২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সেনাবাহিনী কেন মাদুরোকে সমর্থন দিচ্ছে?

ভেনেজুয়েলা
সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে নিকোলাস মাদুরো। - ছবি : বিবিসি

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা এখন রাজনৈতিকভাবে অস্থির সময় পার করছে।

দেশটির এই রাজনৈতিক সংকটে বিশ্ব শক্তিগুলো বেশ খোলাখুলি নাক গলাচ্ছে।

বিশ্বের ২০টির বেশি দেশ ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা জুয়ান গুয়াইদোকে দেশটির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর জন্য আরো খারাপ খবর হচ্ছে আমেরিকায় নিযুক্ত ভেনিজুয়েলার একজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা মি. মাদুরোর পক্ষ ত্যাগ করেছেন এবং অন্য সামরিক কর্মকর্তাদেরও একই কাজ করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

মি. মাদুরোর ক্ষমতা যদি নড়বড়ে হয়ে যায়, তাহলে তাকে সরিয়ে দেবার জন্য সেনাবাহিনী চূড়ান্ত ধাক্কা দিচ্ছে না কেন?

চাকরির সুবিধা
মি. মাদুরোর পূর্বসূরি হুগো শ্যাভেজ যখন ক্ষমতায় আসেন তখন বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী সেনাবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তার সরিয়ে দেন।

মি. শ্যাভেজ নিজেও একসময় সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে তিনি নিজেই সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন।

এর বিনিময়ে তিনি সেনা অফিসারদের নানা পদ-পদবীর মাধ্যমে পুরস্কৃত করেন।

মি. শ্যাভেজ ক্ষমতা গ্রহণের আগে সেনাবাহিনী ব্যারাকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

কিন্তু তিনি সেনাবাহিনীকে ব্যারাক থেকে বাইরে নিয়ে আসেন।

মন্ত্রিপরিষদে তাদের স্থান দেয়া হয়। এছাড়া ব্যাংক এবং নানা আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণও দেয়া হয় সেনা সদস্যদের হাতে।

হুগো শ্যাভেজের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন তারই অনুসারী নিকোলাস মাদুরো।

মি. মাদুরো একসময় বাসচালক ছিলেন। সেনাবাহিনীর সাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না।

কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পর মি. মাদুরো তার পূর্বসূরি হুগো চাভেজের দেখিয়ে পথ অনুসরণ করেন। সেনা সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা তিনি আগের মতোই বহাল রাখেন।

সেনাবাহিনীও সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে। সেনা কর্মকর্তারা মন্ত্রী এবং অন্যান্য প্রভাবশালী পদে থাকেন।

ভেনিজুয়েলার গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো সেনা কর্মকর্তাদের হাতে।

এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য বিতরণ সেবা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস কোম্পানি। শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে রয়েছেন।

বছরের পর বছর ধরে সেনা কর্মকর্তারা যাতে দুর্নীতি করতে পারে সে সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘন
মি. মাদুরোকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার বিনিময়ে সেনা কর্মকর্তারা যদি লোভনীয় সুযোগ-সুবিধা পান, তাহলে তাদের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর ভয়ও রয়েছে।

সেনাবাহিনীর একটি অংশ, বিশেষ করে সিনিয়র কর্মকর্তারা, প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে চান।

কারণ, এর বিনিময়ে তারা অর্থ-বিত্তের মালিক হচ্ছে। একই সাথে তারা মি. মাদুরো সরকারের সাথে আপস করছে।

এমটাই মনে করেন ব্রাসেলস-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক ফিল গানসন।

মি. গানসন বলেন, ‘কর্মকর্তা যদি দুর্নীতিবাজ হয় এবং একই সাথে গোয়েন্দারা যদি সেসব দুর্নীতির রেকর্ড ফাইলবন্দি করে রাখে, তখন কর্মকর্তাদের জন্য মত পাল্টানো বেশ কঠিন হয়ে যায়।’

অপরাধ দমনের নামে ভেনিজুয়েলার নিরাপত্তা বাহিনীগুলো শতশত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে জাতিসঙ্ঘ অভিযোগ করেছে।

সেনাবাহিনীর অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত।

‘তাদের আশংকা হচ্ছে, সরকারের পতন হলে বাকি জীবন তাদের কারাগারে কাটাতে হতে পারে’, বলছেন গানসন।

প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বেশ সফলতার সাথে তার সরকারের টিকে থাকার সাথে সেনা কর্মকর্তাদের স্বার্থকে জড়িত করেছেন।

সেনা কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সুযোগ দেবার মাধ্যমে সেটি হয়েছে বলে মনে করেন ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নিরাপত্তা বিষয়ে বিশ্লেষক ব্রায়ান ফনসেকা।

গত জানুয়ারি সরকার বিরোধীরা সামরিক ব্যারাকে গিয়ে সৈন্যদের হাতে লিফলেট বিলি করেছেন।

সেখানে লেখা ছিল বিরোধী নেতা জুয়ান গুইদো ক্ষমতায় আসলে তাদের ক্ষমা করা হবে।

মি. ফনসেকা বলেন, সরকার বিরোধীদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর মধ্যম এবং জুনিয়র কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

কিন্তু সেনাকর্মকর্তারা সেসব লিফলেটকে গুরুত্ব না দিয়ে সেগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেগুলো ছড়িয়ে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে সেনাবাহিনী দেখানোর চেষ্টা করেছে যে তারা প্রেসিডেন্ট মাদুরোর সাথেই আছে।

এদিকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, ভেনিজুয়েলার সেনাবাহিনীতে নিচের দিকে অনেক কর্মকর্তা এবং সদস্যরা বিরোধী নেতাকে সমর্থনের উপায় খুঁজছেন।

বিরোধীদের সাথে অনেক সেনা সদস্যের যোগাযোগ আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বিশ্লেষক মি. ফনসেকা মনে করেন, ক্ষমা ঘোষণার বিষয়টি হয়তো কিছু সেনা সদস্যদের মনোভাব পরিবর্তন করতে পারে।

কিন্তু অন্যরা বিষয়টিতে আশ্বস্ত হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মি. মাদুরো ক্ষমতা থেকে সরে গেলে সেনাবাহিনী অনেক কিছু হারাবে।

সাধারণ ক্ষমার কথা বলা হলেও সেটি আদৌ কার্যকরী হবে কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

কারণ, বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে নিপীড়ন, দুর্নীতি এবং মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত সেনাকর্মকর্তারা রেহাই পাবেন এমন নিশ্চয়তা নেই।


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়াল, যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৪২.৬ শ্যালকদের কোপে দুলাভাই খুন : গ্রেফতার ৩ তীব্র গরমে কী খাবেন আর কী খাবেন না এবার তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বললেন এমপি জয় পঞ্চপল্লীর ঘটনায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে যা দরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার নির্দেশ সরকার ভিন্ন মত ও পথের মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে : মির্জা ফখরুল ধুনটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বৃদ্ধের মৃত্যু বাকৃবির এক্স রোটারেক্টরর্স ফোরামের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠিত পাবনায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড, হিট স্ট্রোকে মৃত্যু ১ দাগনভুঞায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তির ঘটনায় আ’লীগ নেতাকে শোকজ

সকল