২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পা হারানো কৃষ্ণা রায় টাকা নয়, বিচার চান

-

পঙ্গু হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন কৃষ্ণা রায় চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) হিসাব বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক। গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটর মোড়ের ফুটপাথে হাঁটছিলেন তিনি। তখন ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্টের বেপরোয়া গতির একটি বাস রাস্তা থেকে ফুটপাথে উঠে তাকে চাপা দেয়। এতে তার বাঁ পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জীবন বাঁচাতে চিকিৎসকেরা তার হাঁটু থেকে নিচের অংশ কেটে ফেলেন।
কৃষ্ণা রায় বলেন, অনেক কষ্ট। ব্যথায় দিন-রাতে ঘুম হয় না। ঘুমানোর চেষ্টা করি, তন্দ্রার মতো আসে। আমার লাইফটা শেষ হয়ে গেল। আমি তো আর মুক্ত মনে চলতে পারব না, ঘরের কোনো কাজও করতে পারব না। আমার জীবনটা কিভাবে যাবে। বাসের চাপায় আহত হওয়ার পর চিকিৎসকেরা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলেছেন। যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তিনি।
সকালে ঘুম ভাঙার পর হঠাৎ মনে হলো আমার তো পা নেই, কেটে ফেলেছে। এটুকু বলার পর গলার স্বর থেমে এল কৃষ্ণা রায়ের। কান্না চেপে রাখার চেষ্টা করেও পারলেন না, কয়েক মিনিট পর চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘আমার পা নেই, এটা মেনে নিতে পারছি না।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসক অধ্যাপক মো: আবদুর রব বলেন, অস্ত্রোপচারে কারো পা কাটার পর মস্তিষ্ক তাকে সিগন্যাল দেয়, পা আছে। যে কারণে পা কেটে ফেলার বিষয়টি তিনি ভুলে যান। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য সময় লাগবে। অস্ত্রোপচার করে কৃত্রিম পা বসানোর উপযোগী করে তোলা হবে।
টানা দু'ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করে কৃষ্ণা রায়ের বাঁ পায়ের হাঁটু থেকে ঊরু পর্যন্ত অন্তত চার ইঞ্চি অংশ কাটতে হয়েছে চিকিৎসকদের। গত রোববার সকালে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) ছয় সদস্যের চিকিৎসক দল তার বিচ্ছিন্ন পায়ে এই অস্ত্রোপচার চালান।
সংক্রমণ ঠেকাতে ও জীবন সঙ্কটমুক্ত রাখতে কৃষ্ণা রায়ের পায়ে রোববার দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার চালাতে হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার বাসের চাকায় তার বাঁ পা পিষ্ট হলে হাঁটুর নিচ থেকে তা কেটে ফেলতে হয়। অবশ্য তার এমন অবস্থার জন্য অভিযুক্ত বাসের মালিক, চালক ও হেলপারকে গত ছয় দিনেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ তার পরিবার। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেয়া পঙ্গু হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক মো: আব্দুর রব বলেন, প্রথম দফা অস্ত্রোপচারে কৃষ্ণা রায়ের পায়ের যে অংশটুকু অপসারণ করা হয়েছিল, সেটুকু বাসের চাকায় একেবারেই পিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবে তার হাঁটুর হাড়েরও ক্ষতি হয়েছিল। সেখান থেকে গ্যাংগ্রিন ছড়ানোর আশঙ্কা ছিল। তা ছাড়া কৃত্রিম পা সংযোজনের জন্যও হাঁটুর অংশটুকু বাদ দিতে হতো। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষ্ণা রায় ভালো আছেন। তবে তাকে পর্যবেক্ষণ কক্ষে রাখা হয়েছে। অবস্থার আরো উন্নতি হলে কেবিনে স্থানান্তর করা হবে।
মায়ের এই অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন ছেলে কৌশিক চৌধুরী বলেন, বাস কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে এসেছিল। তারা মীমাংসার প্রস্তাব দিয়েছে। দুই লাখ টাকাও দিতে চেয়েছিল। আমি বলেছি, টাকা নয়, আমি আমার মায়ের পা হারানোর সাথে জড়িতদের বিচার চাই। আমার মা রাস্তাও পার হচ্ছিলেন না। ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছিলেন। চালক মায়ের ওপর বাস তুলে দিলো কেন?
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার এসআই খায়রুল আলম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি ঘটনার সময় বাসটি চালাচ্ছিলেন অনিয়মিত চালক মোরশেদ আলম। নিয়মিত চালক না থাকায় তাকে দিয়ে চালানো হচ্ছিল। মিডিয়াম ক্যাটাগরির যানবাহন চালানোর লাইসেন্স ছিল ট্রাস্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের বাসচালক মোরশেদের। এই ক্যাটাগরির লাইসেন্সে সাত টনের নিচে যানবাহন চালাতে পারবেন তিনি। তবু দিব্যি হাতে তুলে নিয়েছিলেন ট্রাস্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের বাসের স্টিয়ারিং। ট্রাস্টের বাস চালানোর প্রথম দিনেই মোরশেদ চাপা দিলেন কৃষ্ণা রায় চৌধুরীকে।
মোরশেদকে গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর মিরপুর এলাকার কাজীপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো উত্তরের একটি দল। পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. জুয়েল মিয়ার নেতৃত্বে দলটি বেশ কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানোর পর মোরশেদকে গ্রেপ্তার করে। মোরশেদের কাছে ভারী যানবাহন চালানোর কোনো লাইসেন্স পায়নি পিবিআইয়ের দলটি।॥


আরো সংবাদ



premium cement