২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সিঙ্গাপুরেই কেন ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠক?

এই সেন্তোসা দ্বীপেই অনুষ্ঠিত হবে ট্রাম্প-কিমের শতাব্দীর সেরা আলোচিত বৈঠক -

বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ একটি দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বেশ দৃঢ়।  আবার উত্তর কোরিয়ার সাথেও রয়েছে  চমৎকার কূটনৈতিক সম্পর্ক, বিশ্বের অল্প যে কয়েকটি দেশের সাখে উত্তর কোরিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক  আছে সিঙ্গাপুর তার অন্যতম।

যুক্তরাজ্যের সাবেক উপনিবেশ সিঙ্গাপুর অত্যন্ত সুশৃঙ্খল একটি দেশ। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশটিতে কঠোর হাতে আইনের বাস্তবায়ন করা হয় এবং সেখানে অকারণে রসিকতার কোনো সুযোগও নেই। সিঙ্গাপুর পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে ‘চুইং গাম’ নিষিদ্ধ। প্লেবয়’এর মত অ্যাডাল্ট ম্যাগাজিনের প্রবেশাধিকারও সেখানে নেই। যেকারণে দেশটিকে ‘ন্যানি স্টেট’ বলা হয়। অর্থাৎ নাগরিকদের জীবনাচরণে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ তুলনামূলকভাবে  বেশি।

সেখানে অপরাধের শাস্তি অত্যন্ত কঠোর। দেশটিতে লুটপাট ও ভাংচুরের জন্য বেত্রাঘাতের শাস্তি আছে, মাদক পাচারকারীদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সিঙ্গাপুরে জনবিক্ষোভ খুবই বিরল। সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক ইউজেন তান বলেন, নিশ্চিতভাবেই সিঙ্গাপুর অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এবং নিরাপদ একটি দেশ। দেশটি যেন দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সুইজারল্যান্ড।

আর একারণেই এরকম একটি সংবেদনশীল এবং কূটনৈতিক আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর কোরিয়া উভয় দেশের কাছেই সিঙ্গাপুরকে আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার কঠোর বাস্তবায়নের কারণে ট্রাম্প ও কিমকে বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে কিংবা সড়কে বিক্ষোভ মোকাবেল করতে হবে না। যে কারণে তারা নিজেদের আলোচনায় অধিক মনযোগ দিতে পারবেন।

ট্রাম্প-কিম সম্মেলনের খবর সংগ্রহ করতে সারা বিশ্ব থেকে প্রায় তিন হাজার সাংবাদিক সিঙ্গাপুরে যাবেন। সিঙ্গাপুরের অভিজাত সাংরি-লা হোটেলে উঠেছেন ট্রাম্প। হোটেলটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারি অস্ত্রসজ্জিত ‘গোর্খা’ সেনাদের আগে থেকেই সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। সেই উপনিবেশ আমল থেকেই নেপালের সেনাবাহিনীর সদস্যরা সিঙ্গাপুর পুলিশের বিশেষ বাহিনীর সদস্য হিসেবে কাজ করেন, যারা ‘গোর্খা’ সেনা নামে পরিচিত।

আরো পড়ুন....

ক্যাপেলা হোটেল : যা আছে এর অন্দরমহলে

হোটেল কেবল ঘুমের জায়গা নয়, সেখানে প্রায়ই আন্তর্জাতিক সভা ও সম্মেলনের জন্য নিরপেক্ষ স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটা অবশ্যই সিঙ্গাপুরের ক্যাপেলা হোটেলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এখানে আগামী ১২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যকার আলোচনার স্থান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। আর এ কারণেই সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা দ্বীপের পাঁচ তারকা ক্যাপেলা হোটেলটি এখন আন্তর্জাতিক লাইমলাইটে।
এখানে যে বৈঠক হবে তা নিশ্চিত করেছেন হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স।

কেমন স্থান ক্যাপেলা হোটেল?

ত্রিশ একর জায়গার ওপর নির্মিত ক্যাপেলা হোটেলটি মূলত ব্রিটিশ উপনিবেশিক আমলে তৈরি বেশ কয়েকটি ভবন নিয়ে গড়ে উঠেছে। এই ভবনগুলো সংস্কার করে বানানো হয়েছে হোটেলটি। অত্যন্ত বিলাসবহুল হোটেলটি কাস্টামারদের জন্য ব্যয় বহুলও। প্রতিটি রুমের সর্বনিম্ন ভাড়া প্রতিদিন বাংলাদেশী টাকায় ৪০ হাজার। আর তিন বেড রুমের প্রতিটি স্যুটের ভাড়া প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা প্রতিদিন। ট্রাম্প-কিম বৈঠক উপলক্ষে পুরো হোটেলটিই বুকিং দিয়েছে সিঙ্গাপুর সরকার।

সান্তোষ দ্বীপটি সিঙ্গাপুর এর দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত। মালয় ভাষায় সান্তোষ-এর অর্থ শান্তি। যাইহোক, সান্তোষ দ্বীপের ক্যাপেলা হোটেলটি কেবল তার অবস্থানের কারণে কূটনীতির জন্য উপযুক্ত স্থান নয়, এটি বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল, যেখানে ১১২টি কক্ষ রয়েছে, ক্যাপেলা হোটেলটিতে সিঙ্গাপুরের প্রাচ্যে পাশ্চাত্যের মিলনের ধারণাটিই ফুটে ওঠেছে।

ক্যাপেলা হোটেল ভবনটির বর্হিভাগে রয়েছে উপনিবেশিক আমলের ছাপ, কিন্তু এর অভ্যন্তরীণ অত্যাধুনিক, রয়েছে স্যানজি পুল। বিখ্যাত ইন্দোনেশিয়ান ডিজাইনার জয়া ইব্রাহিম এর ডিজাইন করেছেন। সিঙ্গাপুরের বেশিরভাগ হোটেলের মতো এর চারপাশেও রয়েছে সবুজ বৃক্ষ।

হোটেলের রুমগুলো দক্ষিণ চীন সাগরের দিকে মুখ করা অর্থাৎ হোটেলটির সামনের দিকটি দক্ষিণ চীন সাগর দিকে, হোটেল খেকেই দেখতে পাওয়া যায় তেল ট্যাঙ্কার ও আরো দূরে দেখতে পাওয়া যায় বিশাল মালবাহী জাহাজ।

শহর থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের ট্যাক্সির পথের দুরত্বে অবস্থিত হোটেলটি সিঙ্গাপুরবাসীর কাছে ছুটির দিন কাটানোর জন্য খুবই চকৎকার একটি স্থান।

একটি রাজনৈতিক হট স্পট হিসাবে হোটেলের অবস্থান খুবই যথাযথ, ক্যাপেলায় দুটি রাষ্ট্রপতি স্যুট আছে। এক, ঔপনিবেশিক ধাচের, যেটির বাইরে প্রথাগত ব্রিটিশ শৈলী দেখতে পাওয়া যায়। আর অভ্যন্তরীণ এশিয়ান শিল্প ও গৃহসজ্জার মিশেলে তৈরি।

উপনিবেশিক ধাঁচের স্যুটটি একটি স্বতন্ত্র সম্পত্তি যেখানে অধিকাংশ হোটেল অতিথি প্রবেশ করতে পারে না। এটি নিরাপদ ও ব্যক্তিগত। দুজন বিশ্ব নেতার মধ্যে কথোপকথন বা বৈঠক করার জন্য যে জায়গাটি ব্যবহার করেন এটি সে রকম একটি ।

মৃত্যুপুরী : যে দ্বীপে বৈঠক করবেন ট্রাম্প-কিম
আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের ঐতিহাসিক বৈঠক। সারা বিশ্বই অপেক্ষায় আছে এই বৈঠকের। বৈঠকের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। কিন্তু দেশটির কোথায় দুই নেতা বৈঠকে মিলিত হবে সেটি নিয়ে এতদিন কিছু বলা হয়নি।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরের ছোট্ট দ্বীপ সেন্তোসায় দুই নেতার বৈঠকের ভেন্যু ঠিক করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার আরো একবার নিশ্চয়তা দিয়েছেন বৈঠকের বিষয়ে। সাংবাদিকদের তিনি বলেছন, সব কিছু ঠিকভাবে এগিয়ে চলছে। আগামী কয়েকটা দিন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুই পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন দিক থেকে সম্পর্ক গড়ে উঠছে। ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে বৈঠকের বিষয়ে।

এদিকে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স টুইটারে বলেছেন, সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা দ্বীপের পাঁচ তারকা ক্যাপেলা হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহাসিক বৈঠক।

ত্রিশ একর জায়গার ওপর নির্মিত ক্যাপেলা হোটেলটি মূলত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের ভবনেই গড়ে উঠেছে। এই ভবনগুলো সংস্কার করে বানানো হয়েছে হোটেলটি। সেখানে এক সময় ছিলো ব্রিটিশ সেনাদের অফিসার্স মেস। মোট ১১২টি রুম ও কয়েকটি ভিলা রয়েছে হোটেলটিতে।

ব্রিটিশ স্থপতি নরম্যান ফস্টার হোটেলটির নকশা করেছেন। অত্যন্ত বিলাসবহুল হোটেলটি কাস্টামারদের জন্য ব্যয় বহুলও। প্রতিটি রুমের সর্বনিম্ন ভাড়া প্রতিদিন বাংলাদেশী টাকায় ৪০ হাজার। আর তিন বেড ‍রুমের প্রতিটি স্যুটের ভাড়া প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা প্রতিদিনি। ট্রাম্প-কিম বৈঠক উপলক্ষে পুরো হোটেলটিই বুকিং দিয়েছে সিঙ্গাপুর সরকার।

হোটেলটিতে ইতোপূর্বে অবস্থান করেছেন ম্যাডোনা ও ল্যাডি গাগার মতো তারকারা।

সেন্তোসা দ্বীপটি কেমন
যে ৬৩টি ছোট্ট দ্বীপ রয়েছে সিঙ্গাপুরে তার একটি সেন্তোসা। ৫০০ হেক্টর আয়তনের দ্বীপটি মূল ভূখণ্ড থেকে খুব বেশি দূরে নয়। দ্বীপটির জনসংখ্যার অধিকাংশ মালয়। আছে চীনা ও বুগিস। বুগিস বলতে বোঝায় ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপ থেকে আসা লোকদের।

সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বিলাসবহুল এলাকা সেন্তোসা। পর্যটন এলাকা হিসেবে অত্যাধুনিক সব সুযোগ সুবিধা রয়েছে সেখানে। বিলাসবহুল রিসোর্ট, বেসরকারি নৌ বহর, উন্নত মানের গলফ কোর্স- কী নেই সেখানে।

পর্যটকদের জন্য বিলাসবহুল সব থিম পার্ক, রাইড আর অ্যাডভেঞ্জারের নানা আয়োজন রয়েছে সেখানে। অনেকের কাছেই জায়গাটি ‘স্টেট অব ফান’ বা বিনোদন রাজ্য হিসেবে পরিচিত। আছে একটি ইউনিভার্সাল থিম পার্ক, একটি ওয়াটার পার্ক, বিশ্বমানের ক্যাসিনো।

সিঙ্গাপুরের এই দ্বীপটিকে বলা যায় ধনীদের স্বর্গরাজ্য। দেশটির সবচেয়ে অভিজাত আবাসিক এলাকাটি এই দ্বীপে। সেন্তোসা কোভ নামের সেই আবাসিক এলাকাটির প্রতিটি বাড়ি নির্মিত হয়েছে কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে। দৃষ্টিনন্দন আর বিলাসিতর সব উপকরণ রয়েছে সেখানে। ধনী নাগরিকদের ব্যক্তিগত ইয়ট বা প্রমোদ তরীগুলোর জন্য রয়েছে আলাদা বন্দর। সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বিলাসবহুল হোটেল, বিশ্বমানের অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেখানে।

 


আরো সংবাদ



premium cement