২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঢাকার প্রাকৃতিক জলাধার কমছেই

-

ঢাকা ও আশপাশে প্রাকৃতিক জলাধার প্রতিনিয়তই কমছে। গত চার দশকে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। কোথাও জলাধার ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। কোথাও গড়ে উঠেছে শিল্প। সেতু বিভাগের ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে এবার আক্রান্ত উত্তরার একমাত্র প্রাকৃতিক জলাধারটিও। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে এ জলাশয়ের ৪০ একর জায়গায় বালি ভরাটের কাজ চলছে। যদিও পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, জলাধারটি ভরাট হলে উত্তরা, পল্লবী, মিরপুর, ভাসানটেক ও কালশীর কিছু অংশে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
তুরাগ নদের পাশঘেঁষে প্রাকৃতিক এ জলাধারটির অবস্থান। আশুলিয়ার গোড়ানচটবাড়ী অংশে গিয়ে তুরাগ নদীতে মিশেছে ৬০০ একরের এ জলাধার। এখান দিয়েই নিষ্কাশিত হয় রাজধানীর পশ্চিমাঞ্চলের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর পানি। রাজধানীর জলাবদ্ধতা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ জলাধারের একাংশে চলছে বালু ভরাটের কাজ। এই জলাধারের ৪০ একরে বালু ভরাট করা হলে বন্যার সময় এর পানি ধারণক্ষমতা কমবে দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ঘনমিটার। এতে পানি সমতলের মাত্রা বাড়তে পারে কম-বেশি ১৫ সেন্টিমিটার। ফলে বন্যার পানির সর্বোচ্চ অনুমোদিত সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ এ প্রাকৃতিক জলাধারেই চলছে সেতু বিভাগের পুনর্বাসন প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য এখানে ছয়তলা, ১২ তলা ও ১৫ তলাবিশিষ্ট কয়েকটি ভবন নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি সেখানে মসজিদ, খেলাধুলার জন্য মাঠ ও পার্কও নির্মাণ করা হবে। সেতু বিভাগের তথ্যানুযায়ী, উত্তরা তৃতীয় ফেজ-সংলগ্ন বাউনিয়া, দ্বিগুণ ও বড়কাঁকর মৌজায় ১৫ তলাবিশিষ্ট ১২টি ভবন নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি বিদ্যালয়, মসজিদ, কমিউনিটি মার্কেট, কমিউনিটি সেন্টার, কমিউনিটি ক্লিনিক, খেলার মাঠ, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, অভ্যন্তরীণ সড়ক, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক নানা সুবিধাও স্থাপন করা হবে। জলাশয় ভরাট করে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টিতে আপত্তি তুলেছেন স্থানীয়রাও। রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট ওনার্স সোসাইটির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদফতর ও রাজউকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শত বছর ধরে জলাশয়টি এলাকার পানি নিষ্কাশন, মাছ চাষ, পরিযায়ী পাখির আবাসস্থলসহ কৃষিতে পানি সরবরাহ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার কাজ করে আসছে। অথচ এ জলাশয় ভরাট করে পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই জলাশয় ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষ থেকে গত বছরের ১৫ নভেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, রাজউক, পরিবেশ অধিদফতর ও পাউবো বরাবর আইনি নোটিস পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরের প্রাকৃতিক জলাধারটি রাজউকের ম্যাপে পানিধারক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এর অবস্থান উত্তরা তৃতীয় আবাসন প্রকল্প এলাকার ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর ভবনসংলগ্ন, যা তুরাগ নদের সাথে সংযুক্ত। জলাধারটি বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। জলাবদ্ধতার শহর ঢাকা মহানগরীর জন্য প্রাকৃতিক জলাশয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। গোড়ানচটবাড়ী জলাধারটি ভরাট হয়ে গেলে এলাকাবাসী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারানোর পাশাপাশি পরিবেশও মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে।
বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, পুনর্বাসন প্রকল্পটির পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের জন্য পরিচালিত সমীক্ষাতেই স্পষ্ট বলা হয়েছে, এ অবকাঠামো নির্মাণে বিদ্যমান কোনো আইনকে আমলে নেয়া হয়নি। এমনকি বিবেচনায় নেয়া হয়নি ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানও (ড্যাপ)। সরকার নিজেই যদি পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এসব আইন আমলে না নেয়, তাহলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে।


আরো সংবাদ



premium cement