২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিশ্ববাজারে প্রবেশ করতে উচ্চাশা মাহাথিরের

বিশ্ববাজারে প্রবেশ করতে উচ্চাশা মাহাথিরের - সংগৃহীত

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ একটি জাতীয় গাড়ি প্রকল্প চালুর আভাস দিয়েছেন। যদিও কয়েক দশক আগে তার ক্ষমতায় থাকাকালীন অনুরূপ একটি প্রকল্প বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। 

গত মাসে নির্বাচনে বিজয়ের পর প্রথমবারের মতো বিদেশ সফরে টোকিও গিয়ে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমাদের জাতীয় গাড়ির ধারণায় ফিরে যেতে হবে। আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা হচ্ছে আরো একটি জাতীয় গাড়ি প্রকল্প শুরু করা সম্ভবত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমাদের কিছু অংশীদারদের সাহায্যে এটা করা যেতে পারে। আমরা বিশ্ববাজারে প্রবেশ করতে চাই।

মালয়েশিয়ায় জাতীয় গাড়ি প্রকল্পের একটি বিপজ্জনক ইতিহাস আছে। দেশটিতে ১৯৮৩ সালে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের আমলে উচ্চাকাঙ্ক্ষী জাতীয় শিল্পায়ন পরিকল্পনার আওতায় প্রোটন গাড়ি নির্মাণ শুরু হয়। তবে ব্র্যান্ডটি বৈচিত্র্যহীন ও নিম্নমানের জন্য দুর্নাম কুড়ায় এবং বিদেশী মডেলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারায়।গত বছর প্রোটনের প্যারেন্ট কোম্পানি মালয়েশিয়ান কনগ্লোমারেট ডিআরবি-হাইকম চীনের গাড়ি জায়ান্ট গিলির কাছে ৪৯ দশমিক ৯ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেয়। চীনা কোম্পানিটি আবার প্রোটনের ব্যবসা পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে।

সোমবার মাহাথির অবশ্য এ ইতিহাসকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, মালয়েশিয়া অন্যান্য দেশ থেকে সাহায্য আশা করছে, যাতে আমরা আবারো নিজের গাড়ি উৎপাদন করতে পারে। দুই দশক ধরে জাপানের মিত্সুবিশি মোটরসের সহায়তার ফলে মালয়েশিয়া গাড়ি ডিজাইন ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষতা ও প্রযুক্তি রপ্ত করেছে। তবে গাড়ির কিছু যন্ত্রাংশ আছে, যেগুলো নির্মাণ করা খুবই ব্যয়সাধ্য। আমরা চাইব, সেই সব দামি যন্ত্রাংশ অন্যান্য দেশ থেকে আনার এবং অবশ্যই এসব দেশের মধ্যে আছে জাপান।

তবে মালয়েশিয়ার আবারো জাতীয় গাড়ি উৎপাদনের এ পরিকল্পটি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছেন না।

জনগণের কাছ থেকে চাঁদা তুলে বৈদেশিক ঋণ শোধ করছে মাহাথির!

চাঁদা তুলে মালয়েশিয়ার ঋণ শোধ করছে সেখানকার জনগণ। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের ডাকে সাড়া দিয়ে এ কাজে শামিল হলেন তারা। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ২০ লাখ ডলার গণতহবিল গঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৈদেশিক ঋণ শোধে ২৭ বছর বয়সী এক মালয়েশীয় দেশপ্রেমিক নাগরিকের হাত ধরে মালয়েশিয়া সরকারের এ উদ্যোগ শুরু হয়। প্রথমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তহবিল গঠন শুরু করেন সেই ব্যক্তি।

এরপরই দেশটির অর্থমন্ত্রী লিম গুয়ান ইং বলেন, মালয়েশিয়ার বৈদেশিক ঋণের বোঝা কমাতে দেশের নাগরিকেরা তাদের আয় থেকে অর্থ দিতে চায়। এরপর গণতহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তিনি।

১ ট্রিলিয়ন রিঙ্গিতেরও বেশি ঋণ রয়েছে মালয়েশিয়ার। দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর গত ২১ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথমবার আলোচনায় এ তথ্য জানান মাহাথির মোহাম্মদ।

দেশের এ অবস্থার জন্য দুর্নীতি মামলায় তদন্তাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের নেতৃত্বে থাকা প্রশাসনকে দায়ি করেছেন তিনি। যাইহোক, বৈদেশিক ঋণ শোধে মালয়েশিয়ার এ ‘গণতহবিল মডেল’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে।

মাহাথির মোহাম্মদ আসলেই অনন্য, আসলেই অসাধারণ। ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ ৯২ বছর বয়সেও ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরকারি দায়িত্ব নিয়ে। এতে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ঘুম না হওয়ায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন বলে উদ্বিগ্ন তার স্ত্রী ড. সিতি হাসমাহ।

ড. সিতি ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, মাহাথির যখন ঘুমাতে যাওয়ার কথা সে সময়ও তিনি সরকারি ডকুমেন্ট নিয়ে বসে থাকছেন। এক রাতে তাকে আমি ভোর ৪/৫টা পর্যন্ত এমন ডকুমেন্ট যাচাই করতে দেখেছি। তিনি ওই রাতে ২০০ ডকুমেন্ট যাচাই করেছেন। আবার সকাল ৭টায় তিনি অফিসে গিয়ে হাজির। এ জন্য তার স্বাস্থ্য নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।

কর্মব্যস্ত থাকতে পারেন বলেই মাহাথির অনন্য। কাজে ডুবে থাকেন বলে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে স্বজনেরা দুশ্চিন্তা করেন। টাইম ম্যাগাজিন একবার তার অফিসে আসার সময় রেকর্ড করেছিল। পরপর পাঁচ দিন তার অফিসে প্রবেশের সময় ছিল সকাল ৭:৫৭, ৭:৫৬, ৭:৫৭, ৭:৫৯, ৭:৫৭। কর্মব্যস্ত মাহাথিরের জীবনের স‍ার্থকতা তিনি দেশ ও জাতিকে কিছু দিতে পেরেছেন;  অর্থবহ কাজে ব্যস্ত থেকে সময়কে কাজে লাগাতে পেরেই তিনি সুখী।

মাহাথির বলেছেন- আমাদের ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। পেছনের আবর্জনা ঘাঁটার সময় আমাদের হাতে নেই। আমি কোনো প্রতিশোধ নিতে চাই না। জনগণকে নির্যাতন করার জন্য তৈরি করা কোনো আইন রাখা হবে না। আমরা সংবিধান সমুন্নত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই। আইনের শাসনমতে দেশ চালাতে চাই।

তিনি আরো বলেছেন- খান কম, অনুশীলন করুন বেশি, বই পড়ুন বেশি। প্রত্যেকের নিজ পরিবার একটি নিরাপদ জায়গা - যা আমাদের এই জটিল সমাজে স্থিরতা আনে। সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হলে ধর্ম কখনো অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য বাধা হতে পারে না। চিকিৎসা বিদ্যায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকের জন্য রাজনীতি একটি ভালো পেশা। একজন ডাক্তার রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেন, স্বাস্থ্যগত ইতিহাস রেকর্ড করেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন, ল্যাব পরীক্ষা করেন এবং চূড়ান্তভাবে রোগ নির্ণয় করেন। এ প্রক্রিয়াটি রাজনীতির মতই।

মালয়েশিয়ার ঘাড়ে লক্ষাধিক কোটি রিঙ্গিত ঋণের বোঝা : মাহাথির
রয়টার্স

মাহাথির মোহাম্মদ জানিয়েছেন, দেশটির ঋণের পরিমাণ এক লাখ কোটি রিঙ্গিত ছাড়িয়ে গেছে, যা ২৫ হাজার কোটি ডলারের চেয়েও বেশি। মাহাথির ওই পরিমাণ রাষ্ট্রীয় ঋণের জন্য পরাজিত নাজিব রাজাক সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহারকে দায়ী করেছেন।

বিগত সরকারের প্রধান নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত চলমান। রাষ্ট্রীয় দেনার পরিমাণ নিয়ে অভিযোগ করলেও মাহাথির ভর্তুকি দেয়া ও জিএসটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নিজের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সামনে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বলেছেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যে ঋণের পরিমাণ এক লাখ কোটি রিঙ্গিত ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের আগে কখনো এ রকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়নি। এর আগে ঋণের সীমা কখনো ৩০ হাজার রিঙ্গিত ছাড়ায়নি।’

ঋণের কথা স্বীকার করলেও নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী মাহাথির বিশালসংখ্যক পণ্যের ওপর থেকে ‘গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স’ (জিএসটি) বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী জুন থেকে অনেকগুলো পণ্য ও সেবার জিএসটি শূন্য করে দেয়া হবে। এর পাশাপাশি মাহাথির জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দেয়ার ওয়াদা করেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, নিজের নির্বাচনী জোট ছাড়াও নাগরিকদের মধ্য থেকে জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির যে অভিযোগ রয়েছে তার সমাধানে ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে মাহাথিরকে।

২২ বছর মালয়েশিয়ার নেতৃত্ব দেয়া মাহাথির মোহাম্মদ দেশের ঋণ নিয়ে বিগত সরকারকে দায়ী করলেও তার বর্তমান অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে সতর্ক মত দিয়েছে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি মুডিস। তারা মনে করে উপযুক্ত নীতির সাথে সমন্বয় না করলে বরং মাহাথিরের সিদ্ধান্ত রাজস্ব ঘাটতি বাড়াবে। বিগত নাজিব রাজাকের সরকার জিএসটি থেকে ২০১৮ সালে চার হাজার ৩৮০ কোটি রিঙ্গিত (এক হাজার ১০৫ কোটি ডলার) আয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা মোট রাজস্বের ১৮ শতাংশ। মাহাথির সেটি বাতিল করে দিয়েছেন। আবার জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে তেলের ওপর যে ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি তাতেও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চাপ বাড়বে সরকারের ওপর।

গত সপ্তাহেই মাহাথির মন্তব্য করেছিলেন, দেশের অর্থনীতির বিষয়ে দেয়া বহু তথ্যই খুব সম্ভব অসত্য। উল্লেখ্য, নাজিব ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই সরকারের ঋণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তখন নাজিব জানিয়েছিলেন, ২০১৭ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপির ৫০.৯ শতাংশ, যা সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ সীমা ৫৫ শতাংশের চেয়ে কম। জিএসটি বাতিল করে দিলেও তার স্থানে ‘সেলস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স’ (এসএসটি) পুনর্বহাল করার কথা মাহাথির সরকারের।

মাহাথির বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী, আমরা এই বিপর্যয় মোকাবেলা করতে পারব। কিন্তু সেজন্য দরকার দক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য সরকারি কর্মকর্তা। প্রশাসক হিসেবে আইনের শাসনকে সবার আগে স্থান দিতে হবে এবং যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের অবশ্যই কর্তব্য পালন করতে হবে যাতে মালয়েশিয়া এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে পারে। দেশের সবাই এক সাথে কাজ করলে মালয়েশিয়ার মুক্তি পাওয়া ও আবার সমীহের সাথে গণ্য হওয়ার জন্য খুব বেশি দিন লাগবে না।’
 


আরো সংবাদ



premium cement