২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

এক দেশ, দুই প্রেসিডেন্ট, সংঘাত চলছে

- ছবি : সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক সংকট অবসানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এক বিতর্কিত ও এক স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট নিজেদের কর্তৃত্ব কায়েম করার চেষ্টা করছেন। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলিও জড়িয়ে পড়ছে।

ঘরে-বাইরে কোণঠাসা হয়ে পড়লেও এখনো হার মানতে রাজি নন বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। দেশের সামরিক বাহিনী তার প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানানোর ফলে তিনি কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ভ্লাদিমির পাদ্রিনো এবং ৮ জন জেনারেল মাদুরোর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য দেখিয়েছেন। তবে সেনাবাহিনীর নীচের স্তরে সরকারের প্রতি সমর্থন নিয়ে সংশয় রয়েছে।
অন্যদিকে বিরোধী নেতা ও স্বঘোষিত অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হুয়ান গুয়াইদো নিজের কর্তৃত্ব কায়েম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অ্যামেরিকাসহ একাধিক আন্তর্জাতিক শক্তির সমর্থন নিয়ে তিনি মাদুরোকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে চলেছেন। রাজপথে এই দুই নেতার সমর্থকদের প্রতিবাদ বিক্ষোভের জের ধরে নিহতের সংখ্যা আপাতত ২৬।
মার্কিন প্রশাসন বিরোধী শক্তির প্রতি জোরালো সমর্থন দেখানোয় এবং প্রয়োজনে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দেওয়ায় বেজায় ক্ষুব্ধ মাদুরো। তিনি রাজধানী ও অন্যান্য শহরে মার্কিন দূতাবাসের সব দফতর বন্ধ করার ঘোষণা করেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দূতাবাসের বেশিরভাগ কর্মীকে ভেনেজুয়েলা ছাড়ার নির্দেশ দিলেও ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের বহিষ্কারের নির্দেশ পালন করতে প্রস্তুত নয়।

ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট গুয়াইদোর প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে কূটনীতিকরা ভেনেজুয়েলায় থাকবেন। ভেনেজুয়েলার পেট্রোলিয়াম বিক্রির অর্থ থেকে মাদুরোকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগও নিচ্ছে ওয়াশিংটন। সেই অর্থ গুয়াইদোর প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় উপদেষ্টা জন বোল্টন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, এমন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল।
রাশিয়া ও চীন মাদুরো প্রশাসনের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন টেলিফোনে মাদুরোর সঙ্গে কথা বলে। বাইরে থেকে ভেনেজুয়েলায় সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। চীনও ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, রাশিয়া ও চীন অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত ভেনেজুয়েলাকে প্রয়োজনীয় ঋণ ও অস্ত্র সরবরাহ করে। বিশেষ করে চীন সে দেশে বিশাল মাত্রায় বিনিয়োগ করে এসেছে। সে দেশের পেট্রোলিয়াম শিল্পেও চীনের বড় অবদান রয়েছে। মেক্সিকো, কিউবা ও বলিভিয়ার বামপন্থি প্রশাসনও মাদুরোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তুরস্কের সঙ্গেও মাদুরো প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ভেনেজুয়েলার সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন পাওয়ায় দেশের মধ্যে অনেকে বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদোকে আমেরিকার চর হিসেবে তুলে ধরছে। অন্তর্কলহ বন্ধ করে তিনি বিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সমর্থ হলেও সামরিক বাহিনীর সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তবে মাদুরোর প্রতি তিনি কিছুটা সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দিয়েছেন। মাদুরো স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়লে তাঁর জন্য ‘অ্যামনেস্টি' বা সাধারণ ক্ষমার ব্যবস্থার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন গুয়াইদো।


আরো সংবাদ



premium cement