২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বে আলোচনা শুরু

স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত লিবিয়ার দুই পক্ষ

- ছবি : সংগৃহীত

লিবিয়ার বিবদমান দুই পক্ষ দেশটিতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্যে জেনেভায় জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বে দু’পক্ষের আলোচনা শুরু করার পর গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ কথা জানান লিবিয়াবিষয়ক জাতিসঙ্ঘ দূত গাসসান সালাম।

তিনি বলেন, বিবদমান দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরুর সদিচ্ছা ছিল। তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত ত্রিপোলিভিত্তিক জাতীয় ঐক্যের সরকার বা জিএনএ ও পূর্ব লিবিয়াভিত্তিক বিদ্রোহী জেনারেল হাফতারের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতিনিধিরা অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিকে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পরিণত করতে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, প্রথম অধিবেশনেই এই নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন রয়েছে শর্তগুলো নিয়ে। অবশ্য তিনি সাংবাদিকদের জানান, উভয় পক্ষই অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করছে এবং নতুন ভাড়াটিয়া সৈন্যরা এখনো লিবিয়ায় আসছে।

লিবিয়ার সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বে আলোচনা শুরু করেছে দেশটিতে যুদ্ধরত দুই পক্ষ। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) জেনেভায় ওই আলোচনা শুরু হয়েছে। এতে অংশ নিচ্ছে জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত লিবিয়ার জাতীয় ঐক্যের সরকারের (জিএনএ) পাঁচ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিদ্রোহী সামরিক নেতা খলিফা হাফতার নিযুক্ত পাঁচ প্রতিনিধি।

লিবিয়ার সঙ্ঘাতের রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে গত ১৯ জানুয়ারি বার্লিনে এক দিনের শান্তি সম্মেলন আয়োজন করেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল। ওই সম্মেলনে তুরস্ক, ফ্রান্সসহ ১২টি আঞ্চলিক দেশ লিবিয়ায় বিদেশী হস্তক্ষেপ বন্ধের বিষয়ে একমত হয়। এ ছাড়া জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বে লিবিয়ার ঐক্য প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়েও সম্মতি আসে ওই সম্মেলনে।

সোমবার জাতিসঙ্ঘের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গত মাসে বার্লিন সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ সদস্যের ‘লিবিয়ার যৌথ সামরিক কমিশন’ গঠন করা হয়েছে। এই কমিশন দুই পক্ষের যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করবে। সোমবার শুরু হওয়া বৈঠক তদারকি করছেন লিবিয়ায় নিযুক্ত জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত গাসসান সালাম।

গত ৯ মাস ধরে লিবিয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার ও হাফতার বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সম্প্রতি তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে দেশটির জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত সরকার; কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষর না করেই মস্কো ছাড়েন খলিফা হাফতার।

এ ঘটনায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, খলিফা হাফতার ও তার বাহিনী যদি লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রাখে, তাহলে তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেবে আঙ্কারা। কেননা, লিবীয় স্বজনদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, লিবিয়ার সাথে তুরস্কের ঐতিহাসিক ও সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে। আঙ্কারা হস্তক্ষেপ না করলে হাফতার পুরো দেশটি দখল করে ফেলত। এর আগে জানুয়ারির গোড়ার দিকে ত্রিপোলিতে সেনা মোতায়েনের জন্য একটি প্রস্তাব পাস করে তুরস্কের পার্লামেন্ট। আমিরাত সমর্থিত হাফতার বাহিনীর হামলা মোকাবেলায় লিবিয়া সরকারের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত অনুরোধ পাওয়ার পর ওই প্রস্তাব পাস করে তুর্কি পার্লামেন্ট।

জীবনযাপনের মানের দিক থেকে তেলসমৃদ্ধ লিবিয়া একসময় আফ্রিকার শীর্ষে ছিল। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ছিল পুরোপুরি রাষ্ট্রের দায়িত্বে। তবে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা ওই ঐশ্বর্য নিশ্চিত করেছিল, সেটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় ২০১১ সালে যখন পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। তারপর থেকে লিবিয়ায় চলছে সীমাহীন সঙ্ঘাত।

গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর ত্রিপোলিতে জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত একটি মনোনীত সরকার রয়েছে। ওই কর্তৃপক্ষকে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার বা জিএনএ নামে অভিহিত করা হয়। তবে দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে রয়ে গেছে। পশ্চিমাঞ্চলে জিএনএ-এর কর্তৃত্ব থাকলেও পূর্ব ও দক্ষিণের বেশির ভাগ অঞ্চল হাফতার বাহিনী বা এলএনএ-এর দখলে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে এ বাহিনী লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। রয়টার্স ও ডেইলি সাবাহ।


আরো সংবাদ



premium cement