২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

অবশেষে ক্যান্সার মুক্ত হচ্ছে হাতিরঝিল

-

রাজধানীর হাতিরঝিলে তৈরী পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষসংগঠন বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তবে পুরো ভবনটি কখন কিভাবে ভাঙা হবে, এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিজিএমইএ ভবন নিয়ে আদালতে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানিয়েছেন, বিজিএমইএ ভবন সরকারের সম্পত্তি না। আদালত ভবনটি সরকারের পক্ষে বাজেয়াপ্ত করেনি। এই সম্পত্তিটি বিজিএমইএরই। বিজিএমইএ অবৈধভাবে ভবন করেছিল। তাদেরই ভাঙার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। বিজিএমইএ ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় চেয়েছিল। আদালত সময় দিয়েছেন। এখন ভবনটি যদি বিজিএমইএ না ভাঙে তবে আদালতের নির্দেশে রাজউক ভাঙবে। তবে ভবন ভাঙতে রাজউকের কার্যক্রমের সব খরচ বহন করতে হবে বিজিএমইএকে। এ ব্যাপারে রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, বিজিএমইএ ভবন বিজিএমইএর অর্থায়নে ভাঙার নির্দেশ রয়েছে। তারা ব্যর্থ হলে রাজউক ভাঙলেও ভাঙার খরচ বিজিএমইএ বহন করবে।
গত ১৬ এপ্রিল সকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাথে নিয়ে বিজিএমইএ ভবনে যান রাজউকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) খন্দকার অলিউর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিজিএমইএ ভবন পরিদর্শন করে ভবনটির বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। রায়ে বলা হয়, ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হলো। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। প্রথমে ছয় মাস এবং পরে সাত মাস সময়ও পায় তারা। সর্বশেষ গত বছর নতুন করে এক বছর সময় পায় সংগঠনটি। সে সময় তারা মুচলেকা দেয়, ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হবে না।
জমির স্বত্ব না থাকা ও জলাধার আইন লঙ্ঘন করায় হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটি ভেঙে ফেলার নির্দেশনা আসে উচ্চ আদালত থেকে। সে জন্য ভবনটি ছাড়তে গত ১২ এপ্রিল পর্যন্ত বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকে সময় দিয়েছিলেন আদালত। ভবনের কার্যক্রম সরিয়ে নিতে উত্তরা তৃতীয় পর্বে ১১০ কাঠা জমির ওপর বিজিএমইএ নতুন ভবন নির্মাণ করছে। ইতোমধ্যে ১৩ তলা ভবনের ৬ তলার কাজ শেষ হয়েছে। গত ৩ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্মাণাধীন ভবনটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কাওরানবাজারে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটি দু’টি বেসমেন্টসহ ১৬ তলা। বিজিএমইএ ব্যবহার করে চারটি তলা। বাকি জায়গা দু’টি ব্যাংকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হলেও আইনি জটিলতার কারণে তাদের মালিকানা বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। ভবনের ওপরের দুই তলা নিয়ে বিলাসবহুল ‘অ্যাপারেল ক্লাব’ করা হয়েছে। সেখানে সংগঠনের সদস্যদের জন্য সুইমিং পুল, ব্যায়ামাগার, রেস্টুরেন্ট ও সভাকক্ষ আছে। বড় আকারের একটি মিলনায়তনও আছে।
তথ্য-প্রযুক্তিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, র্যাংগস ভবন অপরিকল্পিতভাবে ভাঙার কারণে অন্তত ৯ জন শ্রমিক মারা গিয়েছিলেন। তাই নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ পদ্ধতিতে ভাঙতে হলে বিজিএমইএ ভবনের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরক বসানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে হবে। যেহেতু এ দেশে এই পদ্ধতি আগে আর ব্যবহৃত হয়নি, তাই এখানে বিদেশী বিশেষজ্ঞ রাখতেই হবে।

বিজিএমইএ ভবন ভাঙবে কোন প্রতিষ্ঠান
রাজধানীর দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলের মধ্যে ‘বিষফোঁড়া’ বাংলাদেশ তৈরী পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবন ভাঙার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেছেন, বিজিএমইএ ভবন ভাঙার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আর এ ভবন কোন প্রতিষ্ঠান ভাঙবে তা ২৫ এপ্রিলের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান না পাওয়া গেলে আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তির ব্যবহার করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষ থেকে এ ভবন ভাঙা হবে।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল, চমৎকার একটি স্থাপনা ঢাকার উপকণ্ঠে অনেক ব্যয়ে অনেক পরিকল্পনার ভেতর থেকে সুন্দর একটি ঝিল করা হয়েছে। কিন্তু ঝিলের মাঝখানে একটি বিষফোঁড়ার মতো বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের সময়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি। ফলে অনাকাক্সিক্ষতভাবে এ ভবনটি সেখানে বেড়ে উঠেছে। এর ব্যর্থতা-দায় আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেকেরই রয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবৈধভাবে নির্মিত বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে আমরা সেটি ভেঙে ফেলার কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। গত ১৬ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কার্যক্রম শুরু করেছি। এরই মধ্যে ভবনটিকে আমাদের দখলে নিয়েছি, ভবনের অন্য কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছি, সেবামূলক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। ভবনটি ভাঙার বিষয়ে একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। ভবনটি গুঁড়িয়ে দেয়ার সময় বা পরে কোনো দুর্ঘটনার মুখোমুখি না হতে হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি প্রয়োজন আছে। অতীতে র্যাংস প্লাজা ভাঙতে গিয়ে অনাকাক্সিক্ষতভাবে বেশ প্রাণহানি হয়েছে।
এবারে আমাদের প্রস্তুতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসম্মত, যাতে এ ভবনটি ভাঙতে গিয়ে কোনো প্রাণহানি বা ক্ষতির মুখোমুখি না হতে হয়Ñ সে প্রস্তুতি নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে আমরা বিজ্ঞাপন দিয়ে এ জাতীয় ইমারত ভাঙায় যারা অভিজ্ঞ তাদের আগামী ২৪ তারিখের মধ্যে কোটেশন দাখিলের জন্য অনুরোধ করেছি। আইনগত পদ্ধতি অনুসরণের স্বার্থেই বিভিন্ন আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের কাছে টেন্ডার আহ্বান করেছি।
২৪ এপ্রিলের ভেতর টেন্ডার পেয়ে আমরা ২৫ এপ্রিলের মধ্যে ভবন ভাঙার সিদ্ধান্ত নেবো। আর যদি উপযুক্ত সংস্থা না পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তির ব্যবহার করে আমরা রাজউকের পক্ষ থেকে এ ভবন ভাঙার জন্য যে প্রক্রিয়া দরকার সেই প্রক্রিয়ায় যাবো। যেহেতু এ জাতীয় ইমারত ভাঙতে হলে অন্যান্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেয়ার একটা বিধান আছে। সেই সুযোগটাকে আমরা কাজে লাগাব। উপযুক্ত আহ্বানকারী না পাওয়া গেলে আমরা নিজেরাই ভাঙবো। ভাঙার ক্ষেত্রে দায়দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। কারণ আমরা চাই না, রাষ্ট্রের চমৎকার একটি স্থাপনার মাঝখানে বেআইনি একটি ভবন টিকে থাকুক।
আমরা আশা করছি, ২৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে দেবো এবং সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশনা আছে, সেই নির্দেশনার আওতায় কোনোভাবেই টোটাল ভবন ভেঙে এবং সেখানে যা স্তূপ তা সরিয়ে ফেলা তিন মাসের ঊর্ধ্বে হবে না। জায়গাটা পরিষ্কার হয়ে যাবে তিন মাসের মধ্যে। হ


আরো সংবাদ



premium cement