২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

এডিস মশার ঝুঁকিতে রাজধানীর মানুষ

-

নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই রাজধানীতে অস্তিত্ব পাওয়া গেছে এডিস মশার। যে সময়ে এই মশার প্রজনন হচ্ছে তখন এই মশা নিধনে নগর কর্তৃপক্ষের সাঁড়াশি তৎপরতা ছিল না। ফলে মশার বংশবিস্তার ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি গুলশানে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মিরপুর ও ধানমণ্ডি।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি পুরান ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায়।
কয়েক বছর ধরে বর্ষা মওসুম এলেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এডিস মশার বিস্তার ঘটছে। এই মশার কামড়ে প্রতিদিনই শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। আইইডিসিআরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। তবে জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত পরিস্থিতি বেশি খারাপ থাকে। সাধারণত মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দায়ী। হঠাৎ থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশিমাত্রায় প্রজনন সক্ষমতা পায়। ফলে এডিস মশার বিস্তারও ঘটে বেশি। এ মশা যত বেশি হবে ডেঙ্গুর হারও তত বাড়বে। উৎস বন্ধ না করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে।
জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় গত মাসে একটি জরিপ পরিচালনা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোড নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা: সানিয়া তাহমিনার তত্ত্বাবধানে জরিপটি পরিচালিত হয়। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে পরিচালিত এ জরিপে উঠে আসে নারিন্দা, মতিঝিল, গুলশানসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে বিপজ্জনক মাত্রায়। অর্থাৎ এসব এলাকার বাসিন্দারা এখন ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াসহ এডিস মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন বেশি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৭টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানে ১০ দিন ধরে এ জরিপকাজ পরিচালিত হয়। এ সময় ৯৯৮টি বাড়ি পরিদর্শন ও নিরীক্ষণ করা হয়।
এ জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১৯টি ওয়ার্ডে ১৪১টি ট্র্যাপ বসানো হয়। জরিপে পাওয়া ফলাফলে দেখা যায়, এসব এলাকায় কিউলেক্স মশার আধিক্য অনেক বেশি। প্রতিটি ট্র্যাপে এডিস মশার গড় উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে দশমিক ৫৫ শতাংশ। কিউলেক্স মশা পাওয়া গেছে ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, মশার লার্ভার ঘনত্বের বিপজ্জনক সীমা ২০ বিআই। ঘনত্ব এর সমান বা বেশি হলে এডিস মশার উপদ্রব অনেক বেশি হবে। সে ক্ষেত্রে এ মশাবাহিত রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি অনেক বেশি হবে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা: এম এম আক্তারুজ্জামান জানান, এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব সূচক বিআই ২০ অথবা এর বেশি হলেই সেটা বিপজ্জনক। যেসব এলাকায় লার্ভার ঘনত্ব সূচক ২০ বা এর বেশি থাকবে, সেসব এলাকায় ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া সংক্রমণকারী এডিস মশার উপদ্রবও বেশি থাকবে।
জরিপে দেখা গেছে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিস মশার লার্ভার সর্বোচ্চ ঘনত্ব উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রায় দ্বিগুণ। উত্তর সিটি করপোরেশনে এডিস মশার লাভার সর্বোচ্চ ঘনত্ব ৪০ বিআই। অন্য দিকে দক্ষিণে এডিস লার্ভার সর্বোচ্চ ঘনত্ব ৮০ বিআই। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে (নারিন্দা) এডিস মশার লাভার সর্বোচ্চ ঘনত্ব পাওয়া গেছে ৮০। রাজধানীর দয়াগঞ্জ, নারিন্দা, শরৎগুপ্ত রোড, বসু বাজার লেন, মুনির হোসেন লেন, শাহ্ সাহেব লেন, মেথরপট্টি, গুরুদাস সরকার লেন, করাতিটোলা লেন ও স্বামীবাগের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছে ওয়ার্ডটি।
এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব সূচকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ১২ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে ঘনত্ব সূচক ৭০ বিআই। মালিবাগ বাজার রোড (মতিঝিল অংশ), মালিবাগ, বকশীবাগ, গুলবাগ, শান্তিবাগ ও ইন্দ্রাপুরী নিয়ে এ ওয়ার্ডটি গঠিত। এডিস মশার ঘনত্ব সূচক ৪০ পাওয়া গেছে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। ধানমন্ডি, কলাবাগান, গ্রিন রোড, তল্লাবাগ, শুক্রাবাদ, সোবহানবাগ নিয়ে ওয়ার্ডটি গঠিত।
এ ছাড়া লার্ভার ঘনত্ব ৩০ বিআই পাওয়া গেছে ৪ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে। বাসাবো, ওহাব কলোনি ও মাদারটেক এলাকা নিয়ে গঠিত ৪ নম্বর ওয়ার্ড। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে কে এম দাস লেন, অভয়দাস লেন, টয়েনবি সার্কুলার রোড, জয়কালী মন্দির রোড, ভগবতী ব্যানার্জী রোড, ফোল্ডার স্ট্রিট, হাটখোলা রোড ও আর কে মিশন রোড। এর বাইরে এডিস লার্ভার ঘনত্ব সূচক ২০ বিআই পাওয়া গেছে ৬, ৭, ১৪, ১৯, ২০, ২১, ২২, ৪৩, ৪৭ ও ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, এর মধ্যে এডিস লার্ভার সর্বোচ্চ ঘনত্ব ৪০ বিআই পাওয়া গেছে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে। বড় মগবাজার, দিলু রোড, নিউ ইস্কাটন রোড, পশ্চিম মালিবাগ, মধ্য পেয়ারাবাগ ও উত্তর নয়াটোলার প্রথম ভাগ নিয়ে এ ওয়ার্ড গঠিত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘনত্ব ৩০ বিআই পাওয়া গেছে ১, ৪ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। এর মধ্যে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত বনানী, গুলশান ১ ও ২, গুলশান সুইপার কলোনি ও কড়াইল বস্তি নিয়ে। এছাড়া ১ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে উত্তরা মডেল টাউন এবং ২ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে মিরপুর ১২ ও উত্তর কালশী।
এর বাইরে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব সূচক ২০ বিআই পাওয়া গেছে ডিএনসিসির ১৬, ২২ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে। রাজধানীর কাফরুল ও ইব্রাহীমপুর নিয়ে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। ২২ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে রামপুরা, উলন, বাগিচার টেক, নাছিরের টেক, ওমর আলী লেন ও পশ্চিম হাজীপাড়া। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে খিলগাঁও বি জোন, খিলগাঁও পূর্ব হাজীপাড়া, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, মালিবাগ ও মালিবাগ বাজার রোড।
রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে গুলশান ও ধানমণ্ডির। এর মধ্যে গুলশানের একাংশ কূটনৈতিক জোনের অন্তর্ভুক্ত থাকায় সেখানে দেশী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পাশাপাশি বিদেশীদেরও চলাচল রয়েছে। রাজধানীর অন্যান্য এলাকার তুলনায় বেশি পরিচ্ছন্ন হওয়ার পরও এলাকা দুটিতে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা: এম এম আক্তারুজ্জামান বলেন, গুলশান ও ধানমণ্ডি লেকবেষ্টিত এলাকা। লেকের পানির প্রবাহ না থাকায় সেখানে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব অনেক বেশি থাকে। এজন্য এ দুটি এলাকায় বসবাসকারীদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
অ্যাডাল্ট এডিস মশার ঘনত্ব নির্ণয়ে স্থাপিত বিজি সেন্টিনাল ট্র্যাপ-২ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতি নয়টি পুরুষ এডিস মশার বিপরীতে নারী মশা রয়েছে তিনটি।
অন্য দিকে দক্ষিণের ২৬টি পুরুষ এডিস মশার বিপরীতে নারী এডিস মশা রয়েছে ৪০টি, যা খুবই বিপজ্জনক।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল