ইউরোপ

পুতিনের বিলাসী জীবন

বিত্ত-বৈভবে ভরপুর এক জীবন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। ব্যক্তিগত বিমানের টয়লেটটি সোনার পাতে মোড়ানো। আছে জিম এবং বিরাট সাইজের পালঙ্কও। হাতের ঘড়ি থেকে শুরু করে উড়োজাহাজ— সবকিছুতেই আছে বিলাসিতার ছাপ। বিশ্বের অন্য বিশ্বনেতাদের বিমানের চেয়ে পুতিনের বিমানের গতিও অনেক বেশি।

এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এয়ারফোর্স ওয়ানের চেয়ে বেশি গতিসম্পন্ন। ঘণ্টায় ৪০৫ মাইল পেছনে ফেলতে পারে ট্রাম্পের বিমানকে। চোখ ধাঁধানো সাজসজ্জার এমন আরও বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত বিমান রয়েছে পুতিনের।

সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে ট্রাম্পের সাথে বৈঠকের উদ্দেশ্যে এর একটি বিমানে চড়েই উড়ে আসেন পুতিন। পুতিনের ওই বিমানের ভেতরের বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করে রয়টার্স। ছবিতে দেখা যায়, পুরো বিমানের বেশির ভাগই সোনার পাত দিয়ে বাঁধানো। এমনকি টয়লেটও। বাদ পড়েনি বাথরুমের সিঙ্কটিও। ক্লান্ত পুতিনের শোয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। সেখানেও আরেক বিস্ময়। বিরাট সাইজের এক পালঙ্ক। যার গুণ-দর্শন যে কোনো রাজা-বাদশাহর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সবকিছু সাজানো-গোছানো আর পরিপাটি। রয়েছে একটি ব্যায়ামাগারও।

আধুনিক সব ব্যায়ামের যন্ত্র দিয়ে সাজানো এটা। ৬৫ বছরের শরীরটাকে ফিট রাখতে নিয়মিতই ব্যায়াম করেন পুতিন। দেশের বাইরেও যাতে বাদ না যায় তার সুব্যবস্থাই রয়েছে বিমানের মধ্যে।

পুতিনের বিমানগুলোর গতিও বিশ্বের অন্য নেতাদের বিমানের থেকে বেশি। এমনকি ট্রাম্পের এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানের থেকে বেশি। পুতিনের বিমানের গতি ঘণ্টায় ১০৩৫ মাইল। অন্যদিকে ঘণ্টায় মাত্র ৬৩০ মাইল ট্রাম্পের বিমানের গতি। তবে গতি বেশি হলেও ট্রাম্পের বিমানের দৈর্ঘ্য আর দাম দুটোই বেশি।

জার্মানের বিখ্যাত ব্র্যান্ড অ্যা লাঙ্গে শোয়েনের তৈরি মাস্টার পিসখ্যাত টার্বোগ্রাফ নামক ঘড়িটি প্রেসিডেন্ট পুতিনের হাতে দেখা গেছে বেশ কয়েকবার, যার বাজারমূল্য ৫ লাখ ডলার। বুঝতেই পারছেন কতটা বিলাসী আর শৌখিন হলে এত দামের ঘড়ি ব্যবহার করতে পারেন এ বিশ্বনেতা।

প্রেসিডেন্ট পুতিনের সংগ্রহে আছে প্রায় ৭ লাখ ডলারের এক বিশাল ঘড়ির সমাহার। সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত ঘড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্যাটেক ফিলিপের তৈরি পারপিচুয়্যাল ক্যালেন্ডার সিরিজের একটি ঘড়ি দেখা গেছে পুতিনের হাতে। যার বাজারমূল্য ৬০ হাজার ডলার। একই ব্র্যান্ডের ক্যালাট্রাভা সিরিজের ১৮ হাজার ডলারের ঘড়িটিও তার হাতে শোভা পেয়েছে। জার্মানের বিখ্যাত ব্র্যান্ড অ্যা লাঙ্গে শোয়েনের তৈরি মাস্টার পিসখ্যাত টার্বোগ্রাফ নামক ঘড়িটি প্রেসিডেন্ট পুতিনের হাতে দেখা গেছে বেশ কয়েকবার, যার বাজারমূল্য ৫ লাখ ডলার। 

চার-চারটি প্রমোদতরীর মালিক পুতিন। চারটি প্রমোদতরীর মধ্যে একটি উপহার পেয়েছেন রাশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির কাছ থেকে। পুতিনের সবচেয়ে প্রিয় যে প্রমোদতরীটি, সেটি ১৭৫ ফুট লম্বা, যার দাম ৩৭ মিলিয়ন ডলার।

বর্তমানে তার গাড়ির সংখ্যা ৭০০। এ বহরে বিশ্বের নামিদামি সব ব্র্যান্ডের গাড়ি তো আছেই, সঙ্গে আছে ফর্মুলা ওয়ানের মতো বিলাসবহুল গাড়িটিও। তবে পুতিন তার প্রিয় গাড়ির তালিকায় রাশিয়ায় তৈরি গাড়িগুলোকেই সবসময় এগিয়ে রেখেছেন।

ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ আছে ৪৩টি। এগুলোর মূল্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। আর অনেকগুলোর অন্দরমহল সাজানো হয়েছে স্বর্ণ দিয়ে।  ১ বিলিয়ন ডলার খরচ করে পুতিন’স প্যালেসসহ রাশিয়াজুড়ে ২০টির মতো বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি। এছাড়া ১৫টি হেলিকপ্টার আছে এই বিলাসী নেতার, যেগুলোর মধ্যে এমআই-এইট নামে বিশেষ ধরনের এক হেলিকপ্টার তৈরি হয় শুধু পুতিনের জন্য। আর ৭৫ হাজার ডলারের টয়লেট ব্যবহার করার খবর তো অনেকেই জানেন।

রাশিয়া ছেড়ে পশ্চিমে আশ্রয় নেওয়া ক্রেমলিনের মধ্যম সারির একজন সাবেক উপদেষ্টা স্তানিস্লাভ বেলকোভস্কি ২০১২ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, পুতিনের সম্পদের পরিমাণ কমপক্ষে ৭০ বিলিয়ন ডলার।  তবে এসব সম্পদের কোনোটিই সরাসরি পুতিনের নামে না থাকায় বা প্রকাশিত না হওয়ায় ফোর্বস কখনো ধনীদের তালিকা তৈরির সময় তাকে বিবেচনায় নেয় না। পুতিনের নিয়ন্ত্রণে যেসব সম্পদ রয়েছে তার বেশিরভাগই দেশটির বিভিন্ন তেল ও গ্যাস কোম্পানীতে শেয়ার আকারে রয়েছে। রাশিয়ার তেল কোম্পানী সারগুনেফটেগাজ এর ৩৭ শতাংশ শেয়ার নিয়ন্ত্রণ করেন পুতিন। জ্বালানি খাতের আরেক শীর্ষ কোম্পানী গ্যাজপ্রম এ পুতিনের রয়েছে সাড়ে চার শতাংশ শেয়ার। এছাড়া গুনভর কোম্পানীতেও পুতিনের শেয়ার আছে।

সিএনএনের অনুষ্ঠানে সিএনএন এর উপস্থাপক ফরিদ জাকারিয়া হেজ ফান্ড ম্যানেজার বিল ব্রাউডারকে জিজ্ঞাসা করেন, পুতিনের আনুমানিক সম্পদ কত?  জবাবে ব্রাউডার বলেন, আমার মনে হয় তা ২০০ বিলিয়ন ডলার হবে। স্কুল, সড়ক এবং হাসপাতাল নির্মাণ না করে পুতিন এসব সম্পদ সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছেন এবং শেয়ার ও অন্যান্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। ক্ষমতার প্রথম ১০ বছরেই পুতিন যতটা পারা যায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি করেছেন।

পুতিনের ব্যক্তিগত সম্পত্তির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় তার কৃষ্ণসাগরের পাড়ের বিশাল একটি প্রাসাদোপম বাড়ি। অনেকের মতে এই বাড়ির দাম এক বিলিয়ন ডলার। এই বাড়িটি তৈরি করা থেকে শুরু করে এর রক্ষণাবেক্ষণ এমনকি নিরাপত্তার কড়াকড়িসহ সবকিছু নিয়েই ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। এমনকি ইন্টারনেটের দুনিয়ায় এই বাড়িটির অন্দরমহল বা বহির্পার্শ্বেরও তেমন ভালো কোনো ছবি মেলে না। গুঞ্জন রয়েছে গ্রেসফুল নামের ১০০ মিলিয়ন ডলারের একটি বিলাবহুল সুপার ইয়টেরও মালিক পুতিন নিজেই। মস্কো শহরে একটি সুসজ্জিত তিনতলা বাড়িও রয়েছে পুতিনের।

আরো সংবাদ