২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গুহায় আটকেপড়া কিশোরদের উদ্ধারে অভিযান শুরু

থাইল্যান্ড
গুহায় আটকেপড়া কিশোরদের উদ্ধারে অভিযান শুরু - ছবি : এএফপি

থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে এক গুহায় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আটকে থাকা ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়েছে।

উদ্ধারকারী দল স্থানীয় সময় সকাল দশটায় গুহায় প্রবেশ করেছে বলে ঘটনাস্থলেই এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন একজন সরকারি কর্মকর্তা।

এর আগে উদ্ধারকারী দল, ডুবুরী, চিকিৎসক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের রেখে বাকী সবাইকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।

গত ২৩ জুন কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ গুহার ভেতরে যাওয়ার পর আর বের হতে পারেননি।

ধারণা করা হয়, গুহায় ঢোকার পরপরই প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয় এবং এতে করে তাদের বাইরে আসার পথ বন্ধ হয়ে যায়।

১৩ জন বিদেশী ডুবুরী ছাড়াও থাই নৌবাহিনীর আরো পাঁচজন এ উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছেন।

১৫ দিন ধরে আটকে থাকা খুদে ফুটবলারদের বেঁচে থাকার আকুতি থাইল্যান্ডকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে। এর আগে তাদের উদ্ধারে কয়েক মাস লাগবে বলা হলেও পরে বলা হয়, উদ্ধারকাজ দ্রুতই শুরু করতে হবে।

উদ্ধারকারীদের কাছে খুদে ফুটবলারদের জীবন বাঁচানোর সুযোগ ক্ষীণ হয়ে এসেছে। কারণ, আসন্ন দিনগুলোতে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এর ফলে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোরালো আশঙ্কা রয়েছে।

গুহার মুখ থেকে চার কিলোমিটার ভেতরে একটি ছোট চেম্বার বা কুঠুরিতে আটকে আছে ১৩ জন। চারপাশে বন্যার পানি এবং অক্সিজেন সরবরাহ কম। বাইরে থেকে অক্সিজেন, খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। এরই মধ্যে অক্সিজেন দিয়ে ফিরে আসার সময় এক ডুবুরি মারা গেছেন।

উদ্ধার অভিযান-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুদে ফুটবলারদের কাছে পৌঁছাতে অনেক সরু সুড়ঙ্গ পাড়ি দিতে হবে ডুবুরিদের। ফেরার পথে উদ্ধারকারীদের প্রত্যেকের কাছে একজন করে শিশু থাকবে। অক্সিজেনের অতিরিক্ত ট্যাঙ্কও সুড়ঙ্গপথে রাখা থাকবে।

সূত্র: বিবিসি, সিএনএন

আরো পড়ুন :

গুহায় আটকে পড়া কিশোররা আবেগঘন চিঠি পাঠাল মা-বাবাকে
দ্য গার্ডিয়ান ও এএফপি, ০৮ জুলাই ২০১৮
থাইল্যান্ডে পানি ভর্তি গুহায় দুই সপ্তাহ ধরে আটকে থাকা কিশোরেরা চিঠির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো তাদের পিতামাতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আবেগঘন ওই চিঠিতে তারা বলেছে, ‘চিন্তা করো না, আমরা সবাই শক্তিশালী।’ হাতে লেখা ওই চিঠিতে তারা মায়ের হাতে ‘ফ্রাইড চিকেন’ খাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

একজন লিখেছে, ‘টিচার, আমাদের অনেক বেশি হোমওয়ার্ক দেবেন না!’ কিশোর ফুটবল দলটির ২৫ বছর বয়সী কোচও গুহায় আটকা পড়ে আছেন। তিনি আলাদা চিঠিতে কিশোরদের পিতা-মাতার কাছে ক্ষমা চেয়ে ‘কিশোরদের খেয়াল রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন’ বলে জানিয়েছেন।

কোচ এক্কাপোল চ্যাংটাওং লেখেন, ‘সব শিশুদের প্রিয় বাবা-মা, এখন তারা সবাই ভালো আছে। উদ্ধারকারী দল আমাদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করছে এবং আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে শিশুদের যত্ন নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। যারা আমাদের সাহায্য করতে এসেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। তিনি আরো লিখেন, ‘সেইসঙ্গে আমি শিশুদের পিতামাতার কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইছি।’

গত সপ্তাহে গুহার ভেতর ফোনের লাইন বসানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে শিশুদের পিতা-মাতাদের চিঠি গুহার ভেতর পৌঁছে দেয়া হয়। যেগুলোর জবাব দেয় তারা। গত ২৩ জুন বিকেলে ফুটবল প্রশিক্ষণের পর কিশোরদের ওই দলটি তাদের কোচের সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী একটি ফরেস্ট পার্কের ভেতর অবস্থিত ‘থাম লুয়াং’ গুহায় প্রবেশ করে। দলের কিশোর খেলোয়াড়দের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছর।

থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ চিয়াই রাইয়ের এ গুহাটিতে তারা যখন প্রবেশ করে তখন এতে পানি ছিল না বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু তারা গুহার ভেতরে প্রবেশের পর প্রবল বৃষ্টি শুরু হয় এবং আকস্মিকভাবেই পানি বেড়ে গিয়ে গুহার কিছু সঙ্কীর্ণ অংশ পুরোপুরি ডুবে যায়। গুহায় প্রবেশের পরদিন থেকেই দলটির খোঁজ শুরু করে উদ্ধারকর্মীরা। যদিও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে উদ্ধার তৎপরতা ভীষণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছিল।

শেষ পর্যন্ত ১০ দিনের মাথায় সোমবার গভীর রাতে যুক্তরাজ্যের দুই ডুবুরি কিশোর দলটি খুঁজে পায়। পানি বাড়তে থাকায় প্রাণ বাঁচাতে তারা গুহার প্রবেশ মুখ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার ভেতরে ছোট একটি পাথুরে তাকের ওপর আশ্রয় নিয়েছিল। দলটিকে বের করে আনতে উদ্ধারকর্মীরা নানাভাবে চেষ্টা করছেন। নৌবাহিনীর ডুবুরি, সামরিক বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবীসহ প্রায় হাজার মানুষ বিস্তৃত এ উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছেন।

এ দিকে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া কর্মীদের সংখ্যার কারণে গুহার ভেতর অক্সিজেনের মাত্রা কমে আসছে বলে জানিয়েছেন চিয়াং রাই প্রদেশের গভর্নর নারোংসাক ওসোত্থানাকর্ন। স্বাভাবিকভাবে বাতাসে সর্বনিম্ন ২১ শতাংশ অক্সিজেনের উপস্থিতি নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু কিশোর দলটি গুহার যে অংশে আটকা পড়ে আছে সেখানে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা কমে ১৫ শতাংশ হয়ে গেছে। গুহার ভেতর রসদ ও অক্সিজেন সরবরাহ করতে গিয়ে এরই মধ্যে একজন ডুবুরির মৃত্যু হয়েছে।

মারা যাওয়া সামান গুনান থাইল্যান্ড নৌবাহিনীর সাবেক ডুবুরি। তিনি স্বেচ্ছায় কিশোর দলটির উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছিলেন। শুক্রবার ভোরের দিকে ৩৮ বছরের গুনান গুহার ভেতর অক্সিজেন সরবরাহ করে ফিরে আসার সময় সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যান; এরপর তার জ্ঞান আর ফেরেনি। কিন্তু অভিজ্ঞ এক ডুবুরিই যদি গুহাটি থেকে নিরাপদে বের হতে না পারেন, তাহলে ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোর ফুটবল দলের সদস্য ও তাদের ২৫ বছর বয়সী কোচ কী করে পারবেন, কিশোরদের কেউ কেউ এমনকি সাঁতারও জানে না। এ ছাড়া গুহা থেকে বের হয়ে আসার পথে অন্তত দুইটি স্থানে পথ এতটাই সঙ্কীর্ণ যে ‘স্কুবা ট্যাঙ্ক’ নিয়ে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়।

পাহাড়ে শতাধিক চিমনি
এএফপি জানায়, থাইল্যান্ডে পাহাড়ের ভেতর আটকেপড়া যুব ফুটবল দলের সদস্যদের উদ্ধারের জন্য পাহাড়ে শতাধিক চিমনি বসিয়েছে উদ্ধার কর্মীরা। উদ্ধারকারী দল নেতা নারংসাক ওসোতানাকন বলেন, কোনো কোনো চিমনি চার শ’ মিটার গভীরে পোঁতা হয়েছে। 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল