২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাজধানীতে দুশ্চিন্তার নাম গণশৌচাগার

-

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে রাজধানীতে জনসংখ্যা এবং আকাশচুম্বী ভবন বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে নাগরিক সমস্যার পরিধি। এ সমস্যা কাটিয়ে নগরের বাসিন্দাদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে অর্থাৎ ঢাকা উত্তর ও দণি সিটি করপোরেশনে ভাগ করা হয়। কিছু েেত্র সিটি করপোরেশন ভাগ করার ফল মিললেও অনেক েেত্রই নাগরিক সেবা থেকে যাচ্ছে অধরা।
ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা দুই কোটি ছুঁই ছুঁই। ঢাকায় বসবাসরত ও বহিরাগত মিলিয়ে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে। এই অর্ধকোটি মানুষের চাহিদার তুলনায় রাজধানীতে পাবলিক টয়লেট বা গণশৌচাগারের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। সে জন্য ঘনবসতিপূর্ণ এ শহরে গণশৌচাগারের খোঁজেও হয়রান হতে হয় নাগরিকদের। বিশেষ করে ভুগতে হয় নারী ও শিশুদের।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৪। এর মধ্যে নতুন ওয়ার্ড ১৮। ১৯৬ দশমিক ২২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই সিটি করপোরেশনে পাবলিক টয়লেট আছে ২৫টি। অন্য দিকে ঢাকা দণি সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) মোট ওয়ার্ড আছে ৭৫টি। যার মধ্যে ১৮টি নতুন ওয়ার্ড। ১০৯ দশমিক ২৫১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই সিটি করপোরেশনে পাবলিক টয়লেট আছে মাত্র ৩৭টি। এর মধ্যে ২৯টি নতুন ও পুরনো আটটি।
রাজধানীতে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, সংস্কার, রণাবেণ ও পরিচালনার দায়িত্ব ঢাকা উত্তর ও দণি সিটি করপোরেশনের। পাবলিক টয়লেটের সংস্কার ও পরিচালনা বাবদ যাবতীয় ব্যয় সিটি করপোরেশন নিজস্ব তহবিল অথবা যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বহন করবে অথবা কোনো দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক এনজিও, বিভিন্ন লাভজনক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) তহবিল, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, অন্য কোনো বৈধ উদ্যোগী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির তহবিলের মাধ্যমে করার কথা। কিন্তু ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন পাবলিক টয়লেট নির্মাণের পর তা ইজারাদারদের কাছে হস্তান্তর করে। তারাই মূলত এগুলো দেখভাল করে ও টাকার বিনিময়ে সাধারণ মানুষকে শৌচাগার সেবা দিয়ে থাকে।
ঢাকায় গাড়ির গতি প্রতি ঘণ্টায় ৬ দশমিক ৪ কিলোমিটার। এতে যাত্রীদের দীর্ঘসময় গাড়িতে বসে থাকতে হয়। কর্মজীবীদের দিনের বেশির ভাগ সময়ই বাইরে থাকতে হয়। সমস্যা হলো চলার পথে অনেকেই গণশৌচাগার নিকটে পান না। সে জন্য তাদের বেশ ভুগতে হয়।
মগবাজারের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমার অফিস উত্তরায়, প্রতিদিন যাওয়া-আসার পথে বেশির ভাগ দিন যানজট থাকে। যে কারণে অনেক সময় বাস থেকে নেমে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে যাই। এ ছাড়া অনেকে যানজটের কারণে দীর্ঘ সময় বাসে বসে থাকার কারণে টয়লেটে যাওয়ার দরকার পড়ে। কিন্তু এত মানুষের বসবাসের এই শহরে পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট নেই। আমার মতে, শহরের অন্যান্য নাগরিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট নির্মাণ জরুরি। ঢাকা উত্তর ও দণি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যারা নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছেন, নাগরিকদের এই সমস্যা উপলব্ধি করে তাদের পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া উচিত।
ঢাকা দণি সিটি করপোরেশনের বিদায়ী মেয়র সাঈদ খোকন জানিয়েছেন, ঢাকা দেিণর নাগরিকদের ব্যবহারের জন্য এখন পর্যন্ত অত্যাধুনিক ৩০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। পুরনো আটটি টয়লেট সংস্কার করে দেয়া হয়েছে। আরও ৪৭টির মধ্যে ১৫টির নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ হওয়ার পথে। প্রতিবন্ধীবান্ধব এসব আধুনিক টয়লেটে ব্রেস্ট ফিডিং রুম, চেঞ্জ রুম, খাবার পানি, গোসল করার ব্যবস্থাসহ নানাবিধ সুবিধা রয়েছে।
অন্য দিকে গত মেয়াদে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দায়িত্বপালনকারী (নবনির্বাচিত মেয়র) আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২৭৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উন্মুক্ত স্থানগুলোর আধুনিকায়ন ও সবুজায়ন প্রকল্প’ চলমান রয়েছে। যা ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২২টি পার্ক এবং চারটি খেলার মাঠ উন্নয়ন, ১৫টি ফুটওভার ব্রিজ উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন, ৭৩টি স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট নির্মাণ এবং চারটি কবরস্থানের উন্নয়নকাজ করা হবে।
স আহমেদ ইফতেখার


আরো সংবাদ



premium cement

সকল