১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পদ্মার পানি পরিশোধন হয়ে আসছে ঢাকায়

পদ্মার পানি পরিশোধন হয়ে আসছে ঢাকায় - ছবি : সংগৃহীত

পদ্মা নদীর পানি শোধন হয়ে আসছে ঢাকায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পদ্মার পানি আসা শুরু হয়েছে। ঢাকাবাসীর খাবার পানির সঙ্কট নিরসনে ঢাকা ওয়াসার উদ্যোগে পদ্মা-জশলদিয়া পানি শোধন প্রকল্পের আওতায় শোধন হয়ে আসছে পদ্মার পানি। নগরীর প্রায় ৪০ লাখ মানুষের পানির চাহিদা মেটাবে পদ্মা-জশলদিয়া পানি শোধনাগার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩৩ কিলোমিটার দূর থেকে পদ্মার পানি শোধন হয়ে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় স্থাপিত পাইপ লাইন (ইনজেকশন পয়েন্ট) দিয়ে প্রতিদিন ৪৫০ মিলিয়ন (৪৫ কোটি) লিটার পানি আসবে ঢাকায়। আগামী ১০ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করে ঢাকাবাসীকে পদ্মার সুপেয় পানি দেয়ার ঘোষণা দেবে ঢাকা ওয়াসা।
পদ্মা-জশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্পের সাথে জড়িত ঢাকা ওয়াসার এক প্রকৌশলী নয়া দিগন্তকে জানান, ঢাকা শহরের নাগরিকদের নিরবচ্ছিন্নভাবে সুপেয় পানি সরবরাহ করার প্রচেষ্টা দীর্ঘ দিনের। কিন্তু সঠিক উৎসের অভাবে নগরবাসীকে সুপেয় পানি দেয়া অনেক সময়েই দুষ্কর হয়ে পড়ে ঢাকা ওয়াসার জন্য। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির বিকল্প উৎস হিসেবে বেশ কয়েকটি পানির প্ল্যান্টও নির্মাণ করা হয়েছে। তার পরও শুষ্ক মওসুমে কিংবা রোজার সময়ে অনেক এলাকায় প্রয়োজনমতো পানি পায় না নগরবাসী।

এই প্রেক্ষাপটে প্রায় আট বছর আগে পদ্মা নদীর পানি শোধন করে ঢাকায় সরবরাহ করতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৩ সালের ১৪ নবেম্বর প্রকল্পটি সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটিতে (সিসিজিপি) পাস হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৯০ মিলিয়ন ডলার (তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকা) ব্যয় ধরা হয়েছিল। জি টু জি প্রকল্পের আওতায় এ প্রকল্পের সম্পূর্ণ আর্থিক ব্যয় বহন করেছে এক্সিম ব্যাংক অব চায়না। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (সিএএমসিই) ‘কেমসি’। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শেষ করে ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পটি ওয়াসার কাছে হস্তান্তর করেছে চীনা ঠিকাদারি ওই প্রতিষ্ঠান।

এ দিকে প্রকল্পের আওতায় পদ্মা নদীর পানি সংগ্রহ ও শোধন করতে পদ্মার তীরবর্তী মাওয়া এলাকায় এক কিলোমিটারের মধ্যে পানির পাওয়ার পাম্প বসানো, অশোধিত পানি সংগ্রহ, পানির ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়। এরপর সংগৃহীত পানি ১৪ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে নিয়ে এসে কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুরে স্থাপিত ‘বোস্টার পাম্প’ স্টেশনে দ্বিতীয় দফায় শোধন করে আবারো ৮ কিলোমিটার দূরে এসে পরিশোধিত পানি মিটফোর্ডের ‘ইনজেকশন পয়েন্ট’ দিয়ে ঢাকায় আসছে; অর্থাৎ পদ্মা থেকে পানি সংগ্রহ করার পর মোট ৩৩ কিলোমিটার দূরত্ব ঘুরে আটটি পয়েন্টে শোধন হওয়ার পর সুপেয় পানি পাবে ঢাকার নাগরিকরা।

পদ্মার পানি শোধন হয়ে ঢাকায় আসা প্রসঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসীম এ খান নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা পরীক্ষামূলকভাবে বৃহস্পতিবার থেকে পাইপলাইনে পদ্মার পানি শোধন করে আনা শুরু করেছি। যদিও এর আগে পাইপ লাইন ও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পরীক্ষার জন্য আমরা কয়েক দিন পানি এনেছিলাম। এখন আমরা পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি, আগামী ১০ অক্টোবর তারিখে ঢাকাবাসীকে পদ্মার নদীর শোধন করা সুপেয় পানি দেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটি দিতে পারব।

উল্লেখ্য, পদ্মা-জশলদিয়া প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো রাজধানীর পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা। এসব এলাকার জন্য মিটফোর্ড থেকে বেড়িবাঁধ ধরে হাজারীবাগ, লালবাগ হয়ে শ্যামলী পর্যন্ত বেড়িবাঁধের পাশে ও ভেতরের অলিগলিতে ৪০ কিলোমিটার সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণ করে পানি সরবরাহ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। একই সাথে গাবতলী ও মিরপুর-১ নম্বর সেকশনেও এই পানি নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া মিটফোর্ড এলাকা থেকে নর্থ সাউথ রোড পর্যন্তও পানি সরবরাহের কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে নগরীর প্রায় ৪০ লাখ মানুষের পানির চাহিদা মেটাবে পদ্মা-জশলদিয়া পানি শোধনাগার। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করছে তার প্রায় ৮৭ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি এবং ১৩ শতাংশ ভূপৃষ্ঠস্থ পানি।


আরো সংবাদ



premium cement