২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজাকের বাসা থেকে ৩ কোটি মার্কিন ডলার উদ্ধার

সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক - সংগৃহীত

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিলাসবহুল বাসভবন থেকে নগদ ২৮.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (১১৪ মিলিয়ন মালয়েশিয়ান রিংগট) পুলিশ উদ্ধার করে।পুলিশ বলছে শুক্রবার তার বাসভবনে অভিযান চালিয়ে এ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। বিবিসি,রয়টার্স
দেশটির সদ্যসাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ করে আসছে সে দেশের বিরোধী দলগুলো।এমন অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্তের অংশ হিসেবে পুলিশ রাজাকের কুয়ালালামপুরের বিলাসবহুল বাসভবন ও অ্যাপার্টমেন্টে তল্লাশী চালালে এই বিপোল মার্কিন ডলার উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা অমর সিং সংবাদ সম্মেলনে বলেন, উদ্ধার করা অর্থের মধ্যে ২৬ ধরণের মুদ্রা রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত এই অর্থের পরিমাণ ১১৪ মিলিয়ন রিংগিট (২৮.৬ মিলিয়ন ডলার)। ৩৫টি ব্যাগে এই ২৮.৬ মিলিয়ন অর্থ পাওয়া যায়।
এছাড়া আরো ৩৭টি ব্যাগে দামি ঘড়ি ও মূল্যবান অলংঙ্কার পাওয়া যায়। এর অর্থমূল্য পরে হিসেব করে জানানো হবে বলে জানান অমর সিং।
গত ৯ মে নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের জোটের কাছে পরাজিত হয়ে নাজিব রাজাকের জোট ক্ষমতা হারায় ।এরপর ১০ মে মাহাথির মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। মাহাথির মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী হয়েই সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেন।
তদন্তের অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে নাজিবের বাড়ি,কুয়ালালামপুরে তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ঘড়ি ও অলঙ্কারের সঙ্গে ওই নগদ উদ্ধার করা হয়।

 

নাজিবকে জিজ্ঞাসাবাদ

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশনের (এমএসিসি) প্রধান কার্যালয়ে যান এবং সেখানে তিনি দ্বিতীয় দফা জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হন।
স্থানীয় সময় পৌনে ১০টায় সাবেক এই নেতা এমএসিসি কার্যালয়ে হাজির হন। কাল স্যুট পরা নাজিব এ সময় স্মিত হাসছিলেন। তিনি ভবনে প্রবেশের আগে গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়েন। ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে নাজিবের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে ৪২ মিলিয়ন রিঙ্গিত (১০.৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) অর্থ জমা হয়। নাজিব মঙ্গলবার এমএসিসি কার্যালয়ে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হন।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আত্মসাতের অভিযোগ আছে।

 

জব্দকৃত অর্থের পরিমাণ ১২ কোটি রিঙ্গিত
মালয়েশিয়ার সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট ও প্রতিষ্ঠান থেকে লাগেজ ভর্তি যে নগদ অর্থ উদ্ধার করেছে দেশটির পুলিশ, সেগুলো গণনা শেষ হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, জব্দকৃত নগদ অর্থের পরিমাণ ১২ কোটি মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত। গত সপ্তাহে নাজিব রাজাকের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে একযোগে অভিযান চালায় পুলিশ।
তিনটি অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, গয়না এবং দামি হ্যান্ডব্যাগ জব্দ করে পুলিশ।পুলিশ জানায়, অভিযানে তারা ২৮৪টি বাক্সভর্তি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মহিলাদের ব্যবহৃত দামি হ্যান্ডব্যাগ, ৭২ ব্যাগ ভর্তি গয়না ও দামি ঘড়ি এবং বিপুল রিংগিত ও মার্কিন ডলার জব্দ করেছে। প্রাথমিকভাবে নাজিব রাজাকের জব্দকৃত অর্থ ও ধন-রত্নের আনুমানিক মূল্য ৮০ কোটি মার্কিন ডলার হতে পারে বলে ধারণা করেছিলো পুলিশ।
বুধবার দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, তার ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় লাগেজ ও ব্যাগ ভর্তি নগদ অর্থ গোনা শেষ করেছে। কমার্শিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের(সিসিআইডি) একজন কর্মকর্তা জানান, সোমবার অর্থ গণনা শুরু হয়, যা বুধবার শেষ হয়েছে। কাজটি যথাযথভাবে সম্পন্ন করা নিশ্চিত করতে তদন্ত কর্মকর্তারা পর্যাপ্ত সময় নিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কেন্দ্রিয় ব্যাংক ও পুলিশের কর্মকর্তারা মিলে প্রায় ত্রিশ ব্যাগ নগদ অর্থ গোনা শেষ করেছে। সব মিলে হয়েছে ১২ কোটি রিঙ্গিত।’ তবে জব্দকৃত গহণা ও অন্যান্য ধন-রত্নের পরিমাণ সম্পর্কে এখনো কিছু জানানো হয়নি মালয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
পুলিশ অভিযানে এই বিপুল ধন-রত্ন খুঁজে পাওয়ার পর নাজিব রাজাক বলেছিলেন, নির্বাচনের সময় তার জোট বারিসন ন্যাশনালের তহবিলে বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তার অর্থ এগুলো। তবে সেই যুক্তি পক্ষে তিনি কোন প্রমাণ হাজির করতে পারেননি। নির্বাচনের পরেই নাজিবের দেশ ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে নতুন সরকার। তার বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে দুর্নীতির তদন্তও। এত ধন-রত্ন নাজিব রাজাকের বাসায়!
গত বুধবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের একটি আবাসিক কমপ্লেক্সে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক সংশ্লিষ্ট তিনটি অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, গয়না এবং দামি হ্যান্ডব্যাগ জব্দ করে পুলিশ। অভিযানে তারা ২৮৪টি বাক্সভর্তি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মহিলাদের ব্যবহৃত দামি হ্যান্ডব্যাগ, ৭২ ব্যাগ ভর্তি গয়না ও দামি ঘড়ি এবং বিপুল রিংগিত ও মার্কিন ডলার জব্দ করেছে।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন পুলিশের প্রধান অমর সিং বলেন, ‘ঠিক কী পরিমাণ গয়না উদ্ধার করা হয়েছে তা আমি এখনই বলতে পারছি না। কারণ আমরা বাক্সেভরা গয়না জব্দ করেছি। তবে এটা বলতে পারি, পরিমাণ অনেক বেশি।’
এদিকে, কোনো ধরনের পরোয়ানা ছাড়া নাজিব পরিবারকে হেনেস্তা করতে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তার আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘যেসব জিনিস জব্দ করা হচ্ছে সেগুলো হয়তো তেমন মূল্যবান কিছু না। কিন্তু যেভাবে সেটা প্রচার করা হচ্ছে তাতে সবার মনে আমার মক্কেলকে নিয়ে নেতিবাচক ছবি তৈরি হচ্ছে।’
জাতীয় নির্বাচনে পরাজয়ের এক সপ্তাহ পর গত বুধবার রাত থেকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পুত্রজায়ায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন এবং নাজিব পরিবারের মালিকানায় থাকা চারটি আবাসিক ভবনে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।
রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ এবং দেশের অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করতে গড়া বিনিয়োগ তহবিল ‘ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বরহাদ’ (ওয়ানএমডিবি) থেকে নাজিব ৭০ কোটি ডলার নিজের পকেটে পুরেছেন, ২০১৫ সালে এমন অভিযোগ ওঠার পর তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।
যদিও পরে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ নাজিবকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্তত ছয়টি দেশে তার বিরুদ্ধে এখনো দুর্নীতি তদন্ত চলছে। মালয়েশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নাজিবের বিরুদ্ধে ফের দুর্নীতি তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেন। যদিও কোনো দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাজিব।
ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে পড়ার পর নাজিবকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন মাহাথির। কিন্তু নাজিব সরে না দাঁড়ানোয় তাকে ক্ষমতা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামাতেই ১৫ বছর পর রাজনীতিতে ফেরেন মাহাথির। এক সময়ের চরম প্রতিদ্বন্দ্বী আনোয়ার ইব্রাহিমের সাথে জোট বেঁধে নির্বাচনে জিতে ৯২ বছর বয়সে আবারো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। নির্বাচনে হারের পর ছুটি কাটানোর কথা বলে স্ত্রীসহ দেশত্যাগের উদ্যোগ নিয়েছিলেন নাজিব। নির্বাচনের একদিন পর তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

 

রাজাকের দুর্দিন
মালয়েশিয়ায় ক্ষমতার পালাবদলে দুর্দিন শুরু হলো সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া ৯২ বছর বয়সী মাহাথির মোহাম্মদের নির্দেশে নাজিবের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বাঁচাতে তৎপর অ্যাটর্নি জেনারেলকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর গত বুধবার মাহাথির অবশ্য বলেছিলেন, প্রতিহিংসার আশ্রয় তাঁর জোট নেবে না। তবে দেশে আইনের শাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে। এসব পদক্ষেপের ব্যাপারে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা সত্য যে আমি আমার পূর্বসূরির (নাজিব) দেশত্যাগ রুখে দিয়েছি।’ অ্যাটর্নি জেনারেল মোহামেদ আলী আপন্দিকে বরখাস্তের ব্যাপারে তিনি বলেন, খারাপ কাজ করে কেউ পার পাবেন না। নাজিবের দুর্নীতির অনেক প্রমাণ মোহামেদ আলী সরিয়ে ফেললেও এখনো তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করার মতো অনেক কিছু আছে।
নাজিব রাজাক ও তাঁর স্ত্রী রোসমা মানসুরের ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। জাকার্তাগামী উড়োজাহাজে নাজিব ও তাঁর স্ত্রীর নামে টিকিট কাটা হয়েছে-অনলাইনে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে গুঞ্জন ওঠে যে নাজিব পালিয়ে যাচ্ছেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাজিব বলেন, তিনি বিশ্রাম নিতে অল্প সময়ের জন্য ইন্দোনেশিয়া যাচ্ছেন।
তবে নাজিবের এ ঘোষণাও কাজ হয়নি। ক্ষুব্ধ জনতা বিমানবন্দরে জড়ো হয়ে নাজিববিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বিমানবন্দর এলাকায় বিপুলসংখ্যক দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিমানবন্দর এলাকায় প্রবেশ করা গাড়ির জানালায় উঁকি দিয়ে বিক্ষোভকারীরা নাজিবকে খুঁজতে থাকেন। কেউ কেউ আবার তাঁর স্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ ঝাড়েন।
এমন পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী বলেন, নাজিব রাজাক ও তাঁর স্ত্রী রোসমা মানসুরের মালয়েশিয়া ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে এক টুইটে নাজিব বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। আমি আমার পরিবারের সঙ্গে দেশেই থাকব।’
এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে পরাজয়ের দায় নিয়ে নিজের দল ইউনাইডেট মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন নাজিব রাজাক। পদত্যাগ করেন বারিসান ন্যাশনাল জোটের প্রধানের পদ থেকেও। এ সময় তিনি বলেন, ‘দল নির্বাচনে ব্যর্থ হলে সরে দাঁড়ানোটা নেতার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’
এদিকে মাহাথিরের জোটের কারাবন্দী নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম আগামী মঙ্গলবার মুক্তি পাবেন বলে তাঁর মেয়ে নুরুল ইজজাহ জানিয়েছেন।
মাহাথির তাঁর মন্ত্রিসভার তিন সদস্যের নাম ঘোষণা করেছেন। সাবেক ব্যাংকার লিম গুয়ান ইংকে অর্থমন্ত্রী করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী মহিদ্দিন ইয়াসিনকে এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন

দীর্ঘদিনের বিরোধী রাজনীতিক মোহাম্মদ সাবু। এ ছাড়া প্রথম ১০০ দিনে সরকারের অর্থনৈতিক উদ্যোগের ব্যাপারে পরামর্শ দিতে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে যে বিশেষ কমিটি গঠনের ঘোষণা মাহাথির দিয়েছেন, সেখানে আছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর জেতি আখতার আজিজ ও ধনকুবের রবার্ট কুয়ক।


আরো সংবাদ



premium cement