১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

শুভ জন্মদিন নেলসন ম্যান্ডেলা

শুভ জন্মদিন নেলসন ম্যান্ডেলা - সংগৃহীত

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী কিংবদন্তি নেতা এবং শান্তিতে নোবেল বিজয়ী নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মশতবার্ষিকী আজ। নানা আয়োজনে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অবিসংবাদিত এই নেতার জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে।

১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে জন্মগ্রহণ করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যান্ডেলা। তরুণ বয়স থেকেই বর্ণবাদ-বিরোধী আন্দোলনে নাম লেখান তিনি। ম্যান্ডেলার ৯৫ বছরের জীবদ্দশার ২৭ বছরই কেটেছে কারাগারে।

১৯৯৪ সালে প্রথম নির্বাচিত কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিশোধের পথে না হেঁটে সমঝোতার পথেই হেঁটেছিলেন তিনি। নিজে মার্কসবাদী আদর্শে বিশ্বাসী হলেও সেধরনের সংস্কার আনার চেষ্টা করেননি।

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে ১৯৯৯ সালে অবসর নেন তিনি। ২০১০ সালে জাতিসঙ্ঘ ১৮ জুলাইকে ম্যান্ডেলা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন বৈষম্য আর বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার এই বিশ্বনেতা।

তাঁর বহু সম্মাননা আর পুরস্কারের মধ্যে নোবেল পুরস্কার অন্যতম। শান্তির পথে আলোচনার মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার সমস্যার সমাধান আনার জন্য ১৯৯৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয় তাঁকে।

এদিকে ম্যান্ডেলার জন্মদিন উপলক্ষে মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে বিশাল স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অত্যন্ত প্রিয় নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বক্তা হিসেবে ছিলেন দারুণ।

তিনি বলেন:

আমি সাদাদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি এবং আমি কালোদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমি আদর্শিক গণতন্ত্র এবং মুক্ত সমাজের প্রশংসা করি, যেখানে সকল ব্যক্তি শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবে এবং সমান সুযোগ লাভ করবে। এটি হচ্ছে একটি আদর্শিক অবস্থান, যার মধ্যে দিয়ে বাঁচা দরকার এবং আমি তা অর্জনের আশা করি, কিন্তু এটি এমন এক আদর্শ, যদি প্রয়োজন পড়ে, তার জন্য আমি জীবন দিতেও প্রস্তুত।

আমার সফলতার ভিত্তিতে আমাকে বিচার করোনা, আমাকে বিচার কর আমার ব্যর্থতা এবং ব্যর্থতার পর ঘুরে দাঁড়ানোর ভিত্তিতে।

আমি সাধু নই, তবে যদি সাধুকে এমন এক পাপী হিসেবে বিবেচনা কর, যে সৎ হবার জন্য তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাহলে আমি তাই।

ঘৃণা মনকে অন্ধকার করে দেয়। কৌশলের পথ রুদ্ধ করে দেয়। নেতাদের ঘৃণা করা সাজে না।

যদি কেউ ঘৃণা করতে শেখে তাহলে সে ভালোবাসা শিখে নিতে পারে। ঘৃণা নয়, মানব হৃদয়ে স্বাভাবিকভাবে ভালোবাসার জন্ম হয়।

ঘৃণা নিয়ে কেউ জন্ম গ্রহণ করে না।

সাহসী মানুষেরা শান্তির জন্য ক্ষমা করতে ভীত নয়।

পৃথিবীতে প্রতিশোধ গ্রহণের মাধ্যমে আপনি যতটা অর্জন করতে পারবেন, তার চেয়ে ঢের বেশি অর্জন করতে পারবেন ক্ষমা প্রদর্শনের মাধ্যমে।

যেখানে এক সময় থাকে বেদনার বসবাস, খেলাধুলা সেথায় করতে পারে আশাবাদের চাষ।

পেছন থেকে নেতৃত্ব দাও- আর সাথে অন্যদের বিশ্বাস দাও যে নেতারা আছে সম্মুখসারিতে।

আমি বর্ণবাদকে ঘৃণা করি কারণ এটা একটা বর্বর বিষয়, তা সে কালো বা সাদা যে কোন মানুষের কাছ থেকে আসুক না কেন।

সবসময়, যতক্ষণ না কাজ সমাধা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তা এক অসম্ভব বিষয় বলে মনে হয়।

যে কোন কিছুতে ভীত নয়; সে নয়, বরঞ্চ যে ভয়কে জয় করে সেই হচ্ছে প্রকৃত সাহসী।

সম্মান তাদের প্রাপ্য, যারা কখনো সত্যকে পরিত্যাগ করে না, এমনকি যখন পরিস্থিতি অন্ধকারচ্ছন্ন এবং বেদনাদায়ক।

কেবল শৃঙ্খলহীন হওয়া নয়, বরং স্বাধীন হওয়া মানে শ্রদ্ধা এবং অন্যের স্বাধীনতা বৃদ্ধির সাথে বসবাস।

শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, যার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীকে বদলে ফেলা যায়।

বলা হয়ে থাকে যে সত্যিকার অর্থে কেউ একটি জাতিকে জানতে পারে না যতক্ষণ না কেউ একজন এর কারাগারে বন্দী থাকে।

যখন একজন মানুষ বিবেচনা করা যে নিজ জাতি এবং স্বদেশের প্রতি সে তার দায়িত্ব পালন করেছে, তখন সে শান্তিতে মৃত্যুবরণ করতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement