২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও পাচ্ছেন ৫ ভাগ সুদে গৃহ ঋণ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও পাচ্ছেন ৫ ভাগ সুদে গৃহ ঋণ - সংগৃহীত

সরকারি চাকরিজীবী ও জুডিশিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের পর এবার দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও স্বল্প সুদে গৃহ নির্মাণ ঋণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এ ঋণ পাবেন। গৃহ নির্মাণ ঋণের সুদের হার হবে ১০ শতাংশ। কিন্তু শিক্ষকদের এই ১০ শতাংশ সুদ দিতে হবে না। তাদের দিতে হবে ৫ শতাংশ। বাকি ৫ শতাংশ সুদ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে।

ঋণের সর্বোচ্চ সীমা হবে ৭৫ লাখ টাকা, যা ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মকর্তারা কিভাবে এই ঋণ পেতে পারেন তার জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে এই নীতিমালা তৈরির কাজ শিগগিরই শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৫টি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে গত বছরের নভেম্বর মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি আবেদন করা হয়। এই আবেদনে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদেরও যেন সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ৫ শতাংশ সুদে গৃহ ও ফ্ল্যাট ক্রয়ের ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়।

এই আবেদনের প্রেক্ষপটে গতকাল অর্থ বিভাগে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বল্প সুদে গৃহ ঋণ দেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়।

একজন অতিরিক্ত সচিব এই নীতিমালা প্রণয়নের দায়িত্বে থাকবেন। তিনি শিগগিরই নীতিমালাটি প্রণয়ন করে পরবর্তী মিটিং উপস্থাপন করবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, ইতোমধ্যে সরকারি চাকরিজীবী ও জুডিশিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের স্বল্প সুদে গৃহঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের জন্য প্রায় অভিন্ন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে অন্য একটি নীতিমালা করার প্রয়োজন রয়েছে।

কারণ তাদের চাকরির বয়সসীমার একটি বিষয় রয়েছে। তাদের চাকরির ধরনও ভিন্ন। তবে আমরা আশা করছি আগামী মাসের মধ্যে এ সম্পর্কিত একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। এই নীতিমালা অনুমোদন হওয়ার পর থেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা গৃহ ও ফ্ল্যাট কেনার জন্য স্বল্প সুদে বিভিন্ন সরকারি ব্যাংক ও হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন থেকে ঋণ নিতে পারবেন।

উল্লেখ্য, গত ৬ মার্চ অর্থ বিভাগ থেকে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদানের পরিপত্র জারি করা হয়। এই পরিপত্রে সরকারি চাকরিজীবীদের পাশাপশি জুডিশিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের স্বল্প সুদে গৃহ নির্মাণ ঋণের আওতায় নিয়ে আসা হয়।

পরিপত্র অনুযায়ী, বিচারবিভাগী বা জুডিশিয়াল সার্ভিসে চতুর্থ ও তদূর্ধ্ব গ্রেডে (৪৪,৪৫০/- তদূর্ধ্ব) কর্মরত কর্মকর্তারা ঢাকা মহানগর/সব সিটি করপোরেশন/বিভাগীয় সদরে গৃহ নির্মাণ বা ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। জেলা সদরের জন্য পাবেন ৬০ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য কর্মকর্তাদের গৃহ নির্মাণের জন্য ঋণ দেয়া হবে ৫০ লাখ টাকা।

একইভাবে বিচার বিভাগের ষষ্ঠ গ্রেড ও পঞ্চম গ্রেড (৩০,৯৩৫/- থেকে ৩৪,৫৪০/-) কর্মকর্তারা ঢাকা মহানগরী, সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগী সদরে গৃহ নির্মাণের জন্য ঋণ পাবেন ৬৫ লাখ, জেলা সদরের জন্য ৫৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য সর্বোচ্চ ঋণ হবে ৪৫ লাখ টাকা।

অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় বেতন কাঠামোর পঞ্চম গ্রেড ও তদূর্ধ্ব যাদের বেতন স্কেল ৪৩ হাজার বা এর বেশি, তারা প্রত্যেকে ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে গৃহনির্মাণে ঋণ পাবেন ৭৫ লাখ টাকা। জেলা সদরে এর পরিমাণ হবে ৬০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০ লাখ টাকা।

বেতন কাঠামোর ৯ম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বা যাদের মূল বেতন ২২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, তারা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদর এলাকার জন্য ৬৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৫৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।

১০তম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত যাদের মূল বেতন ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা, তারা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৫৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।

১৪তম থেকে ১৭তম গ্রেড বা ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার ২০০ টাকা বেতন স্কেলে ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৩০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। ১৮তম থেকে ২০তম গ্রেড বা আট হাজার ২৫০ টাকা থেকে আট হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত মূল বেতন পান এমন কর্মচারীরা ঢাকাসহ সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন ৩০ লাখ টাকা। জেলা সদরে এটি হবে ২৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য পাবেন ২০ লাখ টাকা।

নীতিমালা অনুযায়ী, গৃহ নির্মাণ ঋণ নেয়ার সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫৮ বছর করা হয়েছে। এর আগে তা ৫৬ বছর ছিল। এতে সর্বোচ্চ ঋণসীমা ৭৫ লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন ঋণ ২০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। ঋণের সুদ গড়ে ১০ শতাংশ ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে সুদ নেয়া হবে ৫ শতাংশ। সুদের বাকি ৫ শতাংশ সরকারি ভর্তুকি হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রদান করবে। এই অর্থ সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে দেয়া হবে। প্রতি বছর বাজেটে ভর্তুকি অর্থ বরাদ্দ দেয়া থাকবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement