২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পদোন্নতিবঞ্চিত নার্সদের মধ্যে হতাশা

পদোন্নতিবঞ্চিত নার্সদের মধ্যে হতাশা - সংগৃহীত

সম্প্রতি ২৪৯ জন নাসিং কর্মকর্তাকে দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে পদোন্নতি দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ পদোন্নতিতে জেলা পাবলিক হেল্থ নার্স পদে কর্মরতরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। সব যোগ্যতা থাকার পরও জেলা পাবলিক হেল্থ নার্স পদে তাদের পদায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে বঞ্চিত নার্সদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করা হয়নি, নিয়ম অনুযায়ী সব করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদোন্নতি ও সিলেকশন গ্রেড নিয়ে দীর্ঘ দিন সমস্যার মধ্যে ছিলেন দেশে কর্মরত ৩৬ হাজার নার্স। উচ্চতর ডিগ্রিসহ সব ধরনের যোগ্যতা থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় একই পদে আটকা ছিল বছরের পর বছর। গত বছর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় নার্সদের গ্রেড পদ্ধতিতে আনা হয়। এরপর শুরু হয় পদোন্নতিপ্রক্রিয়া।

এরই অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফরের আওতাধীন নার্সিং কর্মকর্তাদের দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে পদোন্নতির জন্য যোগ্যতার ভিত্তিতে এসিআর ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র চেয়ে নির্দেশনা পাঠায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে ওই চিঠিতে কোনো সাল বেঁধে দেয়া হয়নি। 

মন্ত্রণালয়ের চিঠির পর পদোন্নতির ক্ষেত্রে একটি মাত্র যোগ্যতা বিবেচনায় এনেছে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর। সেটি হলো চাকরিতে বয়সের জ্যেষ্ঠতা। পদোন্নতি তালিকায় ৮১ থেকে ৮৫ ব্যাচ পর্যন্ত মূল্যায়ন করা হয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না থাকলেও চাকরির বয়স নির্ধারণ করে আটকে দেয়া হয়েছে বর্তমানে কর্মরতদের পদায়ন। উচ্চতর ডিগ্রি বা মাঠে কাজ করার অভিজ্ঞতা বিবেচনায় আনা হয়নি। ইতোমধ্যে জেলা পাবলিক হেল্থ নার্স পদে দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে পদোন্নতি নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে পদায়নকৃত জেলা পাবলিক হেল্থ নার্সরা ছিটকে পড়েছেন। ফলে হতাশা তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে।

তথ্য মতে, গত বছর সিনিয়র স্টাফ নার্সদের দশম গ্রেড বা দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। জেলা পাবলিক হেল্থ নার্স পদে দীর্ঘ দিন নিজ বেতনে দায়িত্ব পালন করছেন সিনিয়র স্টাফ নার্সরা। জেলা পাবলিক হেল্থ নার্স পদে পদায়নের পর প্রায় সবাই ছয় থেকে আট বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এসব নার্সের অনেকেই বিএসসি, এমএসসি ও এমপিএইচ এবং পিএইচডিও অর্জন করেছেন; কিন্তু পদোন্নতির ক্ষেত্রে মাঠের অভিজ্ঞতাসহ উচ্চতর ডিগ্রি বাদ রেখে জ্যেষ্ঠতা বিবেচনায় আনা হয়েছে। আর এতে জেলা পাবলিক হেল্থ নার্স পদে দায়িত্বরতদের এখন আবারো নিজ পদে ফিরে যেতে হচ্ছে। এটা অনেকটা অপমানের মতো দেখছেন তারা।

একাধিক জেলা পাবলিক হেল্থ নার্সের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় এই পদে দায়িত্ব পালনের পরও পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে। অধিদফতরের একটি চক্রের কারণে পদায়ন থেকে দূরে রাখা হয়েছে। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা বিভাগের একটি জেলার পাবলিক হেল্থ নার্স পদে কর্মরত একজন কর্মকর্তা জানান, ‘দীর্ঘ ছয় বছর ধরে এই পদে চাকরি করে আসছি। নার্সিংয়ের একজন বড় কর্মকর্তা হিসেবে জেলার সবাই জানেন। এখন পদোন্নতি না পাওয়ায় আমাকে হাসপাতালে ফিরে যেতে হচ্ছে। এটা আমার জন্য কোনোভাবেই সুখকর নয়।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ডা: শিব্বির আহমদে ওসমানী বলেন, পদোন্নতি যথাযথ নিয়মে হয়েছে। পদোন্নতির জন্য ৭০০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে পিএসসির মাধ্যমে ২৪৯ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, জেলা পাবলিক হেল্থ নার্সরা ভুল বুঝে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। আসলে নার্সদের গ্রেডিং পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘ দিনের জটিলতা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশনায় তা কেটেছে এবং পদোন্নতি চলছে। যারা এখন পদোন্নতি পেয়েছেন, তারা সবাই জ্যেষ্ঠ। তাদের চাকরির বয়স শেষ দিকে। সাময়িক ক্ষুব্ধ হলেও পদায়নের জটিলতা কেটে গেছে, তারা অল্প সময়ের মধ্যে পদোন্নতি পাবেন। 
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো: আসাদুুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। পুরো পদোন্নতিপ্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করার পরামর্শ দেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement