২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বিশ্বের কুখ্যাত মাদক সম্রাটের বিচার মার্কিন আদালতে

মাদক সম্রাট
গুজমানের স্ত্রী এমা করোনেল বিচারের সময় উপস্থিত ছিলেন - ছবি : বিবিসি

নিউ ইয়র্কের একটি আদালত মেক্সিকোর মাদক সম্রাট জোয়াকিন ‘এল চাপো’ গুজমানের বিরুদ্ধে আনা ১০টি অভিযোগেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।

কোকেন এবং হেরোইন সরবরাহ সহ অর্থ পাচার এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের একাধিক অপরাধে অভিযুক্ত ছিলেন ৬১ বছর বয়সী গুজমান।

তার চূড়ান্ত সাজা এখনো ঘোষণা করা না হলেও ধারণা করা হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি পেতে পারেন তিনি।

মেক্সিকোর একটি কারাগার থেকে সুরঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পাছ মাস পর ২০১৬'র জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার হন তিনি।

২০১৭ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীদের চক্র 'সিনায়োলা কার্টেল'এর নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

রাষ্ট্রীয় কৌসুলিদের মতে যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী ঐ চক্র।

এগারো সপ্তাহের বিচারিক কার্যক্রম শেষে ব্রুকলিনের একটি আদালত তাকে দোষী হিসেবে রায় দেন।

গুজমানের সহযোগীদের অনেকেই তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

কে এই 'এল চাপো?'
'এল চাপো' মানে 'বেঁটে' - যিনি একসময় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন ছিলেন - মেক্সিকোর উত্তারঞ্চলের মাদক ব্যবসার চক্রের মূল হোতা।

সময়ের সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক চোরাচালানের বৃহত্তম উৎসগুলোর একটি হয়ে ওঠে এই চক্র।

সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালের ফোর্বসের বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকার ৭০১ নম্বরে জায়গা হয় গুজমানের।

সেসময় গুজমানের আনুমানিক মূল্য নির্ণয় করা হয়েছিল ১ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রে লক্ষ লক্ষ টন কোকেন পাচারে সহায়তা সহ হেরোইন, মেথ্যাম্ফেটামিন ও মারিজুয়ানা উৎপাদন ছাড়াও বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এছাড়াও ধারণা করা হয়, ভাড়াটে গুণ্ডা ব্যবহার করে 'শত শত' হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার ঘটনার পেছনে ছিলেন তিনি।

জড়িত ছিলেন বিরোধীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও অপহরণের মত ঘটনার সাথেও।

কী তথ্য প্রকাশিত হয়েছে আদালতে?
মেক্সিকোর মাদক চোরাচালানকারীর জীবনের বিস্ময়কর অনেক দিক প্রকাশিত হয় আদালতে।

অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীদের মাদক সেবন করিয়ে ধর্ষণ করতেন - আদালতের নথিতে এমন অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।

তার সাবেক সহযোগী কলম্বিয়ান মাদক পাচারকারী অ্যলেক্স সিফুয়েন্তের ভাষ্য অনুযায়ী, গুজমান বিশ্বাস করতেন কমবয়সী মেয়েদের সাথে যৌনতা তাকে 'জীবন' দিতো।

তাই তার সবচেয়ে কমবয়সী যৌনসঙ্গীকে - যার বয়স ছিল ১৩ - তিনি 'ভিটামিন' নামে সম্বোধন করতেন।

আদালতে সিফুয়েন্তে এমন অভিযোগও করেন যে গুজমান ২০১২ সালে মেক্সিকোর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নিয়েতো'কে ১০ কোটি ডলার দিয়েছিলেন।

গুজমানকে আটক করার জন্য চলা অভিযান থামানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১২ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর এল চাপো'র কাছে ২৫ কোটি ডলার দাবি করেন বলেও উঠে আসে সিফুয়েন্তের জবানবন্দীতে।

তবে মি. পেনা নিয়েতো এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

আরেকজন সাক্ষী নিজে গুজমানকে অন্তত তিনটি খুন করতে দেখেছেন বলে বিবরন দিয়েছেন।

গুজমানের সাবেক দেহরক্ষী ইসাইয়াস ভালদেজ রিওস জানান, বিপক্ষের মাদক চক্রে যোগ দেয়ার কারণে দু'জনকে নৃশংসভাবে নির্যাতনের পর মাথায় গুলি করে হত্যা করে গুজমান।

এরপর তাদের মরদেহ আগুনে ছুড়ে ফেলার নির্দেশ দেন।

আরেকটি ঘটনায় আরলানো ফেলিক্স চক্রের এক সদস্যকে জীবন্ত মাটি চাপা দেয়ার আগে আগুনে পুড়িয়ে নির্যাতন করেছিলেন বলে জানা যায় রিওসের জবানীতে।

আরেক মাদক চক্রের প্রধানের ভাই তার সাথে হাত না মেলানোয় ঐ ব্যক্তিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে গুজমানের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে।

২০১৫ সালে মেক্সিকোর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত আল্টিপ্লানো কারাগার থেকে গুজমানের পালানোর ঘটনার বিস্তারিতও উঠে আসে আদালতে।

সেসময় তার ছেলেরা কারাগারের কাছে জায়গা কেনে এবং গুজমানের কাছে কারাগারে একটি জিপিএস ঘড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে যেন সুরঙ্গ খুঁড়ে সরাসরি তার কাছে যাওয়া সম্ভব হয়।

পরবর্তীতে বিশেষভাবে তৈরি মোটরসাইকেল চালিয়ে ঐ সুরঙ্গ দিয়ে পালান এল চাপো।

স্ত্রী এবং রক্ষিতাদের ওপর নজর রাখতে নিজের ফোনে স্পাই সফটওয়্যার ব্যবহার করতেন গুজমান।

ঐ সফটওয়্যারের কল্যাণে আদালতে তার পাঠানো অনেক মেসেজ প্রমাণ হিসেবে পেশ করতে সক্ষম হয় এফবিআই।

কেন গুরুত্ব পাচ্ছে এই বিচার?
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত মেক্সিকোর ড্রাগ কার্টেলের যতজন প্রধানের বিচার হয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত গুজমান।

মেক্সিকোতে মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত সহিংসতায়, যেগুলো মূলত মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের সাথে কার্টেলগুলোর এবং কার্টেলদের নিজেদের মধ্যে সংঘটিত হয়, গত এক দশকে এক লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

মেক্সিকোতে পুলিশের হেফাজত থেকে দু'বার পালিয়ে এবং অসংখ্যবার গ্রেপ্তার এড়িয়ে আলোচনায় আসেন গুজমান।

তার নিজের এলাকার অনেকের দৃষ্টিতে গুজমান বীরোচিত এক ব্যক্তিত্ব। সেসব এলাকায় তাকে উৎসর্গ করে লোকগানও প্রচলিত আছে।

জেল থেকে পালানোর পর ২০১৬ সালে মেক্সিকোর এক জঙ্গলে থাকার সময় হলিউড অভিনেতা শন পেন'কে একটি সাক্ষাৎকার দেন তিনি।

সেখানে নিজেকে বিশ্বের শীর্ষ হেরোইন, কোকেন, মেথ্যাম্ফেটামিন ও মারিজুয়ানা সরবরাহকারী বলে দাবি করেন।

কৌসুলিদের বক্তব্য অনুযায়ী, অতীতে গুজমান সাক্ষীদের ভয় দেখানো ও হত্যার সাথেও জড়িত ছিলেন।

সে কারণে এই বিচারের জুরিদের নাম প্রকাশ করা হয়নি এবং তাদেরকে সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষীসহ ব্রুকলিনের আদালতে আনা-নেওয়া করা হতো।


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল