২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাজধানীতে হাঁটার গতিতে চলছে বাস

-

মেট্রোরেল নির্মাণের কারণে রাজধানীজুড়ে যাতায়াতে ভোগান্তির শেষ নেই। চওড়া সড়কের প্রায় অর্ধেকটাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাস বা রিকশা সবই চলে একটি লেনে। রাস্তাও এবড়োখেবড়ো, ভাঙাচোরা। আর এর ফলে হাঁটার গতিতে চলছে বাস।
সরকারি একটি জরিপ বলছে, মেট্রোরেল নির্মাণের কারণে ১৫ মিনিটে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে বাসসহ বিভিন্ন ধরনের গণপরিবহন। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় কাটাতে হয় যাত্রীদের। এই বর্ষা মওসুমে ভোগান্তি আরো বেড়েছে।
উত্তরা থেকে মিরপুর, ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ চলছে পুরোদমে। মেট্রোরেলের নির্মাণের কারণে মূল সড়কের আশপাশের ব্যবসায় বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে মিরপুর এলাকায় অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, বেশির ভাগের আয় কমেছে।
চলমান মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সর্বশেষ অগ্রগতির পাশাপাশি একটি জরিপও করা হয়েছে। জরিপে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নাগরিকদের কী ধরনের অসুবিধা হচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। মেট্রোরেলের সুবিধা নিয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে।
যেসব এলাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ করা হচ্ছে, সেসব এলাকার ২৬০ জন নারী-পুরুষের ওপর ওই মতামত জরিপ পরিচালনা করেছে সরকারি সংস্থা আইএমইডি। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ওই এলাকার যাত্রীদের বাসে প্রতি এক কিলোমিটার যেতে গড়ে ১৫ মিনিট সময় লাগে। সেই হিসাবে, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে মতিঝিলের দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার। এই পথ পাড়ি দিতে মিরপুরবাসীকে প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টা বাসে কাটাতে হয়।
উত্তরদাতাদের ৮১ শতাংশ মিরপুর, আগারগাঁও, পল্লবীসহ মেট্রোরেলের আশপাশের এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন না। কিন্তু ভবিষ্যতে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হবে, এই আশায় ভোগান্তি সহ্য করে তারা ওই এলাকায় ভাড়া থাকেন। জরিপ অনুযায়ী, ৯৪ শতাংশের মেট্রোরেল সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই।
মেট্রোরেল পরিচালনা করবে সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক যোগাযোগ সচিব এম এ এন সিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেল নির্মাণাধীন এলাকায় ব্যবসা মন্দা যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা ফুটপাথ ভেঙে দুটি গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেট্রোরেল নির্মাণ এলাকায় ৬৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের আয় কমেছে। মিরপুর এলাকায় সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, বাস্তবচিত্র আরো কঠিন। ব্যবসায়ীদের হাহাকার চলছে। লোকসানের মুখে বহু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে ব্যবসায় গুটিয়ে নেয়ার চিন্তা করছেন। মেট্রোরেল নির্মাণকাজ চলমান থাকায় ক্রেতা মিলছে না। সড়কের এপারের ক্রেতারা ওপারের দোকানে যেতে পারছেন না। আবার গাড়ি পার্কিং সুযোগ না থাকায় অনেকেই কেনাকাটা করতে ওই এলাকায় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর, সেনপাড়া, মনিপুর এলাকার টাইলস, স্যানিটারি পণ্য, আসবাবের ব্যবসায়ীরা। গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ না থাকায় এখানে ক্রেতা মিলছে না। ফলে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
পরিকল্পনামতো কাজ এগোচ্ছে কি
ঢাকার যানজট কমাতে এবং যাত্রীদের দ্রুত চলাচলের জন্য প্রায় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মেট্রোরেল প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে মিরপুর হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ হবে। এর মধ্যে ২০২০ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ট্রেন চলাচল চালু করার কথা। কিন্তু আইএমইডি বলছে, এই সময়ের মধ্যে মেট্রোরেল চালু করা চ্যালেঞ্জিং হবে।
২০১২ সালে নেয়া এই প্রকল্পের প্রথম সাত বছরে, অর্থাৎ গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ২৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। খরচ হয়েছে ছয় হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। অথচ এই সময়ে সাড়ে ৪৬ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর একযোগে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু হবে। প্রথমে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসে সরকার। তবে এই ডিসেম্বর মাসের পরে আগারগাঁও পর্যন্ত ভৌত কাজ শেষ। আর ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত কাজ শেষ হবে।
ষ আমার ঢাকা প্রতিবেদক


আরো সংবাদ



premium cement