১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফুল চাষে দারিদ্র জয়

ফুল চাষে দারিদ্র জয় - সংগৃহীত

বর্তমানে চীনের ২০টিরও বেশি গ্রামের বাসিন্দা গোলাপ চাষ করে তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন করেছে। চলতি বছর এ এলাকাগুলোতে প্রায় ২শ' ৬০ টন উন্নত মানের গোলাপ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা বিভিন্ন কোম্পানির চা, তেল, জ্যাম এবং কেক তৈরিতে ব্যবহার হবে।

গোলাপ ফুলের চাষ যে আয়ের অন্যতম উৎস হতে পারে  এটি প্রমাণ করেছে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। গোলাপ ফুল চাষ করে দরিদ্রতা ঘুচিয়েছেন দেশটির ২০টিরও বেশি এলাকার বাসিন্দারা। হয়ে উঠেছেন সচ্ছল।

সবুজ পাহাড়ে ঘেরা চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সিচুয়ান প্রদেশের মাওশুই গ্রাম। যেখানকার অধিকাংশ অধিবাসীই আদিবাসি তিব্বতীয় এবং সংখ্যালঘু কিয়াং সম্প্রদায়ের। পাহাড়ের বুকে রবি শস্য ও সবজির পরিবর্তে চাষ করছেন গোলাপ ফুল।দারিদ্রের কষাঘাতে তাদের জীবন যখন জর্জরিত তখন এ ফুল চাষ তাদের জন্য হয়ে ওঠেছে আশির্বাদ।

ফুল চাষীরা বলেন,  'আমাদের পূর্ব পুরুষরা যেসব শস্য চাষ করতেন আমরাও তাই করতাম। সেসব ফসল নিজেরা খেতাম বাকিটা গবাদিপশুকে খাওয়াতাম। কোনো সঞ্চয় ছিল না। কিন্তু এখন গোলাপ চাষ করে আমাদের আর্থিক উন্নতি হয়েছে। আমাদের বার্ষিক আয় প্রায় ১৫ হাজারের বেশি মার্কিন ডলার।'

চেন ওয়ানগুই নামে এক আদিবাসি নারীর উদ্যোগে ২০১২ সালে প্রথম এ এলাকায় গোলাপ চাষ শুরু হয়। শুরুতে গ্রামবাসি এ বিষয়ে খুব বেশি মনোযোগী না হলেও পরে চেন-এর পরামর্শে বড় পরিসরেই চাষ শুরু করেন।

উদ্যোক্তা চেন ওয়ানগুই বলেন, 'আমি বিস্মিত হয়েছিলাম যখন আমার এক বন্ধু আমাকে জানায় যে, গোলাপের নির্যাস থেকে তৈরি তেল স্বর্ণের চেয়েও দামি। আমি বলেছিলাম স্বর্ণের চেয়ে নয়, আলু এবং ডালের চেয়ে বেশি মুনাফা হলেই হবে। এরপরই উদ্যোগ নেই। প্রথম দিকে তারা আমার সামনেই চারা রোপন করলেও ঠিকমতো যত্ন না করায় অনেক চারা মরে যায়। পরে বোঝানোর পর কাজ হয়েছে।'

 

আমবাগানে ডাঁটা চাষ করে সফল হান্নান
কাজী আনিছুর রহমান রানীনগর (নওগাঁ), ১২ জুন ২০১৮

নওগাঁর রানীনগরে আমবাগানে ডাঁটা চাষ করে সফল হয়েছেন আবদুল হান্নান। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে সবজিজাতীয় ফসলের পাশাপাশি একই জমিতে অন্যান্য জাতের ফসল চাষ করে বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। তার কাছ থেকে স্থানীয় চাষিরা নানা ধরনের পরামর্শ নিয়ে একই জমিতে অধিক ফসল ফলানোর চেষ্টা করছেন। 

চাষি হান্নানের পৈতৃক জমি তেমন না থাকলেও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে একই জমিতে হরেক রকম সবজি যেমন ডাঁটা শাক, পালং শাক, খিরা, শসা আবার ফলের মধ্যে আম ও নারকেল গাছ লাগিয়ে এলাকায় বেশ সাড়া জাগিয়েছেন। নিজেই পরিশ্রম করে আবার প্রয়োজনের তাগিদে দুই একজন শ্রমিক নিয়ে এসব ফসলের নিবিড় পরিচর্যা করে থাকেন। চলতি রবি মওসুমে আম চাষের পাশাপাশি ডাঁটা শাক থেকেই খরচ বাদে তিনি প্রায় ৬০ হাজার টাকা লাভ করেছেন।

তার দাবি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সবজি চাষের জন্য মানসম্পন্ন জমি সুলভ মূল্যে পাওয়া গেলে এই ব্যবসা করে ভালো লাভবান হওয়া যায়। ইতোমধ্যেই তার দেখাদেখি একই জমিতে রকমারি চাষ শুরু হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে উপযুক্ত পরামর্শ পেলে অল্প জমিতেই অধিক ফসল ফলানো সম্ভব। আর অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই প্রায় ৩৫টি আমগাছের সুস্বাদু পাকা আম বিক্রির জন্য বাজারে আনা হবে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের কুজাইল গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে আবদুল হান্নান (৩৮) প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে পড়াশোনায় আর বেশি এগোতে না পারলেও বাবা-মায়ের সংসারে একটু সচ্ছলতা আনার লক্ষ্যে অল্প বয়সেই সংসার পরিচালনার দায়িত্ব নেন। অল্প পরিশ্রমে কিভাবে বেশি উপার্জন করা যায় সেই পরিকল্পনা সামনে রেখে অন্য কাজকর্মের পাশাপাশি সবজি চাষের দিকে মনোযোগ দেন। ধীরে ধীরে তিনি প্রতিটি সবজি চাষে সফলতা পেলে এর পরিধি বাড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে সে অন্যের জমি স্বল্প টাকায় লিজ নিয়ে রকমারি চাষ শুরু করেন।

এর ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে দুর্গাপুর গ্রামের মৃত রহিসুল আলম খানের চক-কুজাইল মৌজার রতনডারি সংলগ্ন প্রায় আড়াই বিঘা জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নেন। শুরুতেই তিনি ওই জমিতে গম চাষের মধ্য দিয়ে পর্যায়ক্রমে আম গাছ, নারকেল গাছ লাগানো শুরু করেন। গম কাটা-মাড়াই শেষে একই জমিতে ডাঁটা শাক, পালং শাক, বাঙি, ঢেঁড়শসহ নানান সবজি ও ফলজ গাছ লাগিয়ে তিনি এখন সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তার সাফল্য দেখে আশপাশের চাষিরাও তাদের জমিতে রকমারি জাতের সবজি ও ফলজ বৃক্ষ চাষে মনোযোগী হচ্ছেন। ফসলি জমিতে বসতবাড়ি ও বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কারণে দিন দিন যখন কৃষি জমি কমে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় এক জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল ফলিয়ে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন মাঠপর্যায়ের কৃষক আবদুল হান্নান। 

আবদুল হান্নান বলেন, লেখাপড়া তেমন করতে না পাড়লেও কৃষিকাজে মনোযোগ আমার সব সময় বেশি। নিজের জমিজমা তেমন না থাকলেও বর্গাচাষি হিসেবে আমি অনেক দিন ধরেই নানা জাতের সবজি চাষ করে আসছি। বেচে-কিনা যা হতো ও সবাইকে দিয়ে কিছু সঞ্চয় করে ১৪ সালের দিকে ১০ বছরের জন্য জমি লিজ নিয়ে একই জমিতে সবজি ও ফলজ গাছ লাগিয়ে প্রতিবছর আমার আয় ভালোই হচ্ছে। এ বছরেই আমি আরো জমি লিজ নিয়ে আমার কৃষি জাতীয় কর্মকাণ্ডের প্রসার আরো বৃদ্ধি করব।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, আবদুল হান্নানের মিশ্র বাগানের কথা জানার পর তিনি বাগানটি পরিদর্শন করেছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি অনেক ভালো করেছেন। একই জমিতে নানা জাতের সবজি চাষ করে তিনি এখন লাভবান হচ্ছেন। ইতোমধ্যেই রাণীনগর কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাকে নানা ধরনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামীতে তিনি আরো ভালো করবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement