১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুভূতি

সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুভূতি - সংগৃহীত

সৌদি আরব সরকার নারীদের গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে। এই সুবাদে সোমবার দেশটির রাস্তায় অনেক নারীকে চালকের আসনে দেখা গেছে। আগে থেকেই এটাকে সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাথমিকভাবে ৯০ লাখ সৌদি নারীকে তাদের গ্রাহক বানানোর পরিকল্পনা করেছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সৌদি আরব বিশ্বের বৃহত্তম গাড়ির বাজারে পরিণত হবে।

এই কারণেই  অনেকে এটাকে দেখছেন অর্থনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক এক পদক্ষেপ হিসেবে। এদিকে সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বাধা দূর হলেও সব বাধা দূর হয়নি এখনও।  এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতিকে নেতিবাচক আখ্যা দিতে শুরু করেছে জনগণের একাংশ। মানবাধিকারকর্মীরাও বলছেন, গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলেও পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থার অধীনে থাকা সৌদি নারীরা এখনও ‘দাসত্বের’ জালে বন্দি।

সৌদি আরবই বিশ্বে একমাত্র দেশ, যেখানে নারীদের জন্য গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ ছিল। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই দীর্ঘদিনের এ নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে কাজ শুরু করেন বর্তমান যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। 

রোববার দিবাগত রাত দেশটির রাজধানী রিয়াদসহ অন্যান্য শহরে মধ্যরাতের পর নারীরা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নেমে পড়েন। অনেক নারীই তাদের অনুভূতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। জীবনের প্রথমবার গাড়ি চালনার ছবিও পোস্ট করেছেন অনেকে। 

টেলিভিশন উপস্থাপক ও লেখক সামের আল মাজরান লিখেছেন, আমি সবসময়ই জানতাম যে এ দিনটি আসবে। কিন্তু এটি খুব তাড়াতাড়ি এসেছে। মনে হচ্ছে হঠাৎ করেই। নিজ শহরে প্রথম গাড়ির চালানোর অনুভূতি প্রকাশে তিনি লিখেছেন, নিজেকে পাখির মতো মনে হচ্ছে।

টেলিভিশন উপস্থাপক সাবিকা-আল-দোসারি; সৌদি নারীদের জন্য ঐতিহাসিক এই মুহূর্তে বাহরাইন সীমান্তে নিজে ‘সেদান’ চালিয়েছেন।গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে তিনি অনুভূতি প্রকাশ করেছেন, ‘দিনটি প্রত্যেক সৌদি নারীর জন্য ঐতিহাসিক।’

সৌদি প্রিন্স আল ওয়ালিদ বিন তালালের মেয়ে পুরো পরিবারের সদস্যদের পেছনের আসনে বসিয়ে গাড়ি চালিয়েছেন। টুইটারে বিশেষ এ মুহূর্তের ভিডিও আপলোড করে তিনি লিখেছেন, ‘এটা অনেক বড় একটা অর্জন। এখন মেয়েরা নিজেদের স্বাধীনতা ভোগ করবে।’  

দেশটির মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, অনেক নারী এখন নির্ভরতা থেকে মুক্ত হবে। অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি চালক অথবা পুরুষ আত্মীয়ের ওপর নির্ভর করতেন। তাদের আর নির্ভরশীল থাকতে হবে না। আবার পারিবারিক ব্যয়ও কমে যাবে। 

সৌদির নীতি-নির্ধারক সংস্থা আরব ফাউন্ডেশনের ঊর্ধ্বতন বিশ্লেষক নাজাহ আল-ওতাইবি বলেন, এটা মুক্তি। সৌদি নারীরা এতদিন মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এ সিদ্ধান্ত তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে যেতে ভূমিকা রাখবে।

চলতি মাসে নারীদের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু শুরু করে সৌদি আরব। রিয়াদ ও জেদ্দায় চালু হয়েছে নারীদের ড্রাইভিং শিক্ষার অনেক প্রতিষ্ঠানও। 

কন্সালট্যান্সি প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটার হাউস কোপার্স বলছে, ২০২০ সালের মধ্যে ৩০ লাখ নারী ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন ও গাড়িও চালাতে পারবেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ সিদ্ধান্তের কারণে নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে জাতীয় অর্থনীতিতে ৯০ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement