২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
বর্তমান সরকারের প্রথম ডিসি সম্মেলন

নিরঙ্কুশ ক্ষমতা চান ডিসি-ইউএনওরা

- ফাইল ছবি

পাঁচ দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন আজ রোববার থেকে শুরু হচ্ছে। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের এটি প্রথম ডিসি সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল দশটায় তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘শাপলা’ হলে এই সম্মেলন উদ্বোধন করবেন।

প্রতিবছর এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দেশের ৬৪ জেলার ডিসিদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে আসছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। ১৮ জুলাই পর্যন্ত চলা এই সম্মেলনে ২৪টি কার্য-অধিবেশনে ৩৩৩টি প্রস্তাবের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগের বছরগুলোতে তিন দিনের ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও এবার দু’দিন বেড়ে হচ্ছে পাঁচ দিন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও এবার প্রথমবারের মতো ডিসি সম্মেলনে যুক্ত হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি ও জাতীয় সংসদের স্পিকারও। এর আগে এবারের ডিসি সম্মেলনকে সামনে রেখে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নেওয়া সিদ্ধান্ত ও কার্যসূচি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে গত বুধবার তার অনুমোদন দেওয়া হয়।

সরকার ও জনগণের মধ্যে সরাসরি সেতুবন্ধন ঘটায় জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক বা ডিসিরাই সরকারের সঙ্গে জনগণের সেতুবন্ধনের মূল দায়িত্ব পালন করেন। মাঠ প্রশাসনকে চাঙ্গা রাখতে ডিসিদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে গতিশীলতা বাড়াতে ও তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের নীতি ও দর্শনের বাস্তবায়ন ও তা জনগনের কাছে পৌঁছে দিতে ডিসিরা সরাসরি কাজ করেন।

তাই সরকারের নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সরাসরি মতবিনিময় ও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিতেই প্রতিবছরের মতো এবারও জেলা প্রশাসক সম্মেলনের আয়োজন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। একাদশ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকার গঠনের পর এটিই প্রথম ডিসি সম্মেলন।

এবারের সম্মেলনে বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ছাড়াও তার কাছ থেকে দিক-নির্দেশনা নেবেন ডিসিরা। ডিসি সম্মেলন চলার সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব, সচিবরা বিভিন্ন অধিবেশনে উপস্থিত থেকে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের দিক-নির্দেশনা দেবেন। এসব কর্ম-অধিবেশনগুলো হবে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে।

এ বছর ডিসি সম্মেলনে ২৯টি অধিবেশন হবে জানিয়ে শফিউল বলেন, এরমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কার্য-অধিবেশন ২৪টি। কার্য-অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ৫৪টি মন্ত্রণালয়-বিভাগ অংশ নেবে। কার্য-অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত থাকবেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, ডিসি সম্মেলনকে সামনে রেখে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত কয়েকদিন ধরে প্রস্তুতি বৈঠক করছে। ১৪ জুলাই সম্মেলন উদ্বোধনের পর ডিসিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন। ১৫ জুলাই সোমবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে টানা ছয়টি কার্য-অধিবেশনে ১৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ডিসিরা। এরপর সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

১৬ জুলাই মঙ্গলবার ডিসিরা তৃতীয় দিন টানা ৫টি কর্ম-অধিবেশনে ১২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ওইদিন বিকেলেই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত আছে। ১৭ জুলাই বুধবার চতুর্থ দিনের জন্য নির্ধারিত ৮টি কার্য অধিবেশনে ১৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সম্মেলনের শেষ দিনে (৫ম দিনে) ৪টি অধিবেশনে ৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বৈঠক নির্ধারিত আছে। এদিন বিকেলেই জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার (স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মার্কন যুক্তরাষ্ট্রে সফরে থাকায়) সঙ্গে সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ডিসিদের সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত বর্তমান সরকারের প্রথম এ ডিসি সম্মেলনে সরকার জেলা প্রশাসকদের কাছে প্রশাসনের সকলস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি চাইবে। একইসঙ্গে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে গতিশীলতা বাড়ানোর ওপরও জোর দেওয়া হবে। তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের নীতি-দর্শনের বাস্তবায়ন ও তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে ডিসিদের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডিসি সম্মেলন উদ্বোধনের পর মুক্ত আলোচনায় মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে শুনবেন ও নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এবারের সম্মেলনে ডিসিদের দেশের শতভাগ সম্পদ জনকল্যাণের ব্যবহারের বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে সরকারের চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিষয়ে সচেতন থেকে এ সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এর উপকারিতা সম্পর্কে জনসাধারণকে জানানোরও নির্দেশনা দেবেন।

