১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভিকারুননিসায় দুই বছরে অতিরিক্ত ৪২৫ শিক্ষার্থী ভর্তি

-

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) এক নিরীক্ষা প্রতিবেদন (অডিট রিপোর্ট) থেকে জানা গেছে, গত দুই বছরে ভিকারুননিসায় প্রথম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত অতিরিক্ত ৪২৫ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, অর্থ নিয়ে এসব শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ভিকারুননিসার তিন বছরের পারফরম্যান্স অডিট রিপোর্ট সম্প্রতি মাউশিতে জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক সাখায়েত হোসেন বিশ্বাসের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ওই প্রতিবেদন তৈরি করেন। নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে অতিরিক্ত ভর্তি হয়েছে ২১৩ জন। সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণী ছাড়া প্রতি শ্রেণীতেই অতিরিক্ত ভর্তি করা হয়। চলতি বছর (২০১৯) প্রতিটি শ্রেণীতেই অতিরিক্ত ভর্তি করা হয়েছে। এবার প্রথম শ্রেণীতে সর্বাধিক ১৬০ শিক্ষার্থী অতিরিক্ত ভর্তি করা হয়। প্রথম শ্রেণীতে মোট এক হাজার ৮৯২ আসনের বিপরীতে ভর্তি করা হয়েছে দুই হাজার ৫০ জন। দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৫৬, তৃতীয় শ্রেণীতে ৯৪, চতুর্থ শ্রেণীতে ৩৯, পঞ্চম শ্রেণীতে ৩১, ষষ্ঠ শ্রেণীতে ১১, সপ্তম শ্রেণীতে ২৫, অষ্টম শ্রেণীতে দুই এবং নবম শ্রেণীর বিজ্ঞান শাখায় সাতজনসহ মোট ৪২৫ জনকে অতিরিক্ত ভর্তি করা হয়। এ বিষয়ে মাউশির (মাধ্যমিক) পরিচালক অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান বলেন, যেকোনো প্রতিবেদন আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠাই এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেই। অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা দেবে, আমরা তা বাস্তবায়ন করব। প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে অতিরিক্ত ভর্তি থেকে বিরত থাকার সুপারিশ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, এত সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি আমার ধারণার বাইরে। কিভাবে অতিরিক্ত ভর্তি হলো তা আমি জানি না। এটি আসলে অ্যাকাডেমিক বিষয়। তদন্তে যেহেতু এসেছে, বিষয়টি দেখা হবে। পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্য যদি এতে জড়িত থাকে, তাহলে বিষয়টি আমি দেখব।
এ বিষয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘আমি নতুন করে দায়িত্ব নিয়েছি। ভর্তি কার্যক্রম আমার সময়ে হয়নি। আগে যারা ছিলেন তারা এ বিষয়ে জবাব দিতে পারবেন’
অতিরিক্ত ভর্তির বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাধিক শিক্ষক বলেন, মাউশির তদন্ত কর্মকর্তারা এসে জেনে গেছেন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও একজন শিক্ষকসহ ওই ঘটনায় আরো কারা জড়িত আছেন। সভাপতি আরেকজন শিক্ষককে সাথে নিয়ে অতিরিক্ত ভর্তির বিষয়টি দেখভাল করেছেন। তবে ওই শিক্ষককের নাম প্রকাশ করতে চাননি শিক্ষকেরা।
অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর গত বছরের ৫ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, নিয়মের বাইরে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়। এ বিষয়ে আমি আগেও বলেছি। কিন্তু কোনো অভিভাবক অভিযোগ করেননি। সেখানে ১০ লাখ টাকা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করেন। সেটা বন্ধ করতে আমরা লটারি সিস্টেম চালু করেছিলাম। কিন্তু তারা অনেক বেশি ছাত্রী তারা ভর্তি করে। এ থেকে বোঝাই যায়, কেন তারা অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করেন। ভবিষ্যতে যেন অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির কারণে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নতুন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির কাছে আবেদন জানিয়েছেন অভিভাবকেরা। তাদের দাবি, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির সাথে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হোক। এই দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
ষ আমার ঢাকা প্রাতিবেদক


আরো সংবাদ



premium cement