২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মশা মারতে এবার ‘চিরুনি অভিযান’

-

এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার পাশাপাশি বাড়িঘর ও এলাকা পরিচ্ছন্ন করতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এই অভিযান চলাকালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করা হচ্ছে। বিশেষ এই অভিযানকে ‘চিরুনি অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন সংস্থার মেয়র আতিকুল ইসলাম।
আজ ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে পরীক্ষামূলকভাবে এই অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ অঞ্চলের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: মফিজুর রহমান এই কাজে লোকবল নিয়োগ দেবেন।
ডিএনসিসি সূত্র জানায়, ১০ দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা, পরিচ্ছন্নতা এবং এলাকার মানুষকে সচেতন করার কাজ করবে ডিএনসিসির প্রতিনিধিদল। এ কাজে ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাশাপাশি এলাকার প্রবীণ ও পরিচিত বাসিন্দা, বাড়ির মালিক ও ভাড়াটেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ডিএনসিসির এই কর্মসূচিতে একটি ওয়ার্ডকে ১০টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এই ১০টি ভাগকে আরো ১০টি সাব ব্লকে ভাগ করা হবে। প্রত্যেক সাব ব্লকে থাকবেন একজন দলনেতা। তার অধীনে কাজ করবেন অন্তত ১০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ওয়ার্ড কাউন্সিলররা দলনেতাসহ লোকবল ঠিক করে দেবেন।
দলনেতাদের নেতৃত্বে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাবেন। যে বাড়িতে মশার প্রজননস্থল পাওয়া যাবে, সেখানে স্টিকার লাগিয়ে সতর্ক দেয়া হবে। সপ্তাহখানেক পর সে বাড়িতে গিয়ে আবার পরিস্থিতি দেখা হবে। অভিযানে কোনো আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন বা প্রতিষ্ঠানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে তাদের জরিমানা করা হবে। এই কাজে এলাকার মানুষকে যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে ডিএনসিসি।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, পরিচ্ছন্নতার জন্য এবং এডিসের লার্ভা ধ্বংস করতে এই চিরুনি অভিযান চলবে। এই অভিযানের মাধ্যমে ডিএনসিসি এলাকাকে আমরা পরিচ্ছন্ন করতে চাই। পুরোনো ৩৬টি ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও লার্ভা ধ্বংসের বিশেষ কর্মসূচি শুরু করা হবে। এগুলোতে কাজের অগ্রগতি দেখে পর্যায়ক্রমে নতুন সব ওয়ার্ডে এই পদ্ধতিতে কাজ করা হবে।
ভবনে এডিস মশার লার্ভা, জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। রাজধানীর ধানমন্ডির ১১ নম্বর সড়কে নির্মাণাধীন একটি ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাওয়ায় নির্মাণকাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া শুক্রাবাদের আরেকটি নির্মাণাধীন ভবনের স্বত্বাধিকারীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন একই আদালত।
এ দিকে ইস্কাটন রোডে একটি নির্মাণাধীন ভবনের তত্ত্বাবধায়ককে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই অপরাধে বনানী ৬ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির ব্যবস্থাপককে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
গত রোববার দুপুরে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে এই জরিমানা ও দণ্ড দেন। ডিএসসিসির পক্ষে অভিযান পরিচালনা করেন অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। আর ডিএনসিসি থেকে আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী হাকিম সাজিদ আনোয়ার।
ডিএসসিসি জানিয়েছে, এরই মধ্যে ৫৮ হাজার বাড়িতে তারা অভিযান চালিয়েছে। এগুলোর মধ্যে অনেক বাড়িতেই এডিসের মশার লার্ভা পাওয়ায় তা ধ্বংস করে দেয়াসহ বাড়ির মালিকদের সচেতন করা হয়েছে।
কেন বেড়েছে চিকুনগুনিয়া-ডেঙ্গু
রাজধানী ঢাকার মশা নিধনে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর অবহেলার অভিযোগ তুলে মশকনিধন কর্মীদের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিয়েছিলেন দুই সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি) কাউন্সিলররা। সে অনুযায়ী কর্মীদের বেতন ও হাজিরা নির্ধারণসহ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর এ কাজ থেকে উধাও হয়ে পড়েন তারা। উপরন্তু মশার ওষুধ চুরি, কর্মীদের সাথে লিয়াজোঁ করে বেতনের টাকা ভাগাভাগিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। আর এর পর থেকেই নগরীতে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
মূলত রাজধানী ঢাকার মশা নিবারণের দায়িত্বে ছিল মশক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। কিন্তু অধিদফতরটির ব্যর্থতার পর এর দায়িত্ব নেয় সিটি করপোরেশন। অধিদফতরের মোট জনবলের সাথে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কিছু জনবল যুক্ত করে যৌথভাবেই নগরীর মশা নিবারণের কাজ করা হচ্ছে। এতে ওষুধসহ সব ধরনের সুবিধা দিচ্ছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু সংস্থা দু’টির ঢিলেমি ও অনিয়মের কারণে কোনোভাবেই মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের নেয়া কার্যক্রম হাইকোর্টকে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে এ বিষয়ে আদালত নতুন করে কোনো আদেশ দেননি। এ দিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যথাসময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেননি। এটা নিলে হয়তো এ রকম পরিস্থিতি হতো না। যাদের ওপর সঠিকভাবে বিষয়টি তদারকির দায়িত্ব ছিল, তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। তাদের মানসিকতা ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। স আমার ঢাকা প্রতিবেদক


আরো সংবাদ



premium cement