২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

উদ্ভিদের জীবন্ত জাদুঘর

-

ঢাকা শহরে বিশাল আকারে প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব বেশি নেই। অল্প যে ক’টি আছে, তার মধ্যে একটি হলোÑ মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন। এখানে হাঁটতে হাঁটতে চারপাশে চোখে পড়বে বিভিন্ন প্রকৃতির গাছ। উঁচু টিলা আর নিচু জলাশয়ের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে ভালোই লাগবে সবার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত মানুষের পদচারণে মুখরিত থাকে দেশের সবচেয়ে বড় এ উদ্ভিদ উদ্যান। এখানে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে। অনেকেই নগরজীবনের কোলাহল ভুলে একটু নির্জনতার স্বাদ নিতে এবং নিজেকে প্রকৃতির মধ্যে বিলিয়ে দিতে ঘুরে আসতে পারেন সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এ উদ্যানে। সপ্তাহের প্রতিদিনই বেড়াতে যেতে পারেন উদ্ভিদ উদ্যানে। উদ্ভিদ উদ্যানের প্রায় পাঁচ একর জায়গাজুড়ে একটি নার্সারি রয়েছে। এ নার্সারিতে ফুল, ফল, লতা ও গুল্ম ইত্যাদি উদ্ভিদের চারা চাষ করা হয়। সরকারনির্ধারিত মূল্যে এই নার্সারি থেকে চারা কেনা যায়।
১৯৬১ সালে মিরপুরে এ উদ্যানের যাত্রা শুরু হয়। বিচিত্র প্রজাতির উদ্ভিদের সমারোহে ৫৭টি বিভাগে বিভক্ত এ উদ্যানটি। এর মূল উদ্দেশ্যÑ বিভিন্ন জাতের উদ্ভিদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও জিনপুল তৈরি। এ উদ্যানে রয়েছে গোলাপ বাগান, পাইন বাগান, ফলগাছের বাগান, বাঁশবাগান, পামগাছের বাগান, মওসুমি বাগান, ঔষধি গাছের বাগান, পদ্ম পুকুর, শাপলা পুকুর, ক্যাকটাস হাউজ, অর্কিড হাউজ এবং ইনডোর গাছের জন্য রয়েছে নেট হাউজ। ছোট-বড় জলাশয় আছে সাতটি, মোট আয়তন প্রায় ১১ একর। প্রতি বছর সাধারণ উদ্ভিদপ্রেমীসহ শিক্ষা ও গবেষণার কাজে এ উদ্যান পরিদর্শনে আসেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। এখানে বর্তমানে ১১৭টি উদ্ভিদ পরিবারভুক্ত ৯৫২ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। যার মধ্যে ২৫৬টি প্রজাতির ৩৫ হাজার বৃক্ষ, ৩১০ প্রজাতির ১০ হাজার গুল্ম ও ৩৭৮ প্রজাতির ১২ হাজার বিরল ও লতা জাতীয় উদ্ভিদ।
রাজধানীর সবচেয়ে বড় ও দৃষ্টিনন্দন স্থান হিসেবে পরিচিত উদ্ভিদ উদ্যান ২০৮ একর জমির ওপর মিরপুরে অবস্থিত। এ উদ্যানে আছে লেক, ঘূর্ণায়মান হাঁটার পথ, ১১৭টি উদ্ভিদ পরিবারভুক্ত ৯৫২ প্রজাতির দেশী-বিদেশী উদ্ভিদ। এখানে রয়েছে বহু প্রজাতির উদ্ভিদ। উদ্ভিদগুলো শনাক্ত করার সুবিধার্থে প্রতিটি উদ্ভিদের গায়ে নামফলক দেয়া আছে। বিশাল আয়তনের এ উদ্যান ঘুরে দেখতে অনেক সময় লাগতে পারে। তাই ইচ্ছা করলে কিছু খাবারও সাথে নিতে পারেন। জীবন্ত এ উদ্ভিদ সংগ্রহশালায় রয়েছে বিরল প্রজাতির অ্যাভেনিয়াম, বচ ইপিসিয়া, অ্যাক্সিফানসহ অস্ট্রেলিয়ার সিলভার ওক জ্যাকারান্ডা ও ট্যাবে বুইয়া।
প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে আফ্রিকা থেকে সংগ্রহ করা বাওবাব গাছ। এর একটু পাশেই নানা জাতের গোলাপ বাগান। প্রধান পথ ধরে একটু সামনে এগোলেই পাওয়া যাবে অস্ট্রেলিয়ার সিলভার ওক, জ্যাকারান্ডা ও ট্যাবেবুইয়া, জাপানের কর্পূর, মালয়েশিয়ার ওয়েল পাম, থাইল্যান্ডের রামবুতাম। রাস্তার দুই পাশে রয়েছে দেবদারু ও অস্ট্রেলিয়া থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন প্রজাতির ইউক্যালিপটাসের সমারোহ। চৌরাস্তা থেকে উত্তরের রাস্তাটি ধরে গেলে দেখা যাবে কর্পূর, ম্যাগনোলিয়া, শ্বেতচন্দন, গ্লিরিসিডিয়া, ফার্ন কড়ই, তুন, কেশিয়া নড়ুসা, ট্যাবেবুইয়া ও চেরি গাছ। এখানে আছে ক্যাকটাসের এক বিশাল সংগ্রহ। ওল্ডম্যান, ফিসহুক ক্যাকটাস, ম্যামিলারিয়া, ক্ষেপালিয়া, মেলো ক্যাকটাস, গোল্ডেন ব্যারেল, সিরিয়াম হেক্সোজেনাস, র্যাট টেইল, অ্যাপাংসিয়া সিডাম, হাওয়ার্থিয়া, পিকটোরিয়া রাখা হয়েছে স্বচ্ছ কাঁচঘরে। উদ্যানের গোলাপ বাগানের অভ্যন্তরে পাকা জলাধারে আছে ব্রাজিলের একটি জলজ উদ্ভিদ, নাম তার আমাজান লিলি। অফিস আঙ্গিনা ঘেঁষে আছে নেট হাউজ ও নার্সারি। রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির চারা, বিক্রিও করা হয়। উদ্যানের অফিস এলাকার পশ্চিম পাশে অর্কিড হাউজ। চোখে পড়ল জারবেরা, অ্যানথুরিয়াম, বরুন ফেলসিয়া, ক্যামিলিয়া, পারুল, হেলকুনিয়াসহ নানা বাহারি বৃক্ষ। সাথেই রয়েছে অ্যামহাসটিয়া অ্যাভোক্যাডো, বেগুনি এলামান্ডা, থাইল্যান্ডের গন্ধরাজ। গর্জন বাগানের উত্তর পাশে ভেষজ উদ্ভিদ বাগান। কালো মেঘ, তুলসি, আতমোরা, শতমূলী, পুনর্নভা, থানকুনি, কুমারী লতা, বাসক, বচসহ আছে হরেক রকম ভেষজ উদ্ভিদের সংগ্রহ।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল