২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মালয়েশিয়ার শীর্ষ তিন নেতার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ, যত সমালোচনা

মালয়েশিয়ার শীর্ষ তিন নেতার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ, যত সমালোচনা - সংগৃহীত

মালয়েশিয়ায় এ মুহূর্তে তিন নেতা। একজন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ এবং আরেকজন সদ্য কারামুক্ত প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।

বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ক্ষমতাচ্যুত করেন অন্য দুইজন অর্থাৎ ড. মাহাথির মোহাম্মদ ও আনোয়ার ইব্রাহিম। এতে ৬৩ বছরের একদলীয় শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।

তিনজনের ব্যাপারেই একটি ব্যাপারে খুব মিল তা হচ্ছে- তিনজনের বিরুদ্ধেই রয়েছে বড় বড় অভিযোগ।

নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ দুর্নীতি। নির্বাচনে পরাজয়ের পরই নাজিবের মালয়েশিয়া ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় এবং পুলিশ গত সপ্তাহে তল্লাশি চালিয়ে তার বাড়ি এবং অন্যান্য স্থান থেকে বিপুল অর্থ, অলঙ্কার ও বিলাস দ্রব্য জব্দ করেছে। নাজিবের বিরুদ্ধে একটি রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল থেকে ২০১৫ সালে ৭০ কোটি মার্কিন ডলার সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। 

জেল থেকে মুক্তি পাওয়া নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম, তিনি ছিলেন মাহাথিরের অর্থমন্ত্রী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সমকামিতা ও দুর্নীতির। সমকামিতার অভিযোগ এনে আনোয়ারকে জেলে ঢুকানো হয়। আনোয়ার বরাবরই তার বিরুদ্ধে সমকামের অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছিলেন। ২০০৮ সালে গ্রেফতার করার সময় অভিযোগ ছিল তিনি তার পুরুষ কর্মীদের একজনকে যৌন নির্যাতন করেন। 

মাহাথিরের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ছিল একনায়কত্ব ও ‘ক্রোনি ক্যাপিটেলিজমের’। ইসলামপন্থী আনোয়ার থেকে দূরে থাকতে এবং নিজের পশ্চিমামুখী রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখতে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করেছিলেন মাহাথির। সৎ ও অত্যন্ত ধার্মিক হিসেবে পরিচিত আনোয়ারের বিরুদ্ধে এমন হাস্যকর অভিযোগ আনার কারণে সমালোচিত হয় তৎকালীন সরকার। 

দেশের অনেক মানুষই মাহাথিরকে ‘বর্ণবাদী’ হিসেবে দেখেন। বিশেষ করে, নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকেরা তাঁকে খুব একটা পছন্দ করেন না। মালয় সম্প্রদায়ের প্রতি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানোর পাশাপাশি নৃতাত্ত্বিক বৈষম্যের সূচনাও করেছিলেন মাহাথির। মাহাথির মোহাম্মদের বিরুদ্ধে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের গুরুতর অভিযোগ আছে। তাঁর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানো সব ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। 

তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ড. মাহাথিরই ক্রমাগতভাবে ২২ বছর ৬-৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে মালয়েশিয়াকে পূর্ব এশিয়ার একটি অনুকরণীয় দেশে পরিণত করেন। 

মাহাথির সরকারের নতুন যত পদক্ষেপ

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, আগের সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় যারা নিয়োগ পেয়েছেন এমন ১৭ হাজার আমলা-কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হবে। সরকারি জনশক্তিতে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীর সংখ্যা অতিরিক্ত হয়ে গেছে। তবে সরকারি গাড়িচালকদের মতো কর্মচারীদের ছাড় দেয়া হবে। তবে যাদের ছাঁটাই করা হবে, চাকরিচ্যুতদের একটি অংশকে যোগ্যতা অনুযায়ী অন্য কাজে নিযুক্ত করা হবে।

মাহাথির বলেছেন, ১৯৮১ সালে আমাকে যখন প্রথম প্রধানমন্ত্রী করা হলো, প্রথম যে কাজটা আমি করেছিলাম সেটা হচ্ছে, মন্ত্রী আর সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তাদের বেতন কর্তন। এবারও মন্ত্রিসভার মন্ত্রীদের বেতন এখন থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হবে। আমরা যে দেশের আর্থিক সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছি, এ পদক্ষেপে সেটা প্রমাণিত হবে।

আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি মাহাথির বলেছেন,  মালয়েশিয়ার বৈদেশিক দেনার পরিমাণ ১ লাখ কোটি রিঙ্গিত ছাড়িয়ে গেছে, যা ২৫০ বিলিয়ন ডলারের চেয়েও বেশি। এ ঋণ দেশটির মোট জিডিপির ৬৫ শতাংশের সমান। পাহাড় পরিমাণ রাষ্ট্রীয় ঋণের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার দায়ী। নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ মিললেই তাকে গ্রেফতার করা হবে। আমার নির্দেশেই নির্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত চলছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে আমি দৃঢ় প্রত্যয়ী। আইন অনুযায়ী দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে আমি অবশ্যই কাজ করব।

 নতুন মালয়েশিয়া গড়ার লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারীদের ‘অবিভক্ত সহযোগিতা’ চেয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মাহাথির বলেছেন, আইন ভঙ্গ করবেন না। আইন ভাঙলে এমনকি প্রধানমন্ত্রীকেও ছাড় দেবেন না। আমরা আত্মবিশ্বাসী, আমরা যেকোনো বিপর্যয় মোকাবেলা করতে পারব। কিন্তু সেজন্য দরকার দক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য সরকারি কর্মকর্তা। প্রশাসক হিসেবে আইনের শাসনকে সবার আগে স্থান দিতে হবে এবং যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের অবশ্যই কর্তব্য পালন করতে হবে যাতে মালয়েশিয়া এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে পারে। দেশের সবাই এক সাথে কাজ করলে মালয়েশিয়ার মুক্তি পাওয়া ও আবার সমীহের সাথে গণ্য হওয়ার জন্য খুব বেশি দিন লাগবে না।

বিভিন্ন সময়ে ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ বলেছিলেন- আমরা সংবিধান সমুন্নত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই। আইনের শাসনমতে দেশ চালাতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, এয়ানএমডিবির বেশির ভাগ অর্থ ফেরত আনতে পারব।জনগণকে নির্যাতন করার জন্য তৈরি করা কোনো আইন রাখা হবে না। আমাদের ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। পেছনের আবর্জনা ঘাঁটার সময় আমাদের হাতে নেই। আমি কোনো প্রতিশোধ নিতে চাই না।

 তিনি আরো বলেছিলেন- প্রত্যেকের নিজ পরিবার একটি নিরাপদ জায়গা - যা আমাদের এই জটিল সমাজে স্থিরতা আনে। ইসলাম ধর্ম আমাদের জীবনের অংশ। একে পরিত্যাগ করার কোন কারণ নেই। সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হলে ধর্ম কখনো অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য বাধা হতে পারে না। ইসলামের শিক্ষা সমসাময়িক সময়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে নিতে হবে। ইসলাম শুধু মাত্র সপ্তম শতাব্দীর ধর্ম নয়। ইসলাম অবশ্যই সর্বকালের ধর্ম। চিকিৎসা বিদ্যায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকের জন্য রাজনীতি একটি ভালো পেশা। একজন ডাক্তার রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেন, স্বাস্থ্যগত ইতিহাস রেকর্ড করেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন, ল্যাব পরীক্ষা করেন এবং চূড়ান্তভাবে রোগ নির্ণয় করেন। এ প্রক্রিয়াটি রাজনীতির মতই।ট্রাম্প আন্তর্জাতিক গুণ্ডা। তাকে ঠেকাতে অবশ্যই আমাদের সব ক্ষমতা ব্যবহার করতে হবে।  খান কম, অনুশীলন করুন বেশি, বই পড়ুন বেশি।


আরো সংবাদ



premium cement