন, কারো হিসাবে ৩৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

নিহতদের ৭৮ জনই লম্বোকের উত্তরাঞ্চলের। ওই অঞ্চলে ৪২ হাজার ঘরবাড়ি-ভবন ভেঙে পড়েছে। জরুরি উদ্ধারকর্মীরা এখনো ধ্বংসস্তুপের নিচে জীবিতদের সন্ধান করছে। বাদবাকী নিহতরা হচ্ছে পশ্চিম লম্বোকে ২৪ জন, পূর্বে ১৯ জন, মাতরম শহরে ৬ জন, শহরের কেন্দ্রস্থলে ২ জন এবং পাশের বালি দ্বীপে ২ জন।

উত্তর লম্বোকের রাস্তায় প্রায় ৮৪ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। স্থানীয়রা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য অর্থ চাইছে। ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে গত মঙ্গলবারও মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদিন ধসে পড়া একটি মুদি দোকানের নিচ থেকে এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

এখনো উদ্ধার অভিযান চলায় মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশটির ডিজাস্টার মিটিগেশন এজেন্সি (বিএনপিবি )। ভূমিকম্পে সেতু ধসে পড়ায় এবং কোথাও কোথাও পাহাড়ি রাস্তাঘাট, গাছ, পাথর ও মাটি পড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।

ভূমিকম্পে গৃহহীন হয়ে পড়া মানুষজন খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। এমনকি তাদের কাছে সুপেয় পানি পর্যন্ত নেই। তাদের জরুরি ত্রাণ প্রয়োজন। বিএনপিবি মুখপাত্র সুটোপো পুরউও নুগরোহো বলেন, ‘আবারো ভূমিকম্পের আশঙ্কায় হাজার হাজার আতঙ্কিত মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে খোলা আকাশের অবস্থান করছে। কেউ কেউ নিরাপদ মনে করে পাহাড়ের উঁচু স্থানে চলে গেছে। তাদের কাছে সাহায্য পৌঁছান অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা জনগণকে নিচে নেমে এসে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রের আশেপাশে অবস্থান করার অনুরোধ করছি।’

গত রোববার ৭ মাত্রার এ ভূমিকম্পে বহু বাড়িঘর ধসে পড়ে, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। বালি দ্বীপেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল দ্বীপের উত্তর উপকূলে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের পর সুনামি সতর্কতা জারি করা হলেও দুই ঘণ্টা পর তা তুলে নেওয়া হয়।

নয়নাভিরাম সৈকত ও হাইকিং ট্রেইলের জন্য লম্বোক পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। মাত্র এক সপ্তাহ আগে এই দ্বীপে ৬ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়। ফের দ্বিতীয় আরেকটি ভূমিকম্পের পর পর্যটকরা এরই মধ্যে  দ্বীপটি ছেড়ে গেছেন।

এবারের ভূমিকম্পে দ্বীপের প্রধান শহর মাতরমের ভবনগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে শত শত মানুষ আহত হয়েছেন বলে উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ইমান বলেন, ভূমিকম্পে পুরো শহর কেঁপে উঠলে সবাই আতঙ্কে ঘরবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে।

মাতরমের সিটি হাসপাতাল আর বালির ডেনপাসার হাসপাতাল থেকে রোগীদেরও বের করে আনা হয়। তাদের রাস্তায় রেখে চিকিৎসা দিতে দেখা যায় চিকিৎসকদের। বালি দ্বীপে কয়েক সেকেন্ড কম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের পর লম্বোক ও বালি বিমানবন্দরে লোকজনকে আতঙ্কিত হয়ে ছুটোছুটি করতে দেখা যায়।

সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে শানমুগাম একটি সম্মেলনে অংশ নিতে ওই সময় লম্বোক দ্বীপেই ছিলেন। ফেইসবুকে তিনি লিখেছেন, হোটেল রুম এমনভাবে কাঁপছিল যে দাঁড়িয়ে থাকাই কঠিন হয়ে গিয়েছিল। রিং অব ফায়ারের মধ্যে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ায় প্রায়ই ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত দেখা যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরে থাকা সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলোর অর্ধেকেরও বেশি প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে বিস্তৃত ওই রিং অব ফায়ারের মধ্যে অবস্থিত।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং দেশের আবহাওয়া ও ভূতত্ত্ব সংস্থা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার নতুন করে ভূমিকম্পের আঘাতে বহু ভবন ধসে পড়েছে। আতঙ্কিত লোকজন বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। ভূমিকম্পের পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়াদের উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার মুখপাত্র সুতোপো পুরয়ো নুগরোহো বলেন, বৃহস্পতিবার ভূমিকম্পের পর লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা বাড়ি-ঘর থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ এই ভূকম্পনের কারণে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে ট্রমা দেখা দিতে পারে।

লম্বক দ্বীপে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রের কাছাকাছি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। রোববার রাতে ভূমিকম্প আঘাত হানার পর কমপক্ষে ৩৪০ বার পরাঘাত (আফটার শক) অনুভূত হয়েছে যা আগামী দু'সপ্তাহ আরো বেশ কয়েকবার হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ জানিয়েছে, লম্বক উপকূলে সেনগিগি এবং জিলি দ্বীপের মধ্যবর্তী পর্যটক শহরে সোমবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে ৫ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রোববার যে এলাকায় ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল তার কাছাকাছি এলাকায় মঙ্গলবার ভোর ২টা ২১ মিনিটে ৫ দশমিক ৪ মাত্রার আরও একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর আগে গত জুলাইয়ের ২৯ তারিখে লম্বক দ্বীপে ৬ দশমিক ৪ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে ১৭ জন প্রাণ হারায়।


আরো সংবাদ



premium cement
অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিকুর রহমান সোনাগাজীতে জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পুরস্কার পেল ২২ কিশোর গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি

সকল