২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে চীন-ভারত

সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে চীন-ভারত - সংগৃহীত

চীনকে টেক্কা দিতে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে ভারত! সামরিক শক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার পরই চীন-ভারতের অবস্থান। চীনের রয়েছে ৫৭টি সাবমেরিন, ভারতের রয়েছে মাত্র ১৬টি। আবার চীনের যেখানে আছে ১১টি পরমাণু সাবমেরিন, অথচ ভারতের রয়েছে মাত্র একটি।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ওয়েবসাইটের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর তালিকায় ভারত আছে চারে। এমনকি চীনের তুলনায় ভারতের সেনাবাহিনীর আকার বড়। ভারতের শক্তি বৃদ্ধিতে চিন্তিত চীন!

সামরিক শক্তি বাড়িয়েই চলছে চীন-ভারত। অন্যকে পেছনে ফেলতে যেন মরিয়া। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত বার্ষিক বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে খরচ করেছে ৬২ বিলিয়ন ডলার। প্রায় এক দশক ধরে অস্ত্র কেনার দিক দিয়ে ভারত বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ একটি দেশ। জনশক্তি এবং যুদ্ধজাহাজ ও জঙ্গি বিমানসংখ্যার কারণে ইতিমধ্যে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচের মধ্যে ঢুকেছে ভারত।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) ‘দ্য মিলিটারি ব্যালেন্স ২০১৮’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দিন দিন ভারতের সামরিক বাজেট বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটি সামরিক ব্যয়ে শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে ঢুকে পড়েছে।  ২০১৭ সালে সামরিক খাতে ভারতের ব্যয় ছিল ৫ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। ২০১৬ সালে এ খাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির ব্যয় বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ১১০ কোটি ডলার।

ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইপিআরআই) প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৭—এই ৪ বছরে ভারতের অস্ত্র আমদানি বেড়েছে ২৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া থেকে ভারত অস্ত্র কেনে। এই ৪ বছরের মধ্যে ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বে সামনে চলে এসেছে। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালে পুরো বিশ্বে যত অস্ত্রের বেচাকেনা হয়েছে, তার ১২ শতাংশই কিনেছে ভারত।

২০০৮-১২ সালের তুলনায় ২০১৩-১৭ সালে ভারতের অস্ত্র আমদানি বেড়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ। চীনের অস্ত্র আমদানি একই সময় কমেছে ১৯ শতাংশ। কারণ, অস্ত্র উৎপাদনে আগের চেয়ে অনেক এগিয়েছে চীন।

২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেই নরেন্দ্র মোদি সরকার ৫ হাজার ৫৭ লাখ ডলারের সামরিক অস্ত্র কেনে। এ বছর ফ্রান্সের রাফায়েল যুদ্ধবিমান কিনতে ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ইউরোয় একটি চুক্তি করেছে ভারত। ভারতীয় মুদ্রায় যা ৫৮ হাজার কোটি রুপির মতো। মোদির সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারত তাদের প্রবৃদ্ধির ১ দশমিক ৮ শতাংশ ব্যয় করছে সামরিক খাতে।

চীন ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সামরিক খাতে ব্যয় বাড়িয়েছে ২৫ শতাংশ, যেখানে ভারত বাড়িয়েছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। চীন ও ভারতের মধ্য সামরিক ভারসাম্যর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে গেছে চীন। ২০০০ সালের পর থেকে দেশটি অধিক সাবমেরিন, রণতরি, রণতরিবিধ্বংসী জাহাজ, মাঝারি আকারের যুদ্ধজাহাজ তাদের প্রতিরক্ষা খাতে যুক্ত করেছে।

পাকিস্তানকে সামরিক দিক থেকে আরো শক্তিশালী করার দিকে নজর দিয়েছে চীন। পাকিস্তানের জন্য চীনে আটটি সাবমেরিন তৈরি হচ্ছে। প্রজেক্ট হাঙ্গুরের আওতায় সাবমেরিন তৈরি করছে চীন। খুব শিগগিরই সেগুলো পাকিস্তানের হাতে তুলে দেয়া হবে। ভারতের এখন পর্যন্ত ১৬টি সাবমেরিন রয়েছে। আর পাকিস্তানের সাবমেরিন সংখ্যা ১০। নতুন এই সাবমেরিনগুলো পাকিস্তানের হাতে পৌঁছে গেলে তাদের সাবমেরিনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া চীনের তৈরি নতুন এই সাবমেরিনগুলো পানির নিচেও যুদ্ধ করতে সক্ষম।

সাবমেরিন পাওয়ার ফলে পাকিস্তানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে। ভারতীয় মিডিয়ায় বলা হয়, এই পদক্ষেপটি তখনই নেয়া হলো, যখন চীন দু’টি রিমোট স্যাটেলাইট লঞ্চ করেছে। এর সাহায্যে মহাকাশ থেকে ভারতের উপর নজরদারি চালাবে চীন। আর সাবমেরিনের সাহায্যে পাকিস্তান নজর রাখবে ভারতের উপর। পাকিস্তানের গদরে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর তৈরির ক্ষেত্রে যাতে কোনো বাধা না আসে, সেই কারণেই এই দুই দেশ এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

স্যাটেলাইট PRSS-1 ও PakTES-1A উত্তর পশ্চিম চীনের জিউকুয়ান স্যাটেলাইট সেন্টার থেকে ছাড়া হয়েছে। লং মার্চ 2C রকেট থেকে এই স্যাটেলাইট দু’টি ছাড়া হয়। PRSS-1 হলো প্রথম রিমোট স্যাটেলাইট যেটি পাকিস্তানের হাতে তুলে দেয় চীন। চায়না অ্যাকাডেমি অফ স্পেস টেকনোলজির তৈরি করা ১৭তম স্যাটেলাইট এটি। বলা হচ্ছে, এই স্যাটেলাইটটি সার্ভে, জাতীয় বিপর্যয় পর্যবেক্ষণ, কৃষির গবেষণা, শহরের উন্নয়নের মতো কাজে ব্যবহার করা হবে। সবটাই হবে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর বেল্টের মধ্যে।

ভারতীয় প্রতিরক্ষাকে সাঁড়াশি চাপে রাখতে চাইছে চীন। সেই কারণেই একে একে স্যাটেলাইট ও সাবমেরিনের সাহায্যে সাগর ও আকাশ থেকে ভারতীয় ভূখন্ডে নজরদারি চালানোর ব্যবস্থা পাকা করতে চাইছে তারা।

ভারত সাগর অঞ্চলে প্রায়ই দেখা যায় চীনের সাবমেরিন। চীনের সাধারণ ও আণবিক সাবমেরিনের বিচরণ রুখতে দ্বীপাঞ্চল আন্দামান ও নিকোবরের সামরিক স্থাপনায় নজরদারির যুদ্ধবিমান ও গোয়েন্দা ড্রোন পাঠিয়েছে ভারত। এই বিমান ও ড্রোন চীনা সাবমেরিনের বিচরণ পর্যবেক্ষণ করবে। এই বিমান সাবমেরিন অনুসন্ধানে বেশ কার্যকর। এ ছাড়া অস্থায়ী ভিত্তিতে সেখানে সার্চার-টু নামক ড্রোন পাঠাচ্ছে ভারতীয় নৌ ও বিমানবাহিনী। চীনা সাবমেরিনের অবাধ বিচরণ বন্ধ করা ছাড়াও সমুদ্রপথে পাচার বন্ধ এবং বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর জাহাজকে নিরাপত্তা দেওয়ায় আন্দামান ও নিকোবরের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম লক্ষ্য।

চীন তাদের সর্বাধুনিক নৌযান টাইপ-৫৫ ক্রুজার নির্মাণের ক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়ে গেছে। চাইনিজ টাইপ-৫৫ ক্রুজারের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬০-১৮০ মিটার, প্রস্থ ২১-২৩ মিটার এবং এর ওজন ১২০০০-১৪০০০ টনের কাছাকাছি হবে। এশিয়া অঞ্চলে এর আগে এত বেশি ডিসপ্লেসমেনটের কোনো জাহাজ তৈরি করা হয়নি। টাইপ-৫৫ ক্রুজার মূলত ভারটিক্যাল লাঞ্চার নির্ভর হবে। এতে টাইপ ৫২-ডি এর মত বিভিন্ন চাইনিজ মিসাইল থাকবে।পুরো ফ্লিটের নিরাপত্তার জন্য এতে নতুন YJ-18অ্যান্টিশিপ মিসাইল, HQ-9 লং রেঞ্জ স্যাম এবং সিজে-১০০০ ক্রুজ মিসাইল থাকবে।তবে এতে মোট ১২৮ টি ভারটিক্যাল লাঞ্চার।

ভারত মহাসাগর আর তার লাগোয়া এলাকাগুলোতে নিজের দাপট বজায় রাখতে ওই মহড়ার পাশাপাশি পরমাণু অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী বিভিন্ন ধরনের সাবমেরিনে তড়িঘড়ি অস্ত্রভাণ্ডার ভরিয়ে ফেলারও প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে ভারতীয় নৌবাহিনীতে। ধাপে ধাপে পরমাণু শক্তিতে চলা ৬টি অ্যাটাক সাবমেরিন (এসএসএন), পরমাণু শক্তিতে চলা ৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন (এসএসবিএন) এবং ১৮টি ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডারে আনতে চলেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। সবগুলোই বিদেশি।

ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে থাকা ১৩টি পুরনো সাবমেরিন আর ‘আইএনএস-আরিহন্ত’ ও ‘আইএনএস-চক্র’। পরমাণু শক্তিতে চলা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী (এসএসবিএন)‘আইএনএস-আরিহন্ত’ দেশে বানানো। তবে সবে গত বছর বাহিনীর অস্ত্রভাণ্ডারে এসেছে ‘আইএনএস-আরিহন্ত’। আর পরমাণু শক্তিতে চলা অ্যাটাক সাবমেরিন (এসএসএন)  নৌবাহিনীর হাতে একটি রয়েছে, সেই ‘আইএনএস-চক্র’ রাশিয়ার কাছ থেকে লিজে নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের কথা মাথায় রেখে ‘আইএনএস-চক্র’কে এখনো পরমাণু অস্ত্রবাহী করে তোলা হয়নি। এসএসবিএন ‘আইএনএস-আরিধামান’ দেশেই বানানো হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে, নিহত ৪৫, বাঁচল একটি শিশু ইসরাইলের রাফা অভিযান পরিকল্পনা স্থগিত এগিয়ে নিয়ে গিয়েও জেতাতে পারলেন না ত্রিস্তান

সকল