২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঐতিহাসিক বৈঠক : সিঙ্গাপুর পৌঁছেছেন কিম

সিঙ্গাপুরে কিম জং উন - ছবি : এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ঐতিহাসিক বৈঠকে যোগ দিতে সিঙ্গাপুর পৌঁছছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় রোববার দুপুরে কিমকে বহনকারী বিমানটি সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমান বন্দরে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান।
আগামী ১২ জুন সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা দ্বীপের পাঁচ তারকা ক্যাপেলা হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহাসিক বৈঠক। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সিঙ্গাপুরের পথে রয়েছেন। কানাডায় জি-৭ সম্মেলন শেষ করে তিনি উড়াল দিয়েছেন সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে। রোববার স্থানীয় সময় রাতে তার সিঙ্গাপুর পৌঁছানের কথা।
অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এবং সুবিধাজনক স্থান বিবেচনায় বৈঠকের স্থান হিসেবে সিঙ্গাপুরকে বেছে নেওয়া হয়। পৃথিবীর অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে সিঙ্গাপুরে একইসঙ্গে উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস রয়েছে।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক স্ট্রেইটস টাইমসের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এয়ার চায়না ৭৪৭ বিমানে করে কিম সিঙ্গাপুরে পৌঁছান। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক টুইটে কিমের পৌঁছানোর খবর নিশ্চিত করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করবেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লী সেইন লুং। রোববার কিমের সাথে ও সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।
দুই রাষ্ট্রের দুটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল কয়েকদিন আগেই সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলছে বৈঠকটির প্রস্তুতি।

মৃত্যুপুরী : যে দ্বীপে বৈঠক করবেন ট্রাম্প-কিম
আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের ঐতিহাসিক বৈঠক। সারা বিশ্বই অপেক্ষায় আছে এই বৈঠকের। বৈঠকের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। কিন্তু দেশটির কোথায় দুই নেতা বৈঠকে মিলিত হবে সেটি নিয়ে এতদিন কিছু বলা হয়নি।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরের ছোট্ট দ্বীপ সেন্তোসায় দুই নেতার বৈঠকের ভেন্যু ঠিক করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার আরো একবার নিশ্চয়তা দিয়েছেন বৈঠকের বিষয়ে। সাংবাদিকদের তিনি বলেছন, সব কিছু ঠিকভাবে এগিয়ে চলছে। আগামী কয়েকটা দিন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুই পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন দিক থেকে সম্পর্ক গড়ে উঠছে। ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে বৈঠকের বিষয়ে।

এদিকে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স টুইটারে বলেছেন, সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা দ্বীপের পাঁচ তারকা ক্যাপেলা হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহাসিক বৈঠক।

ত্রিশ একর জায়গার ওপর নির্মিত ক্যাপেলা হোটেলটি মূলত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের ভবনেই গড়ে উঠেছে। এই ভবনগুলো সংস্কার করে বানানো হয়েছে হোটেলটি। সেখানে এক সময় ছিলো ব্রিটিশ সেনাদের অফিসার্স মেস। মোট ১১২টি রুম ও কয়েকটি ভিলা রয়েছে হোটেলটিতে। 

ব্রিটিশ স্থপতি নরম্যান ফস্টার হোটেলটির নকশা করেছেন। অত্যন্ত বিলাসবহুল হোটেলটি কাস্টামারদের জন্য ব্যয় বহুলও। প্রতিটি রুমের সর্বনিম্ন ভাড়া প্রতিদিন বাংলাদেশী টাকায় ৪০ হাজার। আর তিন বেড ‍রুমের প্রতিটি স্যুটের ভাড়া প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা প্রতিদিনি। ট্রাম্প-কিম বৈঠক উপলক্ষে পুরো হোটেলটিই বুকিং দিয়েছে সিঙ্গাপুর সরকার।

হোটেলটিতে ইতোপূর্বে অবস্থান করেছেন ম্যাডোনা ও ল্যাডি গাগার মতো তারকারা।

সেন্তোসা দ্বীপটি কেমন
যে ৬৩টি ছোট্ট দ্বীপ রয়েছে সিঙ্গাপুরে তার একটি সেন্তোসা। ৫০০ হেক্টর আয়তনের দ্বীপটি মূল ভূখণ্ড থেকে খুব বেশি দূরে নয়। দ্বীপটির জনসংখ্যার অধিকাংশ মালয়। আছে চীনা ও বুগিস। বুগিস বলতে বোঝায় ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপ থেকে আসা লোকদের।

সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বিলাসবহুল এলাকা সেন্তোসা। পর্যটন এলাকা হিসেবে অত্যাধুনিক সব সুযোগ সুবিধা রয়েছে সেখানে। বিলাসবহুল রিসোর্ট, বেসরকারি নৌ বহর, উন্নত মানের গলফ কোর্স- কী নেই সেখানে।

পর্যটকদের জন্য বিলাসবহুল সব থিম পার্ক, রাইড আর অ্যাডভেঞ্জারের নানা আয়োজন রয়েছে সেখানে। অনেকের কাছেই জায়গাটি ‘স্টেট অব ফান’ বা বিনোদন রাজ্য হিসেবে পরিচিত। আছে একটি ইউনিভার্সাল থিম পার্ক, একটি ওয়াটার পার্ক, বিশ্বমানের ক্যাসিনো।

সিঙ্গাপুরের এই দ্বীপটিকে বলা যায় ধনীদের স্বর্গরাজ্য। দেশটির সবচেয়ে অভিজাত আবাসিক এলাকাটি এই দ্বীপে। সেন্তোসা কোভ নামের সেই আবাসিক এলাকাটির প্রতিটি বাড়ি নির্মিত হয়েছে কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে। দৃষ্টিনন্দন আর বিলাসিতর সব উপকরণ রয়েছে সেখানে। ধনী নাগরিকদের ব্যক্তিগত ইয়ট বা প্রমোদ তরীগুলোর জন্য রয়েছে আলাদা বন্দর। সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বিলাসবহুল হোটেল, বিশ্বমানের অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেখানে।

সেন্তোসায় কেন বৈঠক
সেন্তোসা দ্বীপটিকে কেন ট্রাম্প-কিম বৈঠকের ভেন্যু হিসেবে বাছাই করা হলো সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তবে মনে করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কারণ নিরাপত্তা। সিঙ্গাপুরের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপটিতে চারদিক থেকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা অনেকটাই সহজ।

দ্বীপটিতে যাতায়াতের জন্য রয়েছে একটি ক্যাবল কার রুট, একটি পথচারী রাস্তা, একটি যানবাহন টানেল ও একটি এক লাইনের রেল যোগাযোগ(মনোরেল)। ইচ্ছে করলেই রুট গুলো বন্ধ করে দিয়ে দ্বীপটিকে সাধারণের প্রবেশ বন্ধ করা যায়।

এছাড় দ্বীপটির আকর্ষণীয় গলফ কোর্সগুলোও একটি কারণ হতে পারে। বিশ্বনেতারা সাধারণত গলফ খেলায় অভ্যস্ত। আর ট্রাম্প তো প্রায় নিয়মিতই গলফ খেলেন। এটিও দ্বীপটিকে বেছে নেয়ার কারণ হতে পারে।

অন্ধকার অতীত
এখন অত্যন্ত চকমকে আর আলো ঝলমল একটি জায়াগ হলেও সেন্তোসা দ্বীপের রয়েছে অন্ধকার একটি অতীত। ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় রচিত হয়েছে এখানে। সে অধ্যায়ের পাতা জুড়ে হত্যা আর রক্তপাতের কাহিনি।

১৯ শতকে ব্রিটিশদের অন্যতম বানিজ্য ঘাঁটি ছিলো সিঙ্গাপুর। এখান থেকেই ভারত ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য সমন্বয় করতো ব্রিটিশ বনিকরা। অবশ্য ব্রিটিশ শাসনের আগেও বাণিজ্য স্পট হিসেবে সিঙ্গাপুরের খ্যাতি ছিলো। বনিকরা এখানে সমবেত হতেন ব্যবসার জন্য। জলদস্যু অধ্যুষিত এলাকা হিসেবেও বিখ্যাত ছিলো জায়গাটি।

সে সময় সেন্তোসার নাম ছিলো পালাউ ব্লাঙ্কাং মাতি অর্থাৎ মৃত্যুপুরী। জলদস্যুদের সহিংসতার কারণেই দ্বীপটির এমন নাম ছিলো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালে ব্রিটিশদের পরাজিত করে জাপানি সেনারা সিঙ্গাপুর দখল করে। তার দ্বীপটির নাম দেয় সিয়োনাম, যার অর্থ দক্ষিণের আলো। পরবর্তী কয়েক বছরে জাপানি সৈনাদের বিরোধীতা করার কারণে দ্বীপটির জনসংখ্যার বিরাট একটি অংশকে হত্যা করা হয় নির্মমভাবে। হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া লোকদের বেশির ভাগই ছিলো চীনা। সৈকতে মেশিনগানের গুলিতে ঝাঝড়া করে লাশ ছুড়ে ফেলা হতো সমুদ্রে।

গনহত্যার সেই সব স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো সেন্তোসা দ্বীপের সৈকত, যার খুব কাছেই এখন দাড়িয়ে আছে ফাইভ স্টার হোটেল ক্যাপেলা। যেখানে বৈঠকে বসবেন ট্রাম্প-কিম।

সেন্তোসাকে অবশ্য বন্দী শিবির হিসেবেও ব্যবহার করতো জাপানি সেনারা। মিত্র বাহিনীর অন্তত ৪০০ সেনা বন্দী ছিলো দ্বীপটিতে।


আরো সংবাদ



premium cement
শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কারাগারে কয়েদির মৃত্যু উজ্জ্বল হত্যার বিচার দাবিতে সরিষাবাড়ীতে মানববন্ধন পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ২১ খাবারের সন্ধানে বসতবাড়িতে হরিণ, মহামায়ায় অবমুক্ত সিঙ্গাপুর প্রবাসী ফিরোজ মাহমুদের লাশ দেশে ফিরেছে ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের মৃত্যু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সব ধর্মের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে: ড. সুকোমল বড়ুয়া

সকল