পাশাপাশি এসব উন্নয়ন কজে ফসলি জমি যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেবেন। তাছাড়া সরকারি সেবা নেওয়ায় ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ যেন কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেওয়া হবে ডিসিদের। তৃণমূল-পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করা, গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করারও পরামর্শ দেওয়া হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে সম্মেলনে আলোচনার জন্য ৩৩৩টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এ বছর সবচেয়ে বেশি প্রস্তাব পাওয়া গেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ সংক্রান্ত। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রস্তাব বেশি পাওয়া গেছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম জোরদারকরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ পুনর্বাসন কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন ও দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্নেন্স, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণরোধ, ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয় নিয়ে ডিসি সম্মেলনে আলোচনা হবে। গত বছর ডিসি সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে ৯২ দশমিক ৯০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।

নিরঙ্কুশ ক্ষমতা চান ডিসি-ইউএনওরা
আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে সব জেলার ডিসিরা এখন ঢাকায়। এবার ডিসিদের কাছ থেকে হাজারখানেক প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনশ’র বেশি প্রস্তাব আলোচনার জন্য বাছাই করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

প্রস্তাবসংবলিত কার্যপত্র সূত্রে জানা গেছে, সামান্য কিছু দায়িত্বের বাইরে জেলা ও উপজেলার সব ক্ষমতা ডিসি ও ইউএনওদের হাতে। তার পরও আরো ক্ষমতা চাইছেন তাঁরা। এমনকি সংবিধান লঙ্ঘনের মতো প্রস্তাবও করেছেন। এর মধ্যে অন্য দপ্তরের এখতিয়ার প্রায় ১৫টি প্রস্তাব আছে। সেগুলোও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে চান ডিসি ও ইউএনওরা। তারা তাদের হাতে থাকা বিপুল ক্ষমতা আরো নিরঙ্কুশ করতে চান।

তারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আয়করের আওতা বাড়ানোর জন্য জেলা পর্যায়ে ডিসি এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওকে সভাপতি করে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। ডিসিদের নিরাপত্তায় এক প্লাটুন সশস্ত্র পুলিশ ফোর্স দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন। বরাবরের মতো এবারও ফৌজদারি অপরাধ আমলে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিচারিক ক্ষমতা চেয়েছেন ডিসিরা। এই প্রস্তাবকে সংবিধানবিরোধী বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

এছাড়া শুধু জেলা-উপজেলা নয়, ডিসিদের নজর পড়েছে স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্নস্তর ইউনিয়ন পরিষদেও (ইউপি)। ইউপি চেয়ারম্যানদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোনো কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠানে দেরি হলে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দিতে চান ডিসিরা। এছাড়া উপজেলার প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন অফিসারকে (পিআইও) উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) অধীনে আনার প্রস্তাব করেছেন তারা।

সেই সঙ্গে জেলা-উপজেলায় আয়কর আদায়, ফৌজদারি অপরাধ বিচারের ক্ষমতা, কোটি টাকার থোক বরাদ্দ, এনজিও কার্যক্রম তদারকি, ডিপিপি প্রণয়ন, মোবাইল কোর্টের অধীনে নতুন নতুন আইন অন্তর্ভুক্তকরণ, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে ডিসিদের সভাপতি, উপজেলা শিক্ষা কমিটিতে ইউএনওদের সভাপতি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরে প্রশাসন ক্যাডারদের জন্য নতুন ব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিও তুলেছেন ডিসিরা। জেলায় এনজিওর মাধ্যমে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় সেগুলোরও নিয়ন্ত্রণ চান ডিসিরা।


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল