২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

থাইল্যান্ডের গুহায়  উদ্ধার অভিযান, বাকি রইল এক

থাইল্যান্ডের গুহায়  উদ্ধার অভিযান, বাকী রইল এক - সংগৃহীত

থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া ১২ কিশোর ফুটবলারদের একাদশ সদস্যকে মঙ্গলবার উদ্ধার করা হয়েছে।  এরফলে উদ্ধারের বাকি রইল এক জন। তিনজন কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়। গুহায় এখনো আরও এক কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ আটকে আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, একাদশ সদস্যকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নবম ও দশম ও একাদশ কিশোরকে  ৩০ মিনিটের ব্যবধানে গুহা থেকে উদ্ধার করে আনা হয়।

বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, আজ তৃতীয় দিনের মতো শিশুদের উদ্ধারকাজে ৯০ জন ডুবুরি থাম লুয়াং গুহায় প্রবেশ করেন। রোববার ও গতকাল সোমবার মোট আটজনকে থাম লুয়াং গুহা থেকে উদ্ধার করা হয়।  পুরো উদ্ধার-প্রক্রিয়ায় ৯০ জনের একটি ডুবুরি দল কাজ করছে। তাঁদের মধ্যে ৪০ জন থাইল্যান্ডের। অন্যরা বিদেশি।

গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে হেঁটে, কাদা মাড়িয়ে, কখনো চড়াইয়ে উঠে, আবার কখনো পানির নিচ দিয়ে সাঁতরে ওই কিশোরদের বের করে আনা হয়। উদ্ধারকাজের জন্য বাইরে থেকে ওই ফুটবল দলের অবস্থানস্থল পর্যন্ত দড়ি বাঁধা হয়। উদ্ধারের সময় প্রত্যেক কিশোরকে অক্সিজেন মাস্ক পরানো হয়, দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় সামনে থাকা ডুবুরির সঙ্গে। একজন গুহায় বাঁধা দড়ি এবং অক্সিজেনের বোতল নিয়ে যান খুদে ফুটবলারদের কাছে। কোনো সমস্যা হলে সহায়তার জন্য তাদের পেছনে ছিলেন আরেকজন ডুবুরি। গুহার সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গাটি ‘টি-জংশন’ নামে পরিচিত। এই এলাকা এতটাই সংকীর্ণ যে এখানে ডুবুরিদের অক্সিজেন ট্যাংকও খুলে ফেলতে হয়। এই এলাকার আগে ‘চেম্বার-থ্রি’ নামের প্রকোষ্ঠে বেস ক্যাম্প বানানো হয়েছে। সর্বশেষ ধাপটি অতিক্রমের আগে এখানে কিছু সময় বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা হয়।

আজকের মধ্যেই পুরো উদ্ধারপ্রক্রিয়া শেষ করতে চান ডুবুরিরা। উদ্ধার করা শিশুরা ভালো আছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

মিয়ানমারের সাথে সীমান্তের কাছে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ থাম লুয়াং গুহা থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম গুহা। কম চওড়া আর অনেক প্রকোষ্ঠ থাকায় গুহার ভেতরে চলাচল করা কঠিন। ওই গুহায় ঢোকার পর গত ২৩ জুন নিখোঁজ হয় ১২ খুদে ফুটবলার ও তাদের কোচ। খুদে ফুটবলারদের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। আর তাদের সহকারী কোচ এক্কাপোল জানথাওংয়ের বয়স ২৫ বছর। তারা মু পা নামের একটি ফুটবল দলের সদস্য। নয় দিন সেখানে আটকে থাকার পর ২ জুলাই ব্রিটিশ ডুবুরি রিচার্ড স্ট্যানটন ও জন ভলানথেন তাদের সন্ধান পান।

আরো পড়ুন : 'অবিশ্বাস্য সাহসী এবং শক্ত এই থাই শিশুরা'

থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া ১২ জন কিশোরকে বের করে আনার কাজে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যে সব বিদেশী বিশেষজ্ঞ ডুবুরিরা অংশ নিচ্ছেন, তাদের একজন ইভান কারাজিচ।

ডেনমার্কের এই বিশেষজ্ঞ ডুবুরি থাইল্যান্ডেরই কো-তাও নামে ছোটে একটি দ্বীপে একটি গুহার ভেতরে ডাইভিং বা ডুব সাঁতার দেয়ার একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালান।

চ্যাং রাইয়ের পাহাড়ের গুহায় কিশোর ফুটবল দলটির আটকে পড়ার খবর প্রচার হওয়ার পর অন্য নানা দেশের অনেক স্বেচ্ছাসেবী ডুবুরির মত তিনিও ছুটে গিয়ে যোগ দেন উদ্ধারকারী দলে।

বিবিসির সাথে তার গত কদিনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কারাজিচ আটকে পড়া থাই শিশু-কিশোরদের, যাদের অধিকাংশ সাঁতারই জানতো না, সাহসের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

"এই বাচ্চাগুলোকে এমন কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা আগে কখনো এই বয়সের কোনো শিশুই হয়তো করেনি...১১ বছর বয়সে কেভ ডাইভিং (গুহার ভেতরে ডুব সাঁতার) চিন্তারও বাইরে।"

কারাজিচ বলেন, সরু গুহায় ভারি অক্সিজেনের পাত্র পিঠে নিয়ে মাস্ক পরে ডুব সাঁতার দেয়া যে কোনো বয়সের মানুষের জন্য বিপজ্জনক।

"যখন তখন বিপদ আসতে পারে, নিজের টর্চের আলো ছাড়া সবকিছু অন্ধকার।"

কারাজিচ বলেন, উদ্ধারের পরিকল্পনার সময় তাদের সবচেয়ে ভয় ছিল শিশুরা যদি মাঝপথে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, তখন কীভাবে তা সামাল দেয়া যাবে।

কিন্তু এখন পর্যন্ত যে কয়েকজনকে বের করে নেয়া হয়েছে তাদের তেমন কোনো বিপদের কথা উদ্ধারকারীদের কাছ থেকে শোনা যায়নি।

"আমি বিশ্বাসই করতে পারি না যে এই শিশুগুলো কতটা সাহসী এবং ঠাণ্ডা মাথার হতে পারে, ভাবতেই পারছি না... দুই সপ্তাহ ধরে ঠাণ্ডা, অন্ধকার গুহার আটকে ছিল তারা, মাকে দেখেনি...।"

ইভান কারাজিচের দায়িত্ব - গুহার মাঝামাঝি পথে অবস্থান নিয়ে অক্সিজেন-ভর্তি পাত্র পরীক্ষা করে বদলে দেয়া।

রোববার প্রথম বাচ্চাটিকে তিনি যখন আসতে দেখেন, অনুভূতি কী ছিল তার?

"মনে মনে অনেক আশঙ্কা ছিল আমার। ৫০ মিটারের মত দূরে প্রথম যখন একজন ডুবুরি এবং তার পেছনে শিশুটি নজরে এলো, আমি তখনও নিশ্চিত ছিলাম না যে শিশুটি বেঁচে আছে কিনা। যখন দেখলাম সে শ্বাস নিচ্ছে, বেঁচে আছে, দারুণ স্বস্তি পেয়েছিলাম।"

নাস্তায় চকলেট চেয়েছে তারা
থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও স্বস্তি প্রকাশ করছেন বের করে আনা আটটি শিশুই ভালো আছে। স্বাস্থ্য সচিব ড জেটাসাদা চোকেদামরংসুক মঙ্গলবার বলেছেন, 'তারা নিজেরাই সবকিছু করতে পারছে।'

একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সকালে কয়েকজন নাস্তার জন্য চকলেট-রুটি খেতে চেয়েছে।

সোমবার কয়েকজন বাসিল পাতা এবং মাংস দিয়ে তৈরি ফ্রাইড রাইস খেতে চেয়েছে।

বিবিসির এক সংবাদদাতা টুইট করেছেন - বলাই বাহুল্য, এই শিশুরা অসামান্য, অসাধারণ।

বিশ্বকাপের অতিথি

এই সাহসী কিশোর ফুটবল দলটিকে মস্কোতে বিশ্বকাপের ফাইনালে বিশেষ অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ফিফা।

কিন্তু থাই চিকিৎসকরা জানিয়েছে, নানা পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণের জন্য কম করে হলেও এক সপ্তাহ তাদের হাসপাতালে থাকতে হবে।

তার অর্থ রোববারের ফাইনাল হয়তো তাদের হাসপাতালে টিভিতে দেখতে হবে।

বিবিসির নিক বিক মজা করে ফিফাকে উদ্দেশ্য করে টুইট করেছেন - "২০২২ সালের বিশ্বকাপে যেন তাদের বিশেষ অতিথি করে নিয়ে যাওয়া হয়।"

ফিফার সাড়া অবশ্য এখনও মেলেনি।

 

আরো পড়ুন : উদ্ধার হওয়া থাই কিশোররা কেমন আছে?

থাইল্যান্ডের গুহায় আটকা পড়া দলটির বাকিদের বাইরে বের করে আনতে চরম ঝুঁকিপূর্ণ উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে ডুবুরিরা। ভেতরে থাকা কিশোররা ও তাদের ফুটবল কোচ ভেতরে সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে। তারা বন্যায় ভেসে যাওয়া গুহাটির সংকীর্ণ পথ দিয়ে ডুবুরির সঙ্গে বের হয়ে আসতে প্রস্তুত বলেও জানা যায়। থাম লুয়াং গুহা ভিতরের এই অভিযান বিশ্বব্যাপী সবার মনোযোগ কেড়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যার কারণে গত ২৩ জুন এই দলটি গুহার ভেতর আটকা পড়ে। পরে গত সপ্তাহে তাদের সন্ধান পায় ডুবুরিরা।

উদ্ধার হওয়া কিশোররা কেমন আছে?

গুহা থেকে এরইমধ্যে যে কিশোরদের উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের কাউকেই জনসমক্ষে আনা হয়নি। তবে এটা বলা হয়েছে যে, তারা প্রত্যেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছে।সোমবার সন্ধ্যায় চারজনকে গুহা থেকে বের করে আনার পর তাদের স্ট্রেচারে করে পাশের চিয়াং রায়ে শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে রোববার উদ্ধার করা হয় আরো চার কিশোরকে। তাদের সবাইকে আরো অন্তত সাত দিন হাসপাতালে আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে হয়েছে। তাদেরকে এখনও বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। সেখানে তাদের এক্স-রে করার পাশাপাশি রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে দুইজনকে ফুসফুস প্রদাহজনিত চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধারকারী কিশোররা জাউ ভাত খেতে পারছে। তারা মাংস খেতে চাইলেও হজমে সমস্যা হতে পারে এমন আশঙ্কায় তাদের সেটা দেয়া হচ্ছে না। কেননা তারা প্রত্যেকেই গত ১০ দিন ধরে না খেয়ে ছিল।

‘সব সংকটের মধ্যেও সাফল্য’

থাই নৌবাহিনীর এক সদস্য তার ফেসবুকে জানান, ‘পুরো কাজ চলছে ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে। অ্যাম্বুলেন্সগুলো যখন গুহার প্রবেশদ্বার থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছিল। তখন গাড়ির হেডলাইটের ঝলকানিতে দেখতে পেলাম আরেকটি ছেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এভাবে প্রত্যেকের মধ্যে আশা জেগেছে।’

এই ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানটি খুবই সূক্ষ্মতা ও সাবধানতার সঙ্গে পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু এই উদ্ধার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন একদিকে যেমন ছিল সাহসী, বিপজ্জনক তেমনি ভীষণ জটিল।

তবে সব সংকটের মধ্যেও প্রতিটি পর্যায়ে সাফল্য এসেছে। এই মানসিক স্বস্তি ধীরে ধীরে সবাইকে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে থাকা উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণ দিয়েছে।

এখানে আরেকটি রাত বিরতি নেয়া হচ্ছে। কেউই তাড়াহুড়া করতে চায় না। চারিদিক থেকে ডুবুরি দলের নিষ্ঠা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রশংসা আসছে। তারা এই চ্যালেঞ্জ নিতে উঠেপড়ে লেগেছে। তবে এখনও ওই ফুটবল কোচসহ কয়েকজন আটকা পড়ে আছে।

১৭ দিন ধরে তারা ভূগর্ভের ওই অন্ধকার জায়গাটিতে আটকে আছে। মঙ্গলবার আমাদের আবারও দম বন্ধ করে থাকতে হবে। এই আশায় যে ততোক্ষণ পর্যন্ত ভেতরের মানুষগুলোকে আমরা অক্ষত অবস্থায় পাব।

তাদেরকে কিভাবে উদ্ধার করা হলো?

৯০ জন দক্ষ ডুবুরির একটি দল, যাদের ৪০জন থাইল্যান্ডের এবং বাকিরা বিভিন্ন দেশের- তারা ওই গুহায় উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে। তারা থাম লুয়াং গুহার ডুবে যাওয়া অন্ধকার সংকীর্ণ পথ দিয়ে কিশোরদের দিক নির্দেশনা দিয়ে প্রবেশমুখে নিয়ে নিয়ে এসেছে।

অভিযানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই কিশোরদের একটি ক্লান্তিকর যাত্রাপথ পাড়ি দিতে হয়। যেটা কিনা অভিজ্ঞ ডুবুরিদের জন্যও ভীষণ ক্লান্তিকর ছিল।

এই অভিযান প্রক্রিয়া জুড়ে ছিল হাঁটা, পানির ওপর দিয়ে চলা, বেয়ে ওঠা, এবং পানিতে ডুব দিয়ে দড়ি ধরে এগিয়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। সব ডুবুরি বাড়তি সতর্কতার জন্য মুখ জুড়ে মাস্ক ব্যবহার করেন। প্রতিটি কিশোরকে দুইজন করে ডুবুরি সাহায্য করেছে। তারা ওই কিশোরের অক্সিজেন সরবরাহের ট্যাঙ্কও বহন করে। তবে গুহার সবচেয়ে জটিল অংশটি হল অর্ধেক পথের ‘টি-জংশন’। যেটা এতোটাই সংকীর্ণ যে তার ভেতর দিয়ে যাওয়ার জন্য ডুবুরিদের অক্সিজেন ট্যাঙ্কটি খুলে ফেলতে হয়েছে। ওই সুড়ঙ্গের বাইরে রয়েছে আরেকটি স্থান যার নাম দেয়া হয়েছে চেম্বার থ্রি। যেটা ডুবুরিদের জন্য ফরোয়ার্ড বেইজে পরিণত হয়।

সেখানে কিশোররা বাকি পথ পাড়ির দেয়ার আগে কিছু সময় জিরিয়ে নিতে পারে। পরে তারা পায়ে হেটে সহজেই প্রবেশমুখে পৌঁছে যায়। সেখান থেকে তাদের চিয়াং রায়ের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া এক প্রাক্তন থাই নৌবাহিনীর ডুবুরির মৃত্যুর ঘটনার মধ্যে দিয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে এই যাত্রা কতোটা বিপজ্জনক ছিল। সামান গুনান নামে ওই ব্যক্তি শুক্রবার গুহার মধ্যে দিয়ে কিশোরদের অক্সিজেন ট্যাঙ্ক দিয়ে ফিরছিলেন। এ সময় পানির ভেতরেই অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান তিনি। তিনি প্রথমে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, পরে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তার সহকর্মীরা জানান, ‘তাদের বন্ধুর এই আত্মত্যাগ তারা বৃথা যেতে দেবে না।’

উদ্ধার অভিযানের প্রধান বলেন, অভিযানের দ্বিতীয় দিনটি প্রথম দিনের তুলনায় আরো মসৃণভাবে পরিচালিত হয়েছে। প্রতিবার ডুবুরিদের দুঘণ্টারও কম সময় লেগেছে। একটি বিশাল পাম্পিং মেশিন দিয়ে গুহার ভেতরের পানির স্তর নিচে নামিয়ে আনা হয়। যা পুরো যাত্রাকে আরো সহজ করে তোলে।

ওই দলটি সেখানে কিভাবে পৌঁছলো?

এক সপ্তাহ আগে এক ব্রিটিশ উদ্ধারকারী ডুবুরি গুহার প্রবেশমুখ থেকে চার কিলোমিটার ভেতরে ওই স্থানটিতে দলটির সন্ধান পায়। ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোররা স্থানীয় ফুটবল দল ওয়াইল্ড বোয়ারসের সদস্য বলে জানা গেছে। দলটি তাদের কোচের সঙ্গে ভ্রমণে বের হতে গিয়ে এই গুহায় প্রবেশ করে এবং ভেতরে আটকা পড়ে। নিখোঁজের নয় দিন পর তাদেরকে গুহার গভীর অন্ধকারে পাওয়া যায়।

ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবল পরিচালনাকারী সংস্থা ফিফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এই কিশোরদের রোববার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মস্কোর ফাইনাল খেলা মাঠে বসিয়ে দেখানো হবে। তবে তারা এই প্রস্তাব গ্রহণ করার মতো ভাল অবস্থায় থাকবে কিনা, সেটা বিবেচনা করা হবে।

কারা ওই কিশোর? তাদের কোচই বা কে?

ওই ফুটবল দলের সদস্য এবং তাদের কোচের কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ক্যাপ্টেন ডুগানপেট প্রমটেপ : বয়স ১৩ বছর, তিনি দলের অত্যন্ত সম্মানিত সদস্য যিনি দলকে উজ্জীবিত রাখতে কাজ করেন। তিনি থাইল্যান্ডের বেশ কয়েকটি পেশাদার ক্লাব থেকে স্কাউটিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আদুল স্যাম-অন : ১৪ বছর বয়স, মিয়ানমার বংশোদ্ভূত, কয়েকটি ভাষায় কথা বলতে পারেন এবং দলের একমাত্র সদস্য যিনি ব্রিটিশ ডুরিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। যারা সর্বপ্রথম তাদের সন্ধান পায়।

পিরাপাত সোমপিয়াংজাই : বয়স ১৭ বছর, যেদিন তারা গুহায় আটকে পড়ে অর্থাৎ ২৩ জুন তার জন্মদিন ছিল। তার জন্মদিন উদযাপনের জন্য সবাই যে খাবারগুলো এনেছিল, সেগুলোই তাদের এতদিন টিকে থাকতে সাহায্য করেছে।

একাপোল চান্টাওং : বয়স ২৫ বছর, দলের সহযোগী কোচ, উদ্ধারকারীদের মতে তিনি সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় আছেন। কারণ তিনি বার বার খাবার খেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং তার পরিবর্তে সেগুলো ওই কিশোরদের খেতে বলেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement