২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে ড্যাপের কৌশল

-

ঢাকাকে আরো বাসযোগ্য ও উন্নত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে প্রক্রিয়াধীন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) সাতটি নতুন কর্মকৌশল যুক্ত করা হচ্ছে। এগুলো যুক্ত হলে নগরে জলাভূমি সংরক্ষণ, উন্নত বাসস্থান, প্রশস্ত সড়ক, উন্মুক্ত স্থান, বিনোদনকেন্দ্রসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উদ্যোগে প্রণয়ন করা হচ্ছে এই ড্যাপ। এতে নতুন উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে ভূমি পুনরুন্নয়ন, ভূমি পুনর্বিন্যাস, উন্নয়ন স্বত্ব প্রতিস্থাপন পন্থা (টিডিআর), ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন, উন্নতি সাধন ফি, স্কুল জোনিং ও ডেনসিটি জোনিং। ইতোমধ্যেই তিনটি কর্মকৌশলের খসড়া নীতিমালা তৈরি হয়েছে। এগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী ও বিশেষজ্ঞদের মতামতও নেয়া হচ্ছে। এরপর নীতিমালাগুলো চূড়ান্ত করা হবে।
রাজউকের আওতাধীন এলাকা এক হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার। এর জন্য বর্তমান ড্যাপের গেজেট হয় ২০১০ সালে। মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। এরপর সংশোধিত আরেকটি ড্যাপ করার উদ্যোগ নেয় রাজউক। নতুন ড্যাপের কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।
বদলাবে আবাসন ব্যবস্থাপনা
প্রক্রিয়াধীন ড্যাপের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভূমি পুনরুন্নয়ন ধারণা ইতোমধ্যেই বেশ আলোচিত হয়েছে। সম্প্রতি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পর ওই এলাকায় ছয়টি স্থানসহ মোট সাতটি স্থানে এ পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজউক। এখন এটি প্রকল্প আকারে রূপ দেয়া হবে। এই পদ্ধতিতে ছোট প্লটগুলো একত্র করে বড় আবাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। জমির মালিকেরা হিস্যা অনুযায়ী ফ্ল্যাট বা ভবনের অংশ পাবেন। এতে ওই এলাকায় উন্নত বাসস্থান, প্রশস্ত সড়ক, উন্মুক্ত স্থান, বিনোদনকেন্দ্রসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আর ভূমি পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের একত্র করে সড়ক, উন্মুক্ত স্থান, পার্ক, জলাশয়সহ কমিউনিটিভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হবে।
জলাভূমি ও কৃষিজমি রক্ষা
নতুন ড্যাপে আরেকটি আলোচিত বিষয় হচ্ছে উন্নয়ন স্বত্ব প্রতিস্থাপন পন্থা বা ট্রান্সফার অব ডেভেলপমেন্ট রাইটস (টিডিআর)। মূলত ব্যক্তিমালিকানাধীন কৃষিজমি ও জলাভূমি রক্ষায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। ড্যাপ-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও সুন্দর নগরের স্বার্থে কৃষিজমি ও জলাভূমি রক্ষা করা প্রয়োজন। মহাপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত এসব জমির অন্য কোনো ধরনের ব্যবহারেরও সুযোগ নেই। কিন্তু ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় এমন জমি রক্ষা করাও কঠিন। কারণ জলাভূমি ভরাট করে বাড়ি করতে রাজউক থেকে অনুমোদন দেয়া হয় না। তখন ওই জমির মালিক ধীরে ধীরে জলাশয়টি ভরাট করেন অথবা কম দামে প্রভাবশালী কারো কাছে বিক্রি করে দেন। এভাবে একপর্যায়ে জলাভূমিটি হারিয়ে যায়। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে টিডিআর। এই পদ্ধতিতে কৃষি বা জলাভূমির মালিককে একটি সনদ দেয়া হবে।
মেট্রোরেল
ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন নামের কর্মপন্থাটি নেয়া হয়েছে মেট্রোরেলের কথা চিন্তা করে। এর মাধ্যমে মেট্রোরেল স্টেশন থেকে ২৫০-১০০০ মিটারের মধ্যে উচ্চ সুউচ্চ ভবন নির্মাণে উৎসাহিত করা হবে।
স্কুল জোনিং ও ডেনসিটি জোনিং এ দু’টি বিষয়ও নতুন। রাজউকের অন্তর্ভুক্ত কিছু এলাকায় জনঘনত্ব বৃদ্ধি ও অপরিকল্পিতভাবে এলাকাভিত্তিক স্কুল গড়ে ওঠার কারণে রাজউক এই উদ্যোগ নিচ্ছে। রাজউক সূত্র বলছে, এখন ঢাকার বেশির ভাগ ভালো স্কুল গুলশান, বনানী, ধানমন্ডিকেন্দ্রিক। এতে একটি এলাকায় প্রচুর চাপ পড়ে। আবার অনেক এলাকায় ভালো কোনো স্কুল নেই। স্কুল জোনিংয়ের মাধ্যমে জনঘনত্ব অনুযায়ী কোনো এলাকার জন্য কতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করা হবে। কোনো এলাকায় নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলে নতুন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়া হবে না। নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদন দেয়া হবে এমন এলাকায় যেখানে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম বা নেই।


আরো সংবাদ



premium cement