২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মা-বোনেরা যদি নির্যাতিত হয় তাহলে এই রেমিট্যান্সের মূল্য নাই : প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী

মা-বোনেরা যদি নির্যাতিত-লাঞ্চিত হয় তাহলে রেমিট্যান্সের মূল্য নাই : প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী - নয়া দিগন্ত

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী  ইমরান আহমদ বলেছেন, আমরা বর্তমানে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী রেমিট্যান্স এনে দিচ্ছি। যেভাবে এগুচ্ছে তাতে এ বছরই ২০ বিলিয়নে চলে যাব। কিন্তু, আমাদের মা-বোনেরা যদি নির্যাতিত হয়, লাঞ্চিত হয় তাহলে এই ২০ বিলিয়নের (রেমিট্যান্স) কোনো মূল্য থাকে না।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর প্রবাসী কল্যাণ ভবনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধনে বিএমইটির আওতায় টিটিসিসমূহে হাউজকিপিং প্রশিক্ষণকে আরো কার্যকরি ও ফলপ্রসূ করার জন্য কর্মপন্থা নিরূপনে দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন্ দেশের বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারের (টিটিসি) অধ্যক্ষ ও জেলা কর্মসংস্থান বা ডিএমও অফিসের সহকারী পরিচালকদের নিয়ে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। বিএমইটির মহাপরিচালক শামসুল আলমের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ সচিব সেলিম রেজা। এ সময় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ও বিএমইটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন্

সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে নারীকর্মীদের নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরে আসার দিকে ইঙ্গিত করে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘মহিলাকর্মীরা যারা বিদেশে গেছেন, তাদের সেখানেই শুধু সমস্যা নয়। যেসব অভিযোগ আসছে তা কিন্তু আমাদের উপরই বর্তায়। দোষ ত্রুটিগুলো আমাদের সংশোধন করতে হবে।’

ইমরান আহমদ বলেন, ‘আমরা ১৬ বিলিয়ন ডলার এনে (রেমিট্যান্স) দেই, এটা সত্য। ইনশাআল্লাহ এ বছরই আমরা ২০ বিলিয়নে চলে যাব।  কথা হলো, ২০ বিলিয়ন তো আমরা পেলাম। কিন্তু সেখানে (বিদেশে) যদি আমাদের মা-বোনেরা যদি নির্যাতিত হয়, লাঞ্চিত হয় এই ২০ বিলিয়নের কোনো মূল্য থাকে না। এটাই বাস্তবতা। গরীব মানুষ হলেও কেউ তো অসন্মানের জন্য বিদেশ যায় না। কেমনে তাদের সাহায্য সহযোগীতা করতে পারি, এটাই আমাদের কাজ।’

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘মালয়েশিয়া বা যেখানেই যাই আনডকুমেন্টারি বা ইলিগ্যাল কর্মীদের কথা আসে। জমি জমা বিক্রি করে তারা বিদেশ গিয়ে ইলিগ্যাল হয়েছে। সরকার যখন একটা রেট নির্ধারণ করে দেয়, রিক্রুটিং এজেন্সি এতো বেশি টাকা নেবে কেন? টিচিং বা প্রশিক্ষণ দেয়া আপনাদের বড় দায়িত্ব। পাশাপাশি যারা বিদেশে যাচ্ছে তাদের গাইডলাইন বা সচেতন করাও কিন্তু দায়িত্বের মধ্যে বর্তায়।’

নারীকর্মীদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ট্রেনিং এক মাস করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো বাড়ানো হবে। যারা বিদেশ যাবে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রাকটিক্যাল শিক্ষায় গুরত্ব দিতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষাকেও গুরত্ব দিতে হবে। আমার দেশের একটা মেয়েও যেন লাঞ্চিত না হয়। সবাই যেন ভালভাবে থাকতে পারে। ইতিমধ্যে সৌদি থেকে কিন্তু অভিযোগ এসেছে যে, আমরা অপ্রশিক্ষিত বা অদক্ষ মেয়েদের পাঠাচ্ছি। এটা যেন না হয়। প্রশিক্ষিত মেয়েদের যদি পাঠাতে পারি, তারা যদি ভাষা শিখে যায় তাহলে কিন্তু কোনো অভিযোগ আসবে না।’

বিদেশগামীদের ট্রেনিং না দিয়েই ট্রেনিং সার্টিফিকেট দেয়ার অভিযোগ রয়েছে টিটিসিগুলোর বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রেনিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে যে ট্রেনিং সার্টিফিকেট বিক্রি করা হয়। এ ধরনের কথা যেন আর না শুনি। যে টিটিসির বিরুদ্ধে বা যার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ শুনবো তাহলে আগে গুলি চালাবো পরে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো। যে দায়িত্বে থাকবে প্রথমে সাসপেনশনে যাবে। কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো টিটিসির বিরুদ্ধে এ ধরনের কথা শুনতে চাই না। সার্টিফিকেট বেঁচা, কম ট্রেনিং নেয়ার পরও সার্টিফিকেট দেয়া। ভর্তির দিন ভর্তি হয়ে চলে যাওয়া, ক্লাস না করে চলে গিয়ে শেষের দিকে এসে সার্টিফিকেট নিয়ে যাবে, এটা হবে না। এ ধরনের কাহিনী আমি শুনতে চাই না।’

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন দফতরে ভিসা প্রসেসিং, স্মার্টকার্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ প্রসঙ্গে ইমরান আহমদ বলেন, ‘গত ৮-১০ মাসে (দায়িত্ব নেয়ার পর) আর কিছু পারি আর না পারি, এই মন্ত্রণালয়ের যে বদনাম ছিল তা দূর করতে পেরেছি। আমি আর্থিক অনিয়মের কথা বলছি। এই ধরনের অভিযোগ আর মন্ত্রণালয়ে নাই। আর যদি কখনো এ ধরনের খবর আসে, আমি জিরো টলারেন্সে আছি। কঠোর ব্যবস্থা হবে।’

কর্মশালায় প্রবাসী কল্যাণ সচিব সেলিম রেজা বলেন, ‘ট্রেনিং ছাড়া যেন কেউ বিদেশে না যায়। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। অতিসম্প্রতি মিডিয়ায় যে মহিলাকর্মী নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে-এর অনেক কিছুর সত্যতা আছে, অনেক ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত আছে।’

‘এই কর্মশালার মাধ্যমে একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করব। যাতে নারীকর্মীদের সুরক্ষা হয়। সেই গাইডলাইন, নীতিমালা আমরা তৈরি করবো। এটা তৈরিতে এই ট্রেনিং আরো ফলোপ্রসূ হবে।’-যোগ করেন সচিব।

সেলিম রেজা বলেন, ‘মহিলা কর্মীদের এক মাসের যেটি প্রশিক্ষণ সেটা আবাসিক প্রশিক্ষণ হবে। যে দেশে যাবে ওই দেশের কালচারসহ আনুষাঙ্গিক বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হবে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা প্রশিক্ষণ চলবে। সেই সাথে শুধু নীতিমালা দিয়ে ট্রেনিং নয়। ৩-৪ জায়গায় মনিটরিং করা হবে। ট্রেনিং দিয়ে ছেড়ে দেয়া নয়। যে টিটিসি প্রশিক্ষণ দেবে তারা নিজ নিজ এলাকায় ডাটাবেইজড রাখবে। তাদের সর্বশেষ অবস্থা প্রতিমাসেই মন্ত্রণালয়, বিএমইটিকে জানাতে হবে।এ বিষয়ে দূতাবাসকেও সম্পৃক্ত করবো, প্রতিমাসে যাতে নারীককর্মীদের মনিটরিং করে তারা।’

জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক করতে সৌদিতে যাচ্ছেন প্রবাসী কল্যাণ সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। এ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘২৫ নভেম্বর সৌদি আরবে যাচ্ছি, ২৬ তারিখে মিটিং হবে। এদিন আমরা এসব সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করবো। এই কর্মীদের সেখানে গিয়ে যাতে ভোগান্তি পোহাতে না হয়। এ ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স। কারো যদি কোনো রকম অনিয়ম পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

 


আরো সংবাদ



premium cement