১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাকার উল্টো পৃথিবীর গল্প

-

দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই চেয়ার, টেবিল, বিছানা এমনকি টয়লেটের কমোডও উল্টো হয়ে ঝুলে আছে! পাশের রুমে রঙিন সিঁড়ি ফ্লোর থেকে উঠছে না, নেমে আসছে সিলিং থেকে। হঠাৎই মনে হবে পৃথিবী উল্টে গেছে, নাকি আপনি উল্টে গেছেন। গোলক ধাঁধাময় রূপকথার এই রাজ্যে ঢুঁ মারতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে রাজধানীর লালমাটিয়ায়। ‘আপসাইড ডাউন’ গ্যালারি যেন বিভ্রমের জগৎ। মজারও বটে। সাতটি সুপরিসর কক্ষে থাকা নানান আসবাব ছাদ থেকে উল্টো হয়ে ঝুলছে। কক্ষগুলোর স্থাপত্যশৈলী ও আসবাবের অবস্থান এমনই অদ্ভুত যে, কায়দা করে এগুলোর সাথে তোলা ছবি উল্টো করে ধরলেই মনে হবে, লোকজন যেন হাওয়ায় ভাসছে।
‘ঢাকাবাসীর বিনোদন আজকাল রেস্টুরেন্টকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। নতুন ধরনের বিনোদন কেন্দ্র কী করা যায়, এটি নিয়ে ভাবতে ভাবতেই এই উল্টো পৃথিবীর পরিকল্পনা আসে মাথায়। বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরনের গ্যালারি আছে। তবে বাংলাদেশে এটাই প্রথম’Ñ বললেন আপসাইড ডাউনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ইশতিয়াক মাহমুদ অনিক। বাকি তিন উদ্যোক্তা হলেন শাফি আহমেদ জনি, আসিফুর রহমান ও মাহবুব ইমেল। চাকরি, ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সবাই একসাথে ব্যতিক্রমী কিছু একটা করার ইচ্ছা থেকেই আপসাইড ডাউনের পথচলা শুরু। প্রায় এক বছরের প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের পর গত মে মাসের ১৭ তারিখ গ্যালারি উন্মুক্ত করা হয় দর্শনার্থীদের জন্য। যথেষ্ট শঙ্কা ছিল, যেহেতু দেশে একেবারেই নতুন এ ধরনের গ্যালারি। পাশাপাশি চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল অনেক। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সেফটি ইস্যু। কোনো ধরনের দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সেটি নিয়ে থাকতে হয়েছে সচেতন। উদ্যোক্তারা জানান, দর্শকদের সাড়া পেয়েছেন অভাবনীয়। এই সাড়াকেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন উদ্যোক্তারা। একবারে ৫০ জনের বেশি প্রবেশ করতে পারেন না গ্যালারিতে। অনেকেই অপেক্ষা করেন বাইরে। তবে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও প্রবেশ করে সবাই উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। ভুলে যান অপেক্ষা করার বিরক্তি। আপসাইড ডাউনে রয়েছে বেডরুম, কিচেন, কিডস রুম। দর্শক যেন একঘেয়েমিতে না ভোগেন সে জন্য কিছু দিন পর পর বদলে ফেলা হবে রুমের ইন্টেরিওর। এ ছাড়াও কাজ চলছে আরো কয়েকটি রুমের।
অবস্থান লালমাটিয়ার সি ব্লকে, মিনার মসজিদের পূর্ব পাশে ২/৬ নম্বর ভবনের নিচতলায়। প্রথম কক্ষটি বসার কক্ষের আদলে সাজানো। চোখে পড়ল বসার চেয়ার, দাবার বোর্ড ও টেলিভিশন থেকে শুরু করে বইয়ের তাক সব কিছুই উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা।
বসার কক্ষ পেরিয়ে সামনে যেতেই শৌচাগার, শোবার ঘর, রান্নাঘর, শিশুদের খেলার কক্ষ ও অফিস কক্ষ সাজানোর আদলটিও একই রকম। সব ক’টি কক্ষে প্রচলিত আসবাবসহ ঘর সাজানোর উপকরণগুলোও উল্টো করে ঝোলানো। এর সাথে আছে নজরকাড়া আলোকসজ্জা। প্রতিটি কক্ষের আসবাবের সাথে বিশেষ ভঙ্গিতে তোলা স্বাভাবিক ছবি উল্টো করে ধরতেই পাওয়া যায় আসল মজা। বোঝা গেল, উল্টো করে ধরা এই ছবিই তৈরি করছে বিভ্রম। মনে হচ্ছে ছবির লোকগুলো ভেসে আছে। ঠিক যেমন মহাকাশে ভেসে থাকে সব। পাশাপাশি ‘তান্ত্রিক ঘর’ নামের আরেকটি কক্ষে চোখে পড়ল চমৎকার দেয়ালচিত্র। শূন্যের ওপর বসে থাকা বা শোয়ার ছবি তোলার জন্য তৈরি করা হয়েছে ঘরটি।
তিন হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের এই ‘ইলিউশনাল আর্ট গ্যালারি’ সাজানো হয়েছে ভিন্ন স্বাদ দেয়ার জন্য। এই গ্যালারি প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তা চার তরুণ জানালেন, বছর দুয়েক আগে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ঘুরতে গিয়ে এ ধরনের গ্যালারির সাথে প্রথমবারের মতো পরিচয় হয় তাদের। তবে এ ধারণাটি বাস্তবে রূপ দেয়া খুব একটা সহজ ছিল না। গ্যালারির অন্দরসজ্জার বিষয়ে বিভিন্ন স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করেও উদ্যোক্তারা তেমন কোনো সাহায্য পাননি। অনেকে তাদের এই উদ্যোগকে অবাস্তব বলে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
আপসাইড ডাউন গ্যালারিতে গতকাল রামপুরা থেকে ঘুরতে এসেছিলেন রেদোয়ান আহমেদ ও তার স্ত্রী শায়েলা করিম। গ্যালারি ঘুরে এই দম্পতি বলেন, দেশের বাইরে এ ধরনের গ্যালারির অনেক ছবি দেখতাম। এবার নিজ শহরে এমন কিছু পেয়ে খুব ভালো লাগছে। এখানকার স্টাফদের ব্যবহারও অমায়িক। দর্শনার্থীদের গ্যালারি ঘুরিয়ে দেখানো এবং ছবি তোলার কাজে সহযোগিতার জন্য সাতজন লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা প্রত্যেকে পেশাদার আলোকচিত্রী। দর্শনার্থীদের ছবি তোলার বিভিন্ন ভঙ্গি দেখিয়ে দেন তারা।
দর্শনার্থীদের জন্য এই গ্যালারি উন্মুক্ত থাকে বেলা ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। রোব ও সোমবার সাপ্তাহিক বন্ধ। সাধারণভাবে টিকিটের মূল্য ৪০০ টাকা। তবে ১০ বছরের কম বয়সীদের জন্য ২৫০ টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement