২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তিন সড়কে আবারো রিকশা চলাচল শুরু

-

সম্প্রতি রাজধানীর যানজট নিরসনে পৃথক তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ঘোষণা অনুযায়ী গাবতলী থেকে আজিমপুর (মিরপুর রোড), সায়েন্স ল্যাব থেকে শাহবাগ ও কুড়িল থেকে খিলগাঁও হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত সড়কে এখন থেকে আর রিকশা চলবে না। এ নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ রিকশাচালকেরা।
রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা রাজধানীর তিন সড়কে আগের মতোই রিকশা চলাচল করছে। সিটি করপোরেশন বা ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও কোনো বাধা দেননি। স্বাভাবিকভাবে রিকশা চলতে দেয়ায় রিকশাচালক-মালিকরাও কোনো আন্দোলনে যাননি। রিকশা-ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন বলেন, গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের সাথে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠকটি হয়নি। তবে ওই সড়কগুলোতে রিকশা চলতে দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, তাদের রিকশা চলাচলে বাধা দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
উভয় সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আন্দোলন চাঙ্গা হওয়ার প্রেক্ষাপটে রিকশা চলাচলে শিথিলতা আরোপ করা হয়েছে। তবে ওই তিনটি সড়কে রিকশা চলাচল করতে দেয়া হবে না।
ঢাকা শহরে প্রায় সময়ই বিভিন্ন রাস্তায় রিকশা চলাচল হঠাৎ বন্ধ করে দেয়া হয়। এর সঠিক কারণও জানা যায় না। যদি সেই রাস্তায় রিকশার চলাচল বন্ধ করাই হবে, তবে মাঝে মধ্যে চালু করা কেন? ভেবেচিন্তে একটি নিয়ম তৈরি করা হলে তা ভাঙার দরকার কী? যদি ওই রাস্তায় রিকশা চালানোয় সমস্যা সৃষ্টি হয়, তবে একেবারে বন্ধ করে দিলেই হয়। সে ক্ষেত্রে যাত্রীদের জানাবোঝাও স্পষ্ট থাকে, ফলে ‘শাশ্বত’ আইন ভাঙতে তারা উৎসাহীও হবে না। কিন্তু কর্তৃপক্ষই যদি নিয়মের বরখেলাপ করে।
ট্রাফিক বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীতে যে পরিমাণ রাস্তা আছে, তাতে মাত্রাতিরিক্ত গাড়ি চলছে। লাইসেন্স ছাড়াই চলছে লাখ লাখ রিকশা। ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকায় চলাচলকারী মানুষের মাত্র ৬ শতাংশ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে। অথচ এই গাড়িগুলো সড়কের ৮০ শতাংশ জায়গা ব্যবহার করে। অন্যদিকে, ঢাকার ৭৫ শতাংশ মানুষ চলাচল করে বাসে, যা মোট সড়কের ২০ ভাগের কম জায়গা ব্যবহার করে। এই চিত্র বদলানো নিয়ে কিন্তু খুব একটা কথা শোনা যায় না। অন্যদিকে এই শহরের রাস্তায় অনেক যাত্রীর হাত-পা, এমনকি জীবন গেছে, কিন্তু লক্কড়ঝক্কড় বাস চলা কি বন্ধ হয়েছে?
একটি বিষয় মনে রাখা দরকার। রিকশার ভাড়া পাবলিক বাসের চেয়ে বেশি, আবার সিএনজি বা অ্যাপভিত্তিক গাড়ির চেয়ে কম। চিত্রটি সমাজের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষকে নির্দেশ করে। তারা হলো মধ্যবিত্ত। তারা সাধ্য অনুযায়ী সাধকে বশে আনার নিরন্তর চেষ্টা করে যায়। সেই জায়গায় যখন রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করবে, তখন কমপক্ষে কিছু বিকল্প ব্যবস্থা রাখা উচিত, উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তা না হলে, মধ্যবিত্ত মানুষ দিশেহারা বোধ করে। যেমনটা বাজারে ঢুকলেই ইদানীং আমাদের হয়।
আসলে ঢাকা শহরে যানজটের সমস্যার কারণ অনেক গভীরে। সেগুলোর কোনোটার সমাধান না করে শুধু চটজলদি ও চটকদার কিছু সিদ্ধান্তেই কি রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না। রিকশা চলাচল বন্ধ করায় যে রিকশাচালকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরির মতো সময় কি তাদের দেয়া হয়নি। শ্রেণী হিসেবে রিকশাচালকেরা নিম্নবিত্তের। ৫০-১০০ টাকার হেরফেরে কিন্তু তাদের জীবন দুর্বিষহ হতে পারে। সেদিকটা একেবারে উপেক্ষা করে তাদের ‘গ্রামে গিয়ে ধান কাটার’ পরামর্শ দেয়াটা উপহাসের মতো শোনায়। এই ঢাকা শহরে আমি-আপনি যে প্রলোভনে এসেছি, ওই রিকশাচালকেরাও তার ব্যতিক্রম নয়। তা হলো বেশি আয়, বেশি সুযোগ-সুবিধা।
ডিএনসিসি মেয়র মো: আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বলেছি পর্যায়ক্রমে রিকশা বন্ধ করতে হবে। হুট করেই বন্ধ করে দিলে হবে না। রিকশাচালকদের সমস্যাও শুনতে হবে। এজন্য বাইলেনগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তটি এসেছে ঢাকা দক্ষিণ থেকে। আমরা বৈধ রিকশার পেছনে কিউআর কোর্ড করে দেবো। চালকদেরও ডাটাবেজ করা হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক রিকশাওয়ালাদের বিভিন্ন ড্রেস করে দেবো। অবৈধ রিকশা বন্ধ করব।
মোহাম্মদ সাঈদ খোকন রিকশা বন্ধে তার অনড় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, প্রধান সড়কে যানজটের অন্যতম কারণ ধীরগতির যানবাহন রিকশা। পৃথিবীর কোনো শহরে এমন অবস্থা নেই। অবৈধ যানবাহন বন্ধ, ফুটপাথ দখলমুক্ত ও অবৈধ পার্কিং বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে গঠিত কমিটি দু’টি প্রধান রুটে রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুরো শহর থেকে রিকশা উঠিয়ে দেয়া হয়নি। মাত্র ২০-২৫ কিলোমিটার সড়কে বন্ধ করা হয়েছে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সিদ্ধান্ত কার্যকরে ভূমিকা রাখতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল