২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা

হাসপাতালের তথ্য প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাতিল

-

হাসপাতালগুলোতে সাংবাদিকদের প্রবেশ ও তথ্য সংগ্রহ বিষয়ে দেয়া নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সমালোচনার মুখে  এই নির্দেশনা কিছুটা পরিবর্তন করে নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে হাসপাতালের তথ্য প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বিষয় বাদ দিয়ে দর্শনার্থী ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বলা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার উপ-সচিব মো. আবু রায়হান মিঞার স্বাক্ষরে নতুন নির্দেশনাটি প্রকাশ করা হয়।

নতুন নির্দেশনায় দেখা গেছে, সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে গত ১২ (রোববার) জানুয়ারির নির্দেশনায় যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল তা বাদ দেয়া হয়েছে।

গত রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. আবু রায়হান মিঞা স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছিল গবেষণা, জরিপ, অন্য কোনও তথ্য বা সংবাদ সংগ্রহের জন্য তথ্য সংগ্রহকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। সংগৃহীত তথ্য বা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। বিনা অনুমতিতে হাসপাতালের ভেতরে রোগী বা স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের কোনো স্থিরচিত্র বা ভিডিওচিত্র ধারণ করতে পারবেন না। সংগৃহীত তথ্য প্রকাশের আগেই বস্তুনিষ্ঠতার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সম্মতি গ্রহণ করতে হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনা জারির পর পরই এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদও প্রকাশিত হয় । এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিকেলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বিবৃতি দিয়ে এ বিষয়ে উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করে অবিলম্বে এই নির্দেশনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনা দুর্নীতি সহায়ক উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্দেশনা অনুযায়ী এখন থেকে সকল সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা, জরিপ ও অন্য কোনো উদ্দেশ্যে তথ্য বা সংবাদ সংগ্রহে অনুমতি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। যা বর্তমান সময়ে অচিন্তনীয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষের উপনিবেশিক ও নিবর্তনবাদী মানসিকতার মাধ্যমে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিতে সরকার ঘোষিত ও আইনগতভাবে প্রতিষ্ঠিত নাগরিক অধিকার নিশ্চিতের অপ্রতিরোধ্য অন্তরায় সৃষ্টি করবে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের তথ্যের ‘বস্তুনিষ্ঠতা’ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সম্মতি গ্রহণের যে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে, তা যেমন স্বাস্থ্য খাতে সকল প্রকার গবেষণা ও তথ্য প্রকাশের দ্বার রুদ্ধ করবে, তেমনি এ খাতে সকল প্রকার অনিয়ম, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের আত্মসাৎ ও অপচয়ের সুরক্ষা দিবে।’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনার প্রতিবাদে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচিও দিয়েছিল বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম।

তবে তার আগেই মন্ত্রণালয় এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলো। সাংবাদিকদের প্রতি দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম বুধবারের প্রতিবাদ সভা আপাতত বাতিল ঘোষণা করেছে।

সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত গতকাল মঙ্গলবার সন্ধায় আগের নির্দেশনা কিছুটা পরিবর্তন করে নতুন নির্দেশনা জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যেখানে সাংবাদিকদের বিষয়টি উল্লেখ নেই। নতুন নির্দেশনায় দর্শনার্থী ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বলা হয়েছে-‘দেশের সব সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত চিকিৎসা দেয়া সরকারের লক্ষ্য। নিরাপদ চিকিৎসার জন্য রোগীর সঙ্গে আসা দর্শনাথীদের নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কেননা, তাদের স্বাস্থ্যবিষয়ক অজ্ঞতা এবং রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ রোধে করণীয় বিষয়ে জ্ঞানের অভাবে অধিকাংশ সময়ই কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ বা পরিস্থিতির অবনতি হয়। এ অবস্থায় দেশের সব সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে নির্দেশক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হলো।’

নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, প্রত্যেক হাসপাতালে দর্শনার্থী পাস চালু করতে হবে এবং প্রতিটি পাসের জন্য নিরাপত্তা জামানত চালু করা যেতে পারে। রোগীর অসুস্থতা বিবেচনায় একজন রোগীকে সহায়তা করার জন্য সর্বোচ্চ দুইজন দর্শনার্থীকে পাস দেয়া যেতে পারে। হাসপাতাল ত্যাগের আগেই পাস ফেরত দিয়ে দর্শনার্থী নিরাপত্তা জামানত ফেরত নিতে পারবেন।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মচারীরা বৈধ পরিচয়পত্র দৃশ্যমানভাবে বহন করবেন। আগত দর্শনার্থীদের জন্য পাস ইস্যু করার সময় নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, পরিদর্শনের কারণ ইত্যাদি তথ্য-সংবলিত রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করা যেতে পারে। দর্শনার্থী বিষয়ক নিয়মাবলি রোগী বা রোগীর সাহায্যকারীকে অবহিত করতে হবে। এছাড়া দর্শনার্থী বিষয়ক নিয়মাবলি সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন জায়গায় রাখতে হবে।

তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনার পর সমালোচনা হয়, গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয় । তারপরই মন্ত্রণালয় তাদের আগের নির্দেশনা থেকে সরে আসে।


আরো সংবাদ



premium cement