২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে রাজধানীর মানুষ

-

মানুষের বেঁচে থাকার জন্য নির্মল বায়ু অপরিহার্য। কিন্তু বায়ুদূষণে পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিপন্ন হওয়ায় শহরে সঙ্কটাপন্ন অবস্থা বিরাজ করছে। মনুষ্যসৃষ্ট এসব দূষণের কারণে মানুষের প্রাণসংহার ঘটছে অহরহ। অপরিকল্পিত গড়ে ওঠা এসব ইটভাটার কারণে মানুষ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ফুসফুসের রোগের অন্যতম উপাদান হলো বিষাক্ত কালো ধোঁয়া এবং বায়ুদূষণ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর উপাদান আছে, তার মধ্যে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক উপাদান হচ্ছে পিএম ২.৫। এতদিন এই উপাদান সবচেয়ে বেশি নির্গত করত চীন। গত দুই বছরে চীনকে টপকে ওই দূষণকারী স্থানটি দখল করে নিয়েছে ভারত। চীন ও ভারতের পরই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে জাপানের টোকিও শহর। প্রতিবেদনটিতে মূলত কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বায়ুদূষণের পরিমাণ পরিমাপ করা হয়েছে।
১০ বছর ধরে ঢাকা ও বাংলাদেশের বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণ করছেন অধ্যাপক আবদুস সালাম। তার হিসাব অনুযায়ী, মূলত যান্ত্রিক উৎস থেকে সৃষ্টি হওয়া ধোঁয়া ও ধুলা থেকে বাতাসে ক্ষুদ্র কণাগুলো ছড়িয়ে পড়ে। মূলত কয়লা ও জৈবজ্বালানি পোড়ানোর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর কণার সৃষ্টি হয়। ইটভাটা, শিল্পকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া এবং সড়ক ও ভবন নির্মাণসামগ্রী থেকে তৈরি ধুলায় এগুলো সৃষ্টি হয়।
অধ্যাপক সালামের নেতৃত্বে পরিচালিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে কয়লা পোড়ানো হয় এমন শিল্পকারখানার সংখ্যা বাড়ছে। একই সাথে ঢাকাসহ সারা দেশে যে নির্মাণকাজ হচ্ছে, তাতে প্রচুর ধুলা ও ধোঁয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। শুষ্ক মওসুমে বাতাসে ওই ক্ষুদ্র কণাগুলো এমনিতেই বেশি পরিমাণে পরিবাহিত হয়। আর এই সময়ে বেশি নির্মাণকাজ চলায় এবং সব ক’টি ইটভাটা চালু থাকায় দূষণের পরিমাণ বেড়ে যায়।
পরিবেশ অধিদফতরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, শুষ্ক মওসুমে যে নির্মাণকাজগুলো হচ্ছে, তাতে সকাল ও বিকেল দুই বেলা নির্মাণসামগ্রী, বিশেষ করে বালু ও ইট পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু রাজধানীর বেশির ভাগ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের নির্মাণসামগ্রী যত্রতত্র ফেলে রেখে ধুলা সৃষ্টি করছে। চলতি শুষ্ক মওসুমে বিপজ্জনক হারে রাজধানীজুড়ে বায়ুদূষণ বাড়ছে। বিভিন্ন ধরনের মেরামত, নির্মাণ ও মেট্রোরেল প্রকল্পের উন্নয়ন কাজের কারণেও বায়ু দূষিত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার ৯০ শতাংশ মানুষই এখন বায়ুদূষণের শিকার। বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৪০ শতাংশই বায়ুদূষণের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন।
গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও মানবাধিকার সংগঠন নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের (নাসফ) উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শুষ্ক মওসুমে ঢাকা মহানগরীতে ধুলাদূষণের প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে যায়। এ মওসুমেই হাজার হাজার ইটভাটায় ইট প্রস্তুত ও পোড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি মহানগরীতে অপরিকল্পিত গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, ড্রেনেজ এবং রাস্তাঘাট উন্নয়ন, মেরামত ও খোঁড়াখুঁড়ি বেড়ে যায়।
বাতাসে ধুলোবালি মিশে মানুষের ভোগান্তি যেমন হচ্ছে, তেমনি পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় বায়ুদূষণ থেকে নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য কার্যকর ও সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নেয়ার ওপর জোর দেন তারা। বায়ুদূষণের লাগাম টানতে ১২টি সুপারিশ করেছে পবা। সড়ক মেরামতের পর রাস্তার দু’পাশ থেকে নির্মাণসামগ্রী ও মাটি দ্রুত সরিয়ে ফেলার সুপারিশ রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